‘বিপজ্জনক’। খাদ্যপণ্যের বেলাগাম মূল্যবৃদ্ধিকে এককথায় এই বিশেষণই দিলেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। সরকার থেকে শুরু করে আমজনতা, সকলেরই অস্বস্তির পারদ চড়িয়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি গত ২২ অক্টোবর শেষ হওয়া সপ্তাহে পৌঁছে গেল ১২.২১ শতাংশে। গত ন’মাসে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে সব্জির দামই এক বছরে বেড়েছে প্রায় ২৯%।
সরকারি পরিসংখ্যানে এর জন্য মূলত কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে সব্জি ও মাছ, মাংস, ডিমের মতো খাদ্যকে। বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য, এই লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির শেষ কোথায়, সে নিয়ে তাঁরাও ধন্দে। আর, সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, বাজারের আগুন কি এ বার স্তিমিত হবে, না তা আরও বেশি ছড়িয়ে পড়বে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে গত এক বছরের হিসাবে সব্জির দাম বেড়েছে ২৮.৮৯%, মাছ-মাংস-ডিম ১৩.৩৬% করে, ডাল ১১.৬৫%, ফল ১১.৬৩%, দুধ ১১.৭৩%। খাদ্যশস্যের দাম বেড়েছে ৪.১৩ শতাংশের মতো। তবে মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিয়ে পেঁয়াজের দাম কমেছে ২০.৩৩%, গম ১.৫৪%। প্রণববাবু এ ব্যাপারে ‘গভীর উদ্বেগ’ জানালেও অন্ধকারের মধ্যে কিছুটা রুপোলি রেখার দেখা মিলতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, “খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি অত্যন্ত ‘বিপজ্জনক’ মাত্রায় পৌঁছেছে। তবে এই হার এতটা চড়ার কারণ মূলত সদ্য শেষ হওয়া উৎসবের মরসুমে বাড়তি চাহিদার চাপ। নভেম্বর থেকে অর্থবর্ষের বাকি মাসগুলির মূল্যবৃদ্ধির হারের কিছুটা আভাস মিলবে।” মূল্যায়ন সংস্থা ইক্রা-র অর্থনীতিবিদ অদিতি নায়ার-ও বলেছেন, “আমিষ জাতীয় প্রোটিন-এর মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হতে পারে মরসুম অনুযায়ী চাহিদার ধরন।” এ কে ক্যাপিটালের আর্থিক বিশেষজ্ঞ শক্তি শতপথী অবশ্য বলেন, “কারণ হিসেবে উৎসবের মরসুমে চাহিদা বৃদ্ধির মতোই, জোগানে ঘাটতির বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।” প্রসঙ্গত, গত ১৫ অক্টোবর শেষ হওয়া সপ্তাহে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ছিল ১১.৪৩%। গত বছর একই সময়েও অবশ্য তা ছিল ১৩.৫৫%। মূল্যবৃদ্ধি এত বেশি ছিল গত ২৯ জানুয়ারি। তখন তা ছোঁয় ১২.৯৪%। সার্বিক মূল্যবৃদ্ধিও সেপ্টেম্বরে পৌঁছেছে ৯.৭২ শতাংশে। বিশ্বে কমল খাদ্যপণ্যের দাম। রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থা ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন-এর হিসেবে বিশ্ব জুড়ে খাদ্য সামগ্রীর দাম গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এ বছরের অক্টোবরে কমেছে ৪%। কারণ চিনি, শস্য ও তেলের মূল্যহ্রাস। গত বছর এই একই সময়ে তা বেড়েছিল ৫%। |