মান জানতে রাজ্যের ল্যাবে নমুনা পাঠানো হয়েছিল ২০০৯-এর জুন মাসে। রিপোর্ট এল ২০১০-এর জুনে।
আর পাক্কা এক বছর পরে জানা গেল, ওই পাঁচটি ব্যাচের ‘ওআরএস’ রোগীকে দিলে বিপদ হতে পারে! একই ভাবে বিভিন্ন ওষুধের দোকান থেকে নেওয়া একটি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ট্যাবলেটের নমুনা পরীক্ষার ফল পেতে ন’মাস গড়িয়ে গিয়েছে। একটি নামী সংস্থার প্যারাসিটামল ট্যাবলেটের কয়েকটি ব্যাচের মান জানতে লেগেছে ১৪ মাস! দু’টো ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, সেগুলো নিম্নমানের।
এত দিন তা হলে ওই সব ওষুধের কী হল?
স্বাস্থ্য দফতরের খবর: পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য কেউ অপেক্ষা করেনি। আন্ত্রিকের প্রধান পথ্য হোক বা জ্বরের ট্যাবলেট, সরকারি হাসপাতালে ওই ক্ষতিকর ওষুধ রোগীদের খাওয়ানো হয়েছে। নির্বিচারে বিকিয়েছে দোকানেও। বস্তুত ৯ মাস বা ১৪ মাস বাদে রিপোর্ট যখন এসেছে, তত দিনে সংশ্লিষ্ট ব্যাচের প্রায় পুরো ওষুধই ব্যবহার হয়ে গিয়েছে!
নীতিগত ভাবে ওষুধের মান পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগে হাসপাতালে ওষুধ ব্যবহারের কথা নয়। দোকানেও বিক্রি হওয়া উচিত নয়। তা হলে এই অবস্থা কেন?
রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের অধিকর্তা চিন্তামণি ঘোষের ব্যাখ্যা: কনভেন্ট লেনের সরকারি ড্রাগ পরীক্ষা ল্যাবরেটরি রিপোর্ট দিতে এত দেরি করছে যে, অনেক দোকানই অপেক্ষা করতে পারছে না। কারণ, তাতে পুরো ব্যাচের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার ভয় থাকছে। তাই লোকসানের আশঙ্কায় তারা রিপোর্ট আসার আগেই ওষুধ বেচে দিচ্ছে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালের তো লোকসানের ভয় নেই?
ড্রাগ কন্ট্রোলের তদন্ত বলছে, ‘টানাটানি’র সংসারে চাহিদা মেটাতেই রিপোর্ট আসার আগেই হাসপাতালগুলো ওষুধ ব্যবহার করে ফেলছে। এত দিন যাঁরা তা খেয়েছেন, তাঁদের কী হাল?
কোন কোন রোগীকে নিম্নমানের ওষুধ খাওয়ানো হল, তার কোনও রেকর্ড হাসপাতালগুলোর কাছে নেই। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: ওষুধ যে নিম্নমানের, তা না-জেনেই রোগীদের দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য-সূত্রের খবর: রাজ্যের বিভিন্ন দোকান ও সরকারি হাসপাতাল থেকে ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করে কনভেন্ট লেনে স্বাস্থ্য দফতরের ল্যাবরেটরিতে পাঠান ড্রাগ কন্ট্রোলের অফিসারেরা। সেখানে পরীক্ষার পরে রিপোর্ট আসে ড্রাগ কন্ট্রোলে। যে সংস্থার যে ব্যাচের ওষুধ নিম্নমানের বলে প্রমাণিত হয়, ড্রাগ কন্ট্রোল সেগুলোর সরবরাহ ও বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। যত দিন রিপোর্ট না-আসে, তত দিন ওষুধ ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু সে নিয়ম কেউ গ্রাহ্য করছে না।
তবে এমন অবস্থা যে আর চলবে না, স্বাস্থ্য-সচিব সঞ্জয় মিত্র তা জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশ: মানের রিপোর্ট না-আসা পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে কোনও ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। কনভেন্ট রোডের ল্যাবকেও বলা হয়েছে, কোনও ওষুধের মান খারাপ জানতে পারলে তৎক্ষণাৎ ই-মেলে ড্রাগ কন্ট্রোলকে জানাতে। কিন্তু তাতেও একটা ফাঁক থেকে যাচ্ছে।
রাজ্যের ল্যাবই বা কেন তাড়াতাড়ি রিপোর্ট দেয় না?
ল্যাবের প্রধান সত্যব্রত রায়ের বক্তব্য, “নামমাত্র কর্মী ও যন্ত্র নিয়ে এত ওষুধের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট সময়মতো দেওয়া সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য দফতরকে বারবার বলেও কাজ হয়নি।” তা হলে উপায় কী? এত দিন শুধু কনভেন্ট লেনের স্টেট ড্রাগ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ ল্যাবে ওষুধ পরীক্ষা হত। এ বার স্বাস্থ্য-সচিবের নির্দেশ: কল্যাণীর স্টেট ফার্মাকোলজিক্যাল ল্যাবেও সব ধরনের ওষুধের মান যাচাই হবে। উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি ফার্মেসি কলেজেও ওষুধ পরীক্ষার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে ঘটনা হল, নিষিদ্ধ করার পরেও দোকানে খারাপ মানের ওষুধ বিক্রি বন্ধ হল কি না, তাতে নজরদারির পরিকাঠামো এখনও ড্রাগ কন্ট্রোলে গড়ে ওঠেনি।
অতএব, সংশয়টা থেকেই যাচ্ছে। |