সরকারি খামারের দুর্দশা দেখল কমিটি
যোগ্য শ্রমিকের অভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো যাচ্ছে না বলে বিধানসভার কৃষি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কাছে অভিযোগ করলেন বর্ধমানের কেন্দ্রীয় কৃষি খামারের সহ-অধিকর্তা।
রাজ্যের চাষবাসের হাল দেখতে বৃহস্পতিবার থেকে সফর শুরু করেছেন স্থায়ী কমিটির আট সদস্য। প্রথম দিনেই বর্ধমানের কালনা রোডে ওই খামারে গিয়ে তাঁরা শোনেন, চাষের কাজ করার যন্ত্রপাতি নেই, যে যন্ত্র আছে তা চালানোর লোক নেই। যন্ত্র ও কর্মী থাকলে আবার বিদ্যুৎ নেই! সব মিলিয়ে কার্যত ‘পরিত্যক্ত’ ওই খামারের জমিতে লোকে গাড়ি চালানো শিখতে আসে। রাতে চলে দেহব্যবসাও।
পরিদর্শনে বিধায়কেরা। বৃহস্পতিবারের নিজস্ব চিত্র।
স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, ভাতারের বিধায়ক বনমালি হাজরার নেতৃত্বে এ দিন সকালে ওই খামারে যান বিধায়ক বেচারাম মান্না, সমীর পাঁজা, গদাধর হাজরা, মাহমুদা বেগম, অনন্তদেব অধিকারি, অমল আচার্য এবং ইমানি বিশ্বাস। আরএসপি-র অনন্তবাবু এবং কংগ্রেসের ইমানি বিশ্বাস ছাড়া বাকি সকলেই তৃণমূলের বিধায়ক। পাঁচের দশকে প্রতিষ্ঠিত ২০৬ একরের ওই কৃষি খামারের সহ-অধিকর্তা মানস মুখোপাধ্যায় তাঁদের বলেন, “কৃষি শ্রমিকের অভাবে আমরা কাজ চালাতে পারছি না। থাকার কথা ১০৫ জনের। আছেন ৫৬ জন। এঁদের ভেতর ৪৯ জনই বয়স্ক। তাঁদের কর্মক্ষমতা কম। ফলে আমাদের পক্ষে চাষবাস নিয়ে কোনও পরীক্ষাই করা সম্ভব হচ্ছে না।”
মানসবাবু আরও জানান, খামারের জন্য কোনও নিরাপত্তারক্ষী নেই। কৃষি শ্রমিকদেরই রক্ষীর কাজ করতে হয়। ৫৫ একরে পরীক্ষামূলক ভাবে উচ্চফলনশীল ‘শ্রী’ ধান রোঁয়া হয়েছে। কিন্তু তা ঘরে তুলতে পারবেন কি না, সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত নন। তাঁর আরও অভিযোগ, অনেক অনাবাদি জমি চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। সেচের জল মেলে না। বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে টানা ১০ বছর ধরে পড়ে থেকে থেকে নষ্ট হয়ে গিয়েছে লক্ষাধিক টাকা দামের একটি পাম্প। মজে গিয়েছে অনেক পুকুর। খামারে আলু চাষ হয়ই না। কিন্তু এসে পড়ে রয়েছে আলু বসানোর যন্ত্রপাতি। সয়েল ড্রেজার, হ্যান্ড ট্রাক্টরের মধ্যে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি পড়ে নষ্ট হচ্ছে। এ দিকে, খামারের নিজস্ব ট্রাক্টর না থাকায় চাষের সময়ে তা ভাড়া নিতে হয় । পাঁচিল না থাকায় রাতে খামারের এলাকায় অবাধে চলে দেহব্যবসা। তা রুখতে গিয়ে বেশ কয়েক বার তাঁকে নিগৃহীতও হতে হয়েছে।
ব্যাপার দেখে-শুনে বিধায়কেরা কার্যত স্তম্ভিত হয়ে যান। বেচারামবাবু বলেন, “আপনি এলাকার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলুন। ওঁরাই পারবেন এদের শায়েস্তা করতে। পুলিশকেও বলুন। নতুন কৃষি শ্রমিক নিয়োগ করার জন্য আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বলব।” খামারের ধানখেত, কর্মীদের বাসস্থান, অচল পাম্প ঘর ইত্যাদি পরিদর্শনের পরে সদস্যেরা জানান, ১০০ দিন প্রকল্পের মাধ্যমে খামারের পুকুরগুলি সংস্কার করানো হবে। পাঁচিল দেওয়ারও ব্যবস্থা হবে। পরে সার্কিট হাউসে একটি বৈঠক সেরে তাঁরা গলসির গলিগ্রাম, আউশগ্রামের যমুনাদিঘি, জামুরিয়া, কাঁকসা ইত্যাদি কৃষি এলাকা সফরে যান।
স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান পরে বলেন, “সর্বত্রই একই অভিজ্ঞতা। সার্কিট হাউসের বৈঠকে আমরা কৃষি, কৃষিজ বিপণন ও মৎস্য দফতরের আধিকারিকদের বলেছি, কৃষকদের উৎসাহিত করুন। তাহলেই দেখবেন, অনেক কিছু বদলে গিয়েছে।” ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনাও। তিনি প্রস্তাব দেন:
১) খামারের আয় তা খামারের কাজেই ব্যয় করার অধিকার দেওয়া হোক ম্যানেজারকে।
২) প্রতিটি খামারে শতকরা ১০০ ভাগ জমিতেই চাষ করতে হবে। জমি ফেলে রাখা যাবে না।
৩) খামারের ভিতরে গাছ বা কাঠ বিক্রির অধিকার দেওয়া হোক ম্যানেজারদের।
জেলাশাসক বলেন, “বিধায়কেরা প্রস্তাবগুলি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.