গণভোট থেকে সরে
আসারই ইঙ্গিত গ্রিসের
স্নায়ুযুদ্ধে শেষ পর্যন্ত সম্ভবত নিকোলাস সারকোজি ও আঙ্গেলা মেরকেলই জিতলেন। ইউরো জোনের ত্রাণ প্যাকেজ নিয়ে গণভোটের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিলেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপান্দ্রিউ। সে দেশের রক্ষণশীল বিরোধী দলও ত্রাণ প্যাকেজ নিয়ে আলোচনার কথা বলেছে।
গণভোটের আগে আগামিকাল পাপান্দ্রিউ সরকারের সংসদে আস্থাভোট নেওয়ার কথা ছিল। সেই ভোটে সরকার পড়ার সম্ভাবনাও ছিল প্রবল। এই অবস্থায় আজ গ্রিস সংসদে পাপান্দ্রিউ বলেন, এখন ভোট হওয়া মানে আরও বড় বিপদ ডেকে আনা। এক দিকে দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা। অন্য দিকে ইউরো জোন ছেড়ে চলে যাওয়া। বিষয়টি নিয়ে তিনি বিরোধী নেতার সঙ্গে আলোচনার কথাও বলেন পাপান্দ্রিউ। কথায় রাজি বিরোধীরাও। কারণ, সব রকম ত্রাণ আসা বন্ধ হয়ে গেলে দু’মাসেই মুখ থুবড়ে পড়বে অর্থনীতি। তা তো আর হতে দেওয়া যায় না! ফলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার আগে ডাকা জরুরি বৈঠকে গ্রিস মন্ত্রিসভা ৪ ডিসেম্বর গণভোটের সিদ্ধান্তে সায় দিলেও সে সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে হচ্ছে।
আর গোটা দিন এই টানাপোড়ের পরে বিকেলে গ্রিসের অর্থমন্ত্রী তো ইউরোপীয় নেতাদের আশ্বস্ত করে স্পষ্টই বলে দিয়েছেন, গণভোট নেওয়ার পরিকল্পনা পাপান্দ্রিউ সরকারকে ছাড়তেই হবে। এবং ত্রাণ প্যাকেজ কার্যকর করার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। ফলে সরকারি ভাবে না বললেও গ্রিস যে মেনে নেওয়ার পথে হাঁটছে, সেটা মোটামুটি স্পষ্ট।
পাপান্দ্রিউর উপরে মোক্ষম চাপটা গত কালই দিয়েছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ও জার্মানির চ্যান্সেলার। যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে তাঁরা বলেন, ‘গ্রিস ইউরো জোনে থাকতে পারে। তবে সেটা তাদের চাইতে হবে। গ্রিকরা যদি গণভোটে যায়, তা হলে তাদের এই প্রশ্নেরও উত্তর দিতে হবে যে, তারা ইউরো জোনে থাকতে চায় কি না।’
অভিন্ন মুদ্রার (ইউরো) জোট ইউরো জোন ভেঙে গেলেও যে তাঁরা তোয়াক্কা করবেন না, সেই বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি গ্রিসকে ‘ভাতে মারার’ ইঙ্গিতও দেন সারকোজিরা। ত্রাণ প্যাকেজে ইউরোপিয়ান ফিনান্সিয়াল স্টেবিলিটি ফেসিলিটি (ইএফএসএফ) তহবিল থেকে গ্রিসকে ১৩ হাজার কোটি ইউরো ঋণ দেওয়ার কথা। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ) থেকে আলাদা ঋণ পাবে তারা। সারকোজি বলে দেন, গণভোট না হওয়া পর্যন্ত গ্রিসকে আর এক সেন্টও দেওয়া হবে না। একই পথ নেওয়ার কথা বলে আইএমএফ-ও। ফলে চাপ বাড়ে পাপান্দ্রিউর উপরে।
চাপ অন্যান্য দিক থেকেও আসছিল। যেমন, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ আজ জি ২০-তে তাঁর বক্তৃতায় বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম, গ্রিসের ঋণের ভার কমানোর জন্য ইউরো জোনের নেতারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা অবিলম্বে কার্যকর হবে। কিন্তু গ্রিস সরকারের গণভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত সব হিসেব গোলমাল করে দিয়েছে।” চাপ ছিল আমেরিকার তরফেও।
প্রশ্ন হল, আর্থিক সঙ্কটের আরও জটিল আবর্তে তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়েও কেন গণভোটে যাচ্ছিলেন পাপান্দ্রিউ। একটা কারণ অবশ্যই রাজনৈতিক। মার্কিন কূটনীতিকেরা বলছেন, গ্রিসের সমস্যা হল, তাদের দেশে এখনও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ভূমিকা বিরাট। লোকসানে চলা সেই সব সংস্থার বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা মেটাতে হয় রাজকোষ থেকে। ত্রাণ প্যাকেজ আসার সঙ্গে সঙ্গে গ্রিসকে এই ভর্তুকি কমিয়ে আর্থিক শৃঙ্খলা আনতে হবে। এমনিতেই আর্থিক সঙ্কটের জন্য পাপান্দ্রিউর সরকারকে দুষছে বিরোধীরা। তার উপর এই অপ্রিয় সিদ্ধান্তের দায় স্বভাবতই নিজের কাঁধে নিতে চাইছেন না গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী।
দ্বিতীয় কারণটা ছিল, চাপ বজায় রাখা। আজ সকালেই জি ২০-র কনভেনশন সেন্টারে এক ফ্রান্সের কূটনীতিক বলছিলেন, “আসলে গ্রিসও জানে যে তাদের ত্রাণ প্যাকেজ মেনে নিতে হবে। কিন্তু এই ভোটের হুমকি দিয়ে ইউরোপ তথা জি ২০-র কাছ থেকে আরও বেশি করে পাওনা আদায় করে নেওয়াটা তাদের একটা রাজনৈতিক দর কষাকষির কৌশল।”
অন্য দিকে সারকোজি-মেরকেলরাও জানেন, গ্রিসকে ইউরো জোন থেকে চলে যেতে বলাটা কার্যক্ষেত্রকে অত সহজ নয়। (গ্রিস নরম হওয়ার পরে সাংবাদিক বৈঠকে সারকোজি বলেছেন, ওদের ইউরো জোন থেকে বার করে দেওয়া কোনও অভিপ্রায় তাঁদের নেই) গ্রিস ইউরো জোন ছেড়ে চলে গেলে জোটের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক এবং সমস্ত বেসরকারি ব্যাঙ্ক, যারা গ্রিসের সরকারি বন্ড কিনেছে, তাদের তৎক্ষণাৎ গোটা অর্থটা তামাদি বলে ঘোষণা করতে হবে। যা বিপুল আর্থিক সঙ্কট ডেকে আনবে। অন্য বিপদগ্রস্ত দেশকে তো সাহায্য করা যাবেই না, ইউরোপে নয়া বিনিয়োগও বিরাট প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবে। একদা এত সাধ করে যে অভিন্ন ইউরো বাজার তৈরি করা হয়েছিল, একটি ইউরো মুদ্রা চালু করা হয়েছিল, তার উল্টো রথযাত্রা শুরু হলে বিপদ ইউরোপের সকলেরই। জার্মানি বা ফ্রান্সও যেমন সেটা চায় না, আবার গ্রিস-ইতালিও কি ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাঁচতে পারবে?
তাই গ্রিস এবং তার পথ ধরে ইতালি যে ভাবে ইউরোপের মধ্যেই ‘ঘরের মধ্যে ঘর, মশারির মধ্যে মশারি’ তুলছে, তা ঠেকানোর জন্য চলল আপ্রাণ স্নায়ুর লড়াই। যাতে আপাতত সারকোজিরাই জিতলেন বলে মনে হচ্ছে। আর জি ২০-র সদস্য না হলেও গ্রিস-সঙ্কটই ছেয়ে রাখল কানের সম্মেলন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.