|
|
|
|
জমে উঠেছে খয়রাশোলের গোষ্ঠমেলা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খয়রাশোল |
শোভাযাত্রা সহকারে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুরু হয়ে গেল খয়রাশোলের শতাব্দী প্রাচীন গোষ্ঠমেলা। খয়রাশোলের বলরাম জিউর মন্দির থেকে শোভাযাত্রা সহকারে বলরাম বিগ্রহকে নিয়ে আসা হয় গোষ্ঠমেলা চত্বরের স্থায়ী মঞ্চে। সঙ্গে ছিল শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহও।
কার্তিক মাসের শুক্লাষ্টমীতিথিতে কৃষ্ণ ও বলরাম গোচারণে গোষ্ঠে গিয়েছিলেন, এটা মেনেই বহু বছর ধরে এই মেলা হয়ে আসছে। এ বার এই মেলা ৪৫৬ বছরে পড়ল বলে জানিয়েছেন বলরাম সমিতির সম্পাদক রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কাল শনিবার পর্যন্ত মেলা চলবে। এই মেলায় শুধু খয়রাশোল নয়, দুবরাজপুর ও ঝাড়খণ্ডের মানুষজনও আসেন।
বলরাম মন্দিরের সেবাইতা মূলত ‘ঠাকুর’ উপাধিধারী। বর্তমানে ৪০-৪৫ ঘর সেবাইত আছেন। বহু বছর আগে মূলত তাঁদের উদ্যোগে এই মেলা হত। বর্তমানে মেলা তাঁদেরই নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন গোটা খয়রাশোলের মানুষ এবং প্রশাসন। প্রবীণ সেবাইত নৃপেন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, “আমাদের পূর্বপুরুষ পর্ণগোপাল ঠাকুর বর্ধমানের মঙ্গলডিহি গ্রামে এই বিগ্রহ এনেছিলেন। তার পরে সেখান থেকে খয়রাশোলে বলরাম বিগ্রহ নিয়ে আসেন আমাদেরই বংশধরেরা। সেই থেকেই মেলা চলছে।” |
|
মেলা প্রাঙ্গণে ভোগ নিয়ে যাচ্ছেন ভক্তেরা। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত। |
গোষ্ঠের দিন মন্দির থেকে বিগ্রহ নিয়ে গিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে রাখা রাত ৮টা পর্যন্ত। তার পরে বিগ্রহ মন্দিরে ফিরিয়ে আনা হয়। প্রভু গোচারণে গিয়েছেন এটা মেনেই দুপুরে থালায় থালায় ভোগ নিয়ে যাওয়া হয় মেলার মাঠে। চলে পুজো, আরতি। বিগ্রহ নিয়ে যাওয়ার সময়ে শোভাযাত্রা এবং যখন কমপক্ষে ৫০-৬০টি থালায় ভোগ পাঠানো হয় সেটা দেখার মতো।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টের সময় মেলাপ্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেল, থিক থিক করছে ভিড়। দুপুর দেড়টা নাগাদ মেলা প্রাঙ্গণের স্থায়ী মঞ্চে পৌঁছে গিয়েছে বলরাম ও শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহ। এই মঞ্চকে ঘিরে চারপাশে শ’দুয়েক স্টল। নাগোরদোলা। মেলায় আগত দর্শকদের অধিকাংশ প্রথমে বিগ্রহ দর্শন করেছেন। কেউ বা পুজো দিচ্ছেন। তার পরে মেলার ভিড়ে মিশে যাচ্ছেন।
কিছুক্ষণ পরেই শোভাযাত্রা সহকারে এল বিগ্রহ এবং বনভোজনের সামগ্রী। ধুতি পরে সেবাইত পরিবারের ছেলে থেকে পুরুষেরা থালায় থালায় নিয়ে এলেন ভোগ। সাজিয়ে রাখা হল মঞ্চে। আরতির পরেই প্রসাদ নিয়ে আবার বাড়ির পথ ধরলেন তাঁরা। ঘণ্টাখানেকের পরে বিগ্রহ মন্দিরে ফিরে গেলেও দর্শকদের মধ্যে আনন্দের খামতি ছিল না। কারণ মেলা চলবে আরও দু’দিন। সেবাইতদের পরিবার তো বটেই, খয়রাশোলের বাড়িতে বাড়িতে এই সময় আত্মীয়স্বজন আসেন। স্বাস্থ্য কর্মী স্বপ্না মিত্র বা একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী আসানসোল নিবাসী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বাপের বাড়িতে আসা বুলা মুখোপাধ্যায়রা বলেন, “কোনও ভাবেই গোষ্ঠ মেলা হাতছাড়া করতে চাই না। কিন্তু এ বার আনন্দের সঙ্গে আক্ষেপও আছে। এ বার যাত্রাপালা হবে না।” |
|
|
|
|
|