রাজ্যের ভাঁড়ার শূন্য। এই অবস্থায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর হাল ফেরানোর জন্য তৃণমূলের বিধায়ক ও সাংসদদের উন্নয়ন তহবিলের একটা অংশ দিতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেতা তথা কেন্দ্রীয় সরকারের জাহাজ প্রতিমন্ত্রী মুকুল রায় বলেন, “আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ, বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে দলের প্রত্যেক বিধায়ককে বছরে হাসপাতালের উন্নয়নের জন্য ১০ লক্ষ টাকা দিতে হবে। আর প্রত্যেক সাংসদকে দিতে হবে এক কোটি টাকা।” মুকুলবাবু জানান, ওই টাকা দিয়ে বিধায়ক ও সাংসদদের সংশ্লিষ্ট এলাকারই বিভিন্ন হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হবে।
ক্ষমতায় আসার পরেই রাজ্যের বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল ফেরানোর উপরে বিশেষ গুরুত্ব দেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম পক্ষ কালের মধ্যেই তিনি মহাকরণ যাওয়ার পথে পরিদর্শনের জন্য একাধিক হাসপাতালে হঠাৎ হানা দেন। হাসপাতালগুলির সমস্যা জানার চেষ্টা করেন। সেই সব সমস্যা নিরসনে কী করণীয়, সেই ব্যাপারেও খোঁজখবর নেন তিনি। বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মতো স্বাস্থ্যও নিজের হাতে রেখেছেন মমতা। বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে মুখ্যমন্ত্রী বুঝেছেন, রাজ্যের হাসপাতালগুলির দুর্দশা ঘোচাতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু রাজ্যের কোষাগারের হাল অত্যন্ত খারাপ। তবু যে-কোনও মূল্যে স্বাস্থ্যের হাল ফেরাতে মমতা মরিয়া। তাই নিজের দলের বিধায়ক ও সাংসদদের তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের একটা অংশ এলাকার হাসপাতালের উন্নয়নে খরচ করতে হবে।
নিজের নিজের এলাকার বিভিন্ন হাসপাতালের উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ করার পরে বিধায়ক ও সাংসদেরা এলাকা উন্নয়ন তহবিলের বাকি টাকা কোথায় কী ভাবে খরচ করবেন, সেই বিষয়ে দলনেত্রী কোনও নির্দেশিকা দিয়েছেন কী? মুকুলবাবু বলেন, “না, দলনেত্রী এখনও তেমন কোনও নির্দেশ দেননি। শুধু হাসপাতালের উন্নয়নের জন্যই নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়ার কথা বলেছেন।”
বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির বৈঠকে প্রস্তাব এসেছে, কোনও নির্দিষ্ট এলাকার তিন থেকে পাঁচটি সাধারণ হাসপাতাল নিয়ে ‘ক্লাব’ বা গুচ্ছ তৈরি করে দেওয়া হোক। কোনও হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়ার দরকার নেই। বরং কোনও এলাকার কাছাকাছি কয়েকটি হাসপাতালকে ‘ক্লাব’ করে এক-একটি হাসপাতালের এক-একটি বিভাগকে উন্নত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
পরিষেবার উন্নতি হবে কী ভাবে?
দৃষ্টান্ত দিয়ে তার ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে ওই প্রস্তাবে। তাতে বলা হয়েছে, প্রতিটি হাসপাতালেই মেডিসিন বা অর্থোপেডিকের মতো বেশ কয়েকটি বিভাগ রয়েছে। সেই সব হাসপাতালে ওই সমস্ত বিভাগে অন্তত এক জন করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রয়েছেন। তিনি ছুটি নিলে বা তাঁর দিনের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে ওই বিভাগে কোনও রোগী হাসপাতালে এলে তাঁকে অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতে হয়। কমিটির প্রস্তাব, কাছাকাছি কয়েকটি হাসপাতালের নির্দিষ্ট বিভাগের ডাক্তারদের নিয়ে যাওয়া হোক একটি হাসপাতালে। অর্থোপেডিকের কথাই ধরা যাক। ক্লাব বা গুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত সব হাসপাতালের অর্থোপেডিকের বিশেষজ্ঞেরা যদি একটি হাসপাতালে বসেন, তা হলে সেখানে ওই বিভাগ ২৪ ঘণ্টাই খুলে রাখা সম্ভব হবে। বাসিন্দারা সরাসরি সেই হাসপাতালে চলে যেতে পারবেন। ভাল চিকিৎসার সুযোগও পাবেন। |