বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রকাশ্য সভায় কোচবিহারের দিনহাটার তৎকালীন বিধায়ক অশোক মণ্ডলকে ‘দলবিরোধী’ রাজের জন্য বহিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসে দলবিরোধী কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন দলীয় নেতৃবৃন্দ। দলের নেতাদের এই ঘোষণা যে নিছক কথার কথা নয় তার প্রমাণ দিতে জেলার শীতলখুচি বিধানসভার তিন নেতাকে একসঙ্গে বহিষ্কার করা হল। শুক্রবার দলের পক্ষ থেকে ওই তিনজনকে বহিষ্কারের কথা ঘোষণার পাশাপাশি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তালিকায় আরও কয়েকজন নেতাকর্মী রয়েছেন। এখনই সতর্ক না-হলে পর্যায়ক্রমে তাঁদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শাসক দলের এই শুদ্ধিকরণ অভিযানকে ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে কোচবিহারের রাজনৈতিক মহল। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যে তিন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাঁরা হলেন ব্লক আইএনটিটিইউসি’র সভাপতি সায়ের আলি মিয়াঁ, ব্লক সদস্য হরিনাথ রায় এবং শিকারপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য নজরুল হক। ওই তিন জনের বিরুদ্ধে বিধানসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থী নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করার অভিযোগ উঠেছিল। ওই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী করেছিল বর্তমান বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনকে। দলের অন্তর্তদন্তেও ওই তিনজনের নিস্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিধানসভা নির্বাচনের পরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। দলের ভাবমূর্তি ঠিক করতেই ওই তিন জনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেই ওই তিনজনকে ৬ বছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দলের শৃঙ্খলা ও ভাবমূর্তি রক্ষার ব্যাপারে কোনও আপোস করা হবে না। জেলায় দলবিরোধী কাজে আর কারা জড়িত তারও তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।” বৃহস্পতিবারই শীতলখুচিতে দলের ব্লক কমিটি, যুব কমিটি ও ছাত্র কমিটি ভেঙে দেল তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব। বহিষ্কৃত ওই তিন নেতাই অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁরা কোনও দলবিরোধী কাজ করেননি। সায়ের আলি মিয়াঁ বলেন, “এখানকার ব্লক সভাপতি এবং তাঁর অনুগামীরা লুটেপুটে খাচ্ছে। তাঁরাই ব্যক্তিস্বার্থে জেলা সভাপতিকে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে।সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করে খুন-সহ বিভিন্ন অভিযোগে ৭৪০টি মামলায় আমি জড়িয়েছি। তার পরেও আমার বিরুদ্ধে দলবিরোধী কাজের অভিযোগ তুলেছেন সদ্য তৃণমূলে ঢোকা কিছু লোক।” আর এক বহিষ্কৃত নেতা হরিনাথ রায় বলেন, “আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। ব্লক সভাপতির অনুগামীদের চাঁদার জুলুম, জমি দখলের প্রতিবাদ করায় শাস্তির মুখে পড়তে হল।” তাঁদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের জবাব জনগণ দেবেন বলে দাবি করেছেন নজরুল হকও। এই ব্যাপারে ব্লক সভাপতি আবেদ আলি মিয়াঁর বক্তব্য, “নেতৃত্ব খোঁজ নিয়ে যা ভাল বুঝেছেন, করেছেন। বিধানসভা নির্বাচনে যাঁরা দলকে ডোবাতে চেয়েছিল তাঁরা ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে পার পাবেন না।” |