নিজস্ব সংবাদদাতা • রানিগঞ্জ |
তাঁর একার পক্ষে অবৈধ কয়লার কারবার বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে কর্তাদের ই-মেল করেছিলেন রানিগঞ্জের ওসি। সেই বার্তা পেয়ে বৃহস্পতিবার পুলিশ, ইসিএল এবং এডিডিএ-র কর্তারা গিয়ে দেখলেন ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা অবৈধ খাদান।
রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে অবৈধ কয়লার কারবার অনেকটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে এত দিন পুলিশ কমিশনারেট ও রাজনৈতিক নেতাদের একাংশের তরফে দাবি করা হচ্ছিল। রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, পাণ্ডবেশ্বরের বিস্তীর্ণ এলাকায় দুর্গাপুজো ও দীপাবলির জাঁকজমক কমে যাওয়ার পিছনেও এটাই মূল কারণ বলে অনেকে দাবি করছিলেন। কিন্তু কয়লা পাচার যে এখনও যথেষ্টই চলছে, তা এ দিন বাঁশড়ায় নিজের চোখেই দেখে এলেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা।
রানিগঞ্জের ওসি তীর্থেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় জানান, বাঁশড়ায় বহু মানুষ অবৈধ খাদান তৈরি করে কয়লা চুরি করছে। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটকে তিনি জানান, তাঁর পক্ষে এই অবৈধ খনন বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানান তিনি। ওসি আরও জানান, তাঁর কাছ থেকে এই খবর পাওয়ার পরে ঊর্ধ্বতন কর্তারা ওই জমি কার, সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। জানা যায়, জমিটি ইসিএলের নয়, এডিডিএ-র। ওসি এ নিয়ে এডিডিএ-র চেয়ারম্যানকে চিঠি লেখেন। ইসিএলের তরফেও পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ওই এলাকায় অবৈধ খাদান ভরাট করার জন্য এডিডিএ-র কাছে অনুমতি চাওয়া হয়। |
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এর পরে আসানসোল পুলিশের সঙ্গে এডিডিএ এবং ইসিএল কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়। সেখানে ঠিক হয়, যৌথ উদ্যোগে অবৈধ খাদান ভরাট করা হবে। এ দিন সকালে আসানসোলের অ্যাডিশনাল ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ভি সুলেমান, এডিডিএ-র মুখ্য সমীক্ষক, ইসিএলের কুনস্তরিয়া এরিয়ার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বাঁশড়ায় অভিযানে যান। সেখানে গিয়ে তাঁরা বহু অবৈধ খাদান দেখতে পান। তবে খননকারীরা কেউ সেখানে ছিল না। এলাকাবাসীর দাবি, আগে থেকে অভিযানের খবর পেয়েই এলাকা ছেড়েছিল দুষ্কৃতীরা। পুলিশ জানায়, আগেও দু’বার কয়লা কেটে নেওয়ার পরে পরিত্যক্ত অবৈধ খাদানগুলি ভরাট করার ব্যাপারে ইসিএলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এ জন্য নিমচা ফায়ার প্রজেক্ট, রতিবাটি, আমবাগান, তৃপ্তিগড়িয়া এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এ দিকে, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রানিগঞ্জের সিহারসোল, নিমচা জঙ্গল, মঙ্গলপুর এলাকা, জামুড়িয়ার বেনালি, শ্রীপুরে অবৈধ কয়লার কারবার চলছে। বিজেপি-র জেলা (আসানসোল) সম্পাদক পবন সিংহের অভিযোগ, “পুলিশের প্রত্যক্ষ মদতেই এখনও এখানে অবৈধ কয়লা কারবার চলছে।” বাসিন্দাদের এমনও দাবি, এলাকাবাসী অবৈধ কয়লা পাচার রোখার চেষ্টা করলেও পুলিশ তা পার করে দিচ্ছে। রানিগঞ্জের পুলিশের অবশ্য দাবি, তাদের বিরুদ্ধে বাসিন্দাদের এমন অভিযোগ ঠিক নয়। অন্যত্র বন্ধ থাকলেও বাঁশড়ায় অবৈধ কারবার চলছিল। তা বন্ধ করার জন্য সব রকমের ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ।
এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বাঁশরায় সংস্থার জমিতে আগে অবৈধ খননকারীরা কয়লা কেটে নিয়েছে। সেই সব খনিমুখ ভরাট করতে ইসিএল এবং পুলিশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পরিদর্শনের পরে বাঁশড়ায় এই সব খাদান বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ হবে বলে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে আশ্বাস। আসানসোলের এডিসিপি ভি সুলেমান বলেন, “ইসিএলের সঙ্গে যৌথ ভাবে অবৈধ কয়লা কারবার বন্ধ করার সমস্ত রকম চেষ্টা চলছে।” |