দিশার খোঁজে জি ২০
মিশ্র অর্থনীতিতেই সঙ্কটমুক্তি, নিদান বাতলে দিলেন মনমোহন
ক আশ্চর্য সমাপতন!
পুঁজিবাদের সঙ্কট মোচনের উপায় নিয়ে বিশ্বের প্রধান ২০ দেশের রাষ্ট্রনায়কের সঙ্গে আলোচনা করতে বুধবার দক্ষিণ ফ্রান্সের এই সমুদ্র শহরে পা রাখলেন মনমোহন সিংহ। আর তার আগের দিন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রিত বক্তা হিসেবে সীতারাম ইয়েচুরি তুলে ধরলেন পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ও সাম্রাজ্যবাদের ‘পতন-কাহিনি’।
একই সঙ্গে ওয়াল স্ট্রিট দখলের বিক্ষোভ এসে হাজির হয়েছে জি ২০-র সম্মেলনেও। নিস বিমানবন্দরের বাইরে প্ল্যাকার্ড হাতে জড়ো হয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। বৃষ্টিভেজা শহরে উঠছে গরম গরম স্লোগান। সব মিলিয়ে যেন ধনতন্ত্রের শোকগাথা।
পুঁজিবাদের শেষের সে দিন সমাগত, এমন ভাবনার সঙ্গে অবশ্য মোটেই এক মত নন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তাঁর সরকারের মতে, ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থা তথা আমেরিকার অর্থনীতিকে যাঁরা মৃত বলে মনে করছেন, তাঁরা ভুল করছেন। উদার অর্থনীতি মোটেই তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলেনি। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মনমোহন ঘনিষ্ঠ এক প্রশাসনিক কর্তা যে মতের ব্যাখ্যা দিয়ে বললেন, “গোটা পৃথিবীর মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) ৭০ লক্ষ কোটি ডলার। তার মধ্যে এখনও ১৫ লক্ষ কোটি ডলার উৎপাদন হয় আমেরিকায়। চিনের জিডিপি ৫ লক্ষ কোটি ডলার, জাপানের ৪.৯ লক্ষ কোটি আর ভারতের ১.৭ লক্ষ কোটি। তা ছাড়া আমেরিকার সঞ্চিত রাজস্ব, তেল সব দেখেশুনে কী মনে হয়? আমেরিকা শেষ!” তা হলে এই সঙ্কট কেন? একটা ব্যাখ্যা হল এই যে, পুঁজিবাদ বা বিশ্বায়নকে সর্বরোগহর বটিকা মনে করার কোনও কারণ নেই। তারও সীমাবদ্ধতা আছে। দুর্নীতি আছে, স্বজনপোষণ আছে। একদা মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা জোসেফ স্টিগলিৎজ থেকে টমাস ফ্রিডম্যানের মতো সংস্কারবাদীরাও সে কথা অনেক দিন ধরেই বলছেন। আর এখন তো এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে,, খোলা বাজারের অর্থনীতির নামে যত্রতত্র ঋণ দিতে দিতে আমেরিকার ব্যাঙ্কগুলিই লাটে উঠেছে। জে পি মরগ্যানের মতো ব্যাঙ্কেরও নাভিশ্বাস দশা। অন্য ব্যাখ্যা দিলেন ইতালির এক প্রবীণ সাংবাদিক। ‘‘এখানে ইউরোপের দেশগুলি যতই একতার কথা বলুক, এক বাজার এক মুদ্রা গড়ে তুলুক, আসলে এক জন আর এক জনকে সর্বদাই পিছন থেকে টেনে ধরছে।”
জি ২০-র ফাঁকে নানা মেজাজে


মনমোহনের সঙ্গে সারকোজি, জিনতাও, ওবামা এবং ক্যামেরন। ছবি: এ এফ পি, পি টি আই
এহেন পরিস্থিতিতে কানে জি ২০-র শীর্ষ সম্মেলনে এক জনের প্রলম্বিত ছায়া। জন মেনার্ড কেইনস। ১৯৩০-এর মহামন্দায় মুমূর্ষু পুঁজিবাদকে অক্সিজেন জুগিয়েছিলেন যিনি। ১৮৮৩ সালে, কার্ল মার্ক্সের মৃত্যুর বছরে যাঁর জন্ম। ইতিহাসের এ-ও এক আশ্চর্য সমাপতন। মনমোহন নিজে কেইনসের ভক্ত। এখন খুব মনোযোগ দিয়ে পিটার ক্লার্কের লেখা কেইনসের জীবনী পড়ছেন।
কিন্তু শুধু কেইনস দিয়ে বোধহয় এ যাত্রা উদ্ধার মিলবে না। সমাজতন্ত্রের ‘ইতিবাচক’ দিকগুলোকেও সামিল করতে হবে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়। তাই জি-২০ সম্মেলনে এ বারই প্রথম গুরুত্ব পাবে বিশ্বায়নের সামাজিক প্রভাব। উদারনীতির বিচ্যুতির দিকগুলি নিয়ে হতে চলেছে কাটাছেঁড়া। শুক্রবার দুপুরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। তার পর তৈরি হবে বিশেষ পেপার।
দুর্নীতি নিয়ে জি ২০ সম্মেলনে এমন আলোচনা এর আগে হয়নি। প্রধানমন্ত্রীও আজ জি ২০ সম্মেলনে তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, “কর ফাঁকি এবং কালো টাকা একটা বড় সমস্যা। এই ধরনের কার্যকলাপ বন্ধে জি ২০-র কড়া বার্তা দেওয়া উচিত।” অনেকে এমন কথাও বলছেন যে, দুর্নীতির দায়ে রজত গুপ্তকে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত থেকে দিল্লিতে কালো টাকার বিরুদ্ধে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হুমকি সবই এক সূত্রে গাঁথা। অন্না হজারের আন্দোলনের সূত্রে শুধু ভারতে নয়, এই আর্থিক সঙ্কটে গোটা বিশ্ব জুড়েই দুর্নীতি এখন বড় বিষয়।
কানে এসে সামাজিক এবং আর্থিক অসাম্য দূর করার কথা বলছেন বিল গেটস। মাইক্রোসফটের কর্ণধারের কাছ থেকে পরামর্শ চেয়েছে জি ২০। সেই কারণেই তাঁর আসা। সারকোজির দেওয়া মধ্যাহ্নভোজেও হাজির থাকছেন গেটস। তাঁর বক্তব্য, গরিবদের কথা, দারিদ্র দূর করার জন্য কর্মসংস্থানের কথা ভাবতে হবে। তবে উন্নয়ন হবে। শুধু বাজার তৈরি করলে হবে না, ক্রয়ক্ষমতাও তৈরি করতে হবে। গেটসের কথায়, “আমরা সৃষ্টিশীল, সচেতন পুঁজিবাদ চাই।”
এ সব দেখে কেউ কেউ বলছেন, আমজনতার দাবিকে যে আর উপেক্ষা করা সম্ভব নয়, সেটা বুঝতে পারছেন উন্নত দেশগুলির রাষ্ট্রনেতারা। কেউ কেউ আবার সন্দিগ্ধ। তাঁদের মতে, এই সব আলোচনা আসলে বিক্ষোভের উত্তাপ বার করে দেওয়ার কৌশল। প্রেশার কুকারের সেফটি ভাল্ভ। কৌশল নয়, মনমোহন সরকারের মতে, পুঁজিবাদ আর সমাজতন্ত্রের সঠিক মিশ্রণই পরিত্রাণের পথ। তাদের দাবি, সেই মিশ্র অর্থনীতি অনুসরণ করে চলা হয় বলেই গত মন্দার ধাক্কা তেমন করে লাগেনি ভারতের গায়ে। কানে আসার সময় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিমানে যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারপার্সন মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া হাসতে হাসতে বলেছিলেন, “দেখা যাচ্ছে আমরাই তো ঠিক আছি। সেই কোন ’৪৭ সাল থেকে নেহরুর নীতি অনুসরণ করে সমাজতন্ত্র এবং গণতন্ত্র, দু’টি মন্ত্রই একই সঙ্গে উচ্চারণ করে চলেছে ভারত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.