চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর নবমীর দিন শুরু হয় পুজো। একই দিনে পুজো হয় সপ্তমী, অষ্টমী আর নবমীর। পরের দিন অর্থাৎ দশমীতে ঘট বিসর্জন হয় গ্রামের বড় পুকুরে। প্রায় ৫৩ বছর ধরে এটাই রীতি ভাতারের হরিপুর গ্রামের সামন্ত পরিবারের জগদ্ধাত্রী পুজোর।
এই পুজোই গ্রামের সবথেকে বড় উৎসব। পুজোয় ভিড় জমান আশপাশের বলগণা, শিকরতোড়, তুলসিডাঙা, ভাঁটাকূল, নিত্যানন্দপুর-সহ ১০টি গ্রামের মানুষজন। তাই গ্রামের সামন্ত পরিবারের এই পূজো আক্ষরিক অর্থেই সর্বজনীন। |
এই পুজো শুরুর গল্প শোনালেন সামন্ত পরিবারের সদস্য বুদ্ধদেব সামন্ত।
এক দিন পুজোর প্রতিষ্ঠাতা রাজলক্ষীদেবী স্বপ্ন দেখেন, দেবী দুর্গা তাঁকে বলছেন, আমি বিসর্জনের পরেও গ্রাম ছেড়ে যেতে পারিনি। আমার আরও পুজো চাই। এই স্বপ্নের কথা তিনি ছেলেদের জানান। শুরু হল প্রস্তুতি। কিন্তু সময় একান্তই কম। কী করে তৈরি হবে মূর্তি, কী করে মিলবে পুরোহিত-বাদ্যকারের সন্ধান। এই সব ভাবনার মধ্যেই সামন্ত বাড়ির সদস্যেরা নেমে পড়লেন পুজোর প্রস্তুতিতে। সেই বছর ৭ নভেম্বরই শুরু হয়ে যায় গ্রামের সামন্ত পরিবারের জগদ্ধাত্রীপুজো। এই পুজো কৃষ্ণনগর ঘরানার বলে জানিয়েছেন তিনি। আগে জগদ্ধাত্রীপুজোর নবমীর রাতে বসত রামায়ণ গানের আসর বা যাত্রাপালা। এখন অবশ্য গ্রামবাসীরাই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আসরের স্মৃতি ধরে রেখেছেন।
গোস্বামী মতের এই পুজোর উপচারও অনেক। বাড়ির কর্তাকে আগের দিন গঙ্গা স্নান করে আসতে হয়। তাঁকে আহার করতে হয় হবিষ্যান্ন। পুজোর আগের দিন সকলকে নিরামিষ আহার করতে হয়। পুজোর দিন সকলেরই উপবাস। প্রতিমার অঙ্গে ডাকের সাজ। দেবীর উচ্চতা প্রায় সাড়ে ৬ ফুট। চার হাতের একচালা সিংহবাহিনী দেবী। তিনি হাতির রূপ ধরা করীন্দ্রাসুরকে বধ করছেন। পুজোটি বারোয়ারি হয়ে গেলেও সেই রেওয়াজ ধরে রেখেছেন গ্রামের ওই পরিবারটি।
পরিবারের সদস্য অশীতিপর বৃদ্ধা বিউটিরানিদেবী বলেন, “দেবীর আবাহন শুরুর পরের বছরেই গ্রামে ভয়ানক কলেরা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। গ্রাম জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এত সমস্যা, আতঙ্ক সত্ত্বেও সে বার পুজো বন্ধ হয়নি।” গ্রামের মানুষের অর্থ সাহায্যে ৫০তম বর্ষে পুরনো মন্দিরও নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। |