ফুটবলের টানে আজও রোজ মাঠে যান বৃদ্ধ শম্ভুনাথ
৩ বছর বয়স থেকে ফুটবলের পিছনে ছোটা শুরু করেছিলেন। ৭৮ বছর বয়সেও তাঁর পা থামেনি। আজও ঘুমের ঘোরে ফুটবলে ‘কিক’ করে সম্বিত ফেরে শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়ের।
বীরভূম জেলার ফুটবল খেলার ইতিহাসে সাঁইথিয়ার শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় এক আলোচিত নাম। সেই ছোটবেলা থেকে ফুটবলের প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল। শৈশবের সেই ভাললাগা খেলার টানে ফুটবলের মাঠে আজও নিয়মিত হাজির হন শম্ভুবাবু। যে সে মাঠে নয়, নিজেদের হাতে গড়া সাঁইথিয়া স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে। মাঠে গিয়ে তিনি যেমন নবীন ফুটবলারদের উৎসাহ দেন তেমনি কোচকেও দেন পরামর্শ। শম্ভুবাবুর ঝুলিতে রয়েছে অতীত দিনের ফুটবল খেলার নানা স্মৃতি। ১৯৫০ সালে কমলাভূষণ দত্ত, জেলা কংগ্রেস সভাপতি প্রয়াত নীহার দত্ত, সুশীল দাশগুপ্ত, মিহির দত্ত প্রমুখদের সঙ্গে রামপুরহাট আজাদহিন্দ ক্লাবের হয়ে তিনি ফুটবল খেলেছিলেন। শুধু খেলেছিলেন তা নয়, রীতি মতো ভাল খেলে মহকুমা লিগ চ্যাম্পিয়নও হয়েছিলেন।
নিজস্ব চিত্র।
এর পরে ১৯৫৩ সালে এইচ এম সোসাইটি, বীণাপানি ক্লাবের হয়ে খেলে ‘জে এল বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্ডে’ খেলেছিলেন। হারিয়েছিলেন ইস্টার্ন রেলওয়েকে। ১৯৫৯ সালে সাঁইথিয়ার অগ্রণী সমাজের হয়ে খেলে পরাজিত করেন হুগলির সেন্ট্রাল ক্লাবকে। ওই খেলা দেখেই মোহনবাগান ক্লাবের প্রাক্তন অধিনায়ক অনিল দে তাঁকে কলকাতার রাজস্থান ক্লাবে খেলার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে খেলেছেন এরিয়ান ক্লাবেও।
কিন্তু মায়ের টানে তাঁকে ফিরে আসতে হয়েছে সাঁইথিয়ায়। ১৯৫৯ থেকে ৬৩ সাল পর্যন্ত জেলা দলের অধিনায়কত্ব করেছেন শম্ভুবাবু। দীর্ঘ দিন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি এবং সহ-সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। শম্ভুবাবু বলেন, “বর্তমানে ফুটবলের প্রতি উৎসাহ কমে যাচ্ছে। অতিরিক্ত ‘কেরিয়ার’ মনস্ক হয়ে পড়েছে বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা। যে সময়টুকু ছেলেমেয়েদের খেলার মাঠে থাকার কথা সেই সময় তারা হয় টিউশন পড়ছে বা কম্পিউটার সেন্টারে বন্দি থাকছে। আসলে ভাল খেলেও যে চাকরি পাওয়া যায় সেই বিশ্বাস হারিয়েছেন অভিভাবকেরা।” শম্ভুবাবুর মতে, “সরকারি উদ্যোগে মফস্সললের বিভিন্ন জায়গায় ফুটবল কোচিং সেন্টার খোলা উচিত। না হলে হারিয়ে যাবে ফুটবল চর্চা।”
শম্ভুনাথবাবুর কথায়, “অভিভাবকদেরও ফুটবল সম্পর্কে সচেতনতাবোধ গড়ে তুলতে হবে। ভালবাসতে হবে খেলাধুলোকে। তিনি মনে করেন, “এখনকার অভিভাবকেরা মনে করেন খেলাধুলো করা মানে ছেলেমেদের গোল্লায় যাওয়া। কিন্তু খেলাধুলো করেও যে চাকরি পাওয়া যায় তার নজির রয়েছে।” তিনি নিজেই খেলাধুলোর সুবাদে ১৫টি চাকরি পেয়েছিলেন। বর্তমানে শম্ভুবাবু ব্যবসা করেন। ২০০১ সালে বড় ছেলে ক্রীড়াবিদ সোমনাথকে হারিয়েছেন। মাস সাতেক আগে হারিয়েছেন স্ত্রীকে। ছোট ছেলে অমরনাথ শিক্ষকতা করেন। নাতি-নাতনিদের নিয়ে শম্ভুনাথবাবুর ছোট্ট পরিবার। সংসার এবং ব্যবসা সামলে এখনও নিয়ম করে মাঠে যান।
ফুটবলার চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজীব দত্ত, দীপু আচার্যরা বলেন, “শম্ভুজ্যেঠু আমাদের খেলা সম্পর্কে নানা পরামর্শ দেন। তাঁর পরামর্শ মতো খেলে আমরা বিপক্ষ দলকে ঘায়েল করতে পারি।” সাঁইথিয়া স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান কোচ প্রদ্যুৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শম্ভুবাবুর নানা পরামর্শ আমাকে প্রেরণা দেয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.