বিধি ভেঙে থানায় হচ্ছে মন্দির, তদন্তের নির্দেশ পুলিশ-কর্তার
বিধি ভেঙে নানা জায়গা থেকে ‘বিপুল অঙ্কের’ টাকা তুলে শিলিগুড়ি থানা চত্বরে একটি বড় মাপের মন্দির গড়ার কাজ চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যেই কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে মন্দিরের ভিত ও ১১টি পেল্লায় ‘পিলার’ তৈরির কাজ হয়ে গিয়েছে। বাদবাকি কাজ দ্রুত করার জন্য পুলিশ অফিসার-কর্মীদের একাংশ চাঁদা আদায়ে ‘জোর’ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি থানায় ‘রুটিন’ পরিদর্শনে গিয়ে ওই মন্দির তৈরির কর্মকাণ্ড দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান উত্তরবঙ্গের এক অন্যতম শীর্ষ পুলিশ-কর্তা। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত জাভালগিকে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন। তার পরেই তদন্ত শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত-রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন ওই পুলিশ-কর্তা।
শিলিগুড়ি থানা চত্বরে নির্মীয়মাণ মন্দির। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “শিলিগুড়ি থানায় মন্দির নির্মাণ সংক্রান্ত ব্যাপারে তদন্ত শুরু হয়েছে। কে বা কারা, কোথা থেকে, কী ভাবে টাকা তুলেছেন, কার অনুমতি নিয়ে মন্দির তৈরির কাজে নেমেছেন, তা বিশদে খতিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সম্পূর্ণ হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। সেখান থেকে নির্দেশ পেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” প্রাথমিক ভাবে পুলিশ-কর্তাদের একাংশের কাছে অভিযোগ পৌঁছেছে, প্রথম পর্যায়ে অন্তত ৫-৬ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। কী পরিমাণ টাকা তোলা হয়েছে তা নিয়েও কিছু অভিযোগ পেয়েছেন পুলিশ-কর্তারা। তার সত্যাসত্য খতিয়ে দেখা হবে বলে এক পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দু’য়েক আগে ওই মন্দির তৈরির প্রস্তুতি শুরু হয়। পুলিশ-বিধি অনুযায়ী, থানা চত্বরে কোনও ধর্মীয় ভবন কিংবা মন্দির তৈরি করা বেআইনি। তার উপরে মন্দির তৈরির জন্য পুলিশের তরফে টাকা তোলাও পুরোপুরি অবৈধ। অভিযোগ, সে সব বিধির তোয়াক্কা না করে ওই মন্দির গড়া শুরু হয়। মন্দির তৈরির জন্য অলিখিত ভাবে একটি কমিটিও তৈরি হলেও, মূলত শিলিগুড়ি থানার দুই অফিসারই মূল দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন বলে পুলিশ মহলেই অভিযোগ রয়েছে। থানা চত্বরে মন্দির তৈরির জন্য ‘চাঁদা’ দিতে অনেক ব্যবসায়ীর কাছেই অনুরোধ করা হয়। জোরকদমে কাজ চলতে থাকে। পুজোর মুখে মন্দিরের কাজ শেষ পর্বে নিয়ে যাওয়া হবে বলে ‘বাড়তি তৎপর’ হয়ে ওঠেন উদ্যোক্তারা।
এই অবস্থায় চলতি সপ্তাহের গোড়ায় থানা পরিদর্শনে যান পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা। কার অনুমতিতে, কারা, কী ভাবে টাকা জোগাড় করে মন্দির গড়ছে তা জানতে চান তিনি। সংশ্লিষ্ট অফিসারদের একাংশ দাবি করেন, দার্জিলিং জেলা পুলিশের এক প্রাক্তন কর্তাকে জানিয়েই মন্দিরের কাজ শুরু করা হয়। থানা লাগোয়া পুলিশ আবাসনের বাসিন্দাদের অনুরোধেই ওই মন্দিরের কাজে সহযোগিতা করেন অফিসার-কর্মীদের কয়েকজন। বাস্তবে, উদ্যোক্তা কারা, মন্দির-কমিটিতে কারা রয়েছেন, ঠিক ক’জনের থেকে, কী পরিমাণে টাকা জোগাড় হয়েছে, সেই তথ্য-পরিসংখ্যান অবশ্য সে দিন মেলেনি। তার পরেই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেন ওই পুলিশ-কর্তা।
মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সব থানা চত্বর মন্দির-মুক্ত করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। বাস্তবে কিছুই হয়নি। এখন সরকার বদলেছে। থানা চত্বরের মন্দির নিয়ে ‘দৃষ্টিভঙ্গি’ বদলেছে কি না, প্রতীক্ষায় রয়েছে শিলিগুড়ি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.