‘প্লিজ, আমাকে কিছু দিন পরিবারের সঙ্গে কাটাতে দিন’
ঘিসিংয়ের উপরে হামলায় খালাস সুব্বা
সুবাস ঘিসিংয়ের উপরে জঙ্গি হামলার মামলায় ধৃত গোর্খা লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (জিএলও) প্রধান ছত্রে সুব্বা-সহ ৮ জনকে বেকসুর খালাস করে দিল আদালত।
জলপাইগুড়ি জেলা আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক (ফাস্ট ট্র্যাক, তৃতীয় কোর্ট) সঞ্চিতা সরকার শুক্রবার ওই রায় দেন। বিচারক তাঁর ৬৩ পৃষ্ঠার রায়ে ঘোষণা করেন, “তদন্তকারী অফিসারের তদন্তে সারবত্তা নেই। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই প্রমাণ করা যায়নি। সবাইকে বেকসুর খালাস দেওয়া হল।”
জঙ্গি হামলার মামলায় প্রায় ১১ বছর কেটেছে জেলে। সত্তরের কোঠায় পা দেওয়া মানুষটি কিছুটা নুয়ে পড়েছেন। শারীরিক ভাবে সুস্থও নন। রায় শুনে দৃশ্যতই ‘আবেগপ্রবণ’ হয়ে পড়েন এক সময়ে পাহাড়ের ‘জঙ্গি’ নেতা হিসেবে পরিচিত ছত্রে সুব্বা। আদালত চত্বর থেকে বেরনোর সময় তাঁর প্রতিক্রিয়া, “বিনা দোষে অনেক বছর জেলে কেটে গেল। আজই বাড়ি ফিরব। আজকের রাতটা একটু শান্তিতে ঘুমোতে চাই। কোনও রাজনীতির কথা বলবেন না। আমাকে অন্য প্রশ্নও করবেন না। প্লিজ, আমাকে কিছু দিন শুধু পরিবারের সঙ্গে কাটাতে দিন।”
এখন জলপাইগুড়ি আদালতের অদূরে অরবিন্দনগরের ভাড়াবাড়িতে থাকেন ঘিসিং। কিন্তু এ দিন ওই বাড়িতে ঢোকার অনুমতি মেলেনি। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ঘিসিংয়ের এক অনুগামী বলেন, “সাহেব সবই শুনেছেন। কিন্তু তিনি কিছু বলবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।” তবে ছত্রের মুক্তির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, “রাজ্যের নতুন সরকার যে সব রাজনৈতিক বন্দিদের মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে, তাঁদের মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ছত্রে সুব্বাও মুক্তি পেয়েছেন। আমরা ওই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা মনে করি, ওঁকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছিল।”
সমর্থকদের মাঝে ছত্রে সুব্বা। শুক্রবার জলপাইগুড়িতে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।
আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে ছত্রে সুব্বাদের আইনজীবী নৃপেন দাস বলেন, “বিনা অপরাধে ১১ বছর ধরে জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছিল ছত্রে সুব্বাদের। বছরের পরে বছর মামলা চলেছে। সরকার কি পারবে এঁদের জেলে বন্দি থাকার সময়টা ফিরিয়ে দিতে? এ দিনের মামলার রায়েই পরিষ্কার, ষড়যন্ত্র করে সকলকে জেলে আটকে রাখা হয়েছিল।” পক্ষান্তরে সরকারি কৌঁসুলি মিলন সরকার বলেন, “বহু বার আদালত বদল হয়েছে এই মামলার। যে আদালতে রায় ঘোষণা হয়েছে, সেখানে সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। সাক্ষীদের রেকর্ড করা বয়ান দেখেই রায় দেওয়া হয়েছে।”
একটা সময়ে সুবাস ঘিসিং এবং বিমল গুরুঙ্গদের সঙ্গে একযোগেই পাহাড়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন ছত্রে সুব্বা। রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পরে পাহাড়ে পার্বত্য পরিষদ গঠিত হয়। ২০০০ সালের গোড়ায় জিএলও গড়ে ছত্রে ঘোষণা করেন, সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে আলাদা রাজ্য তৈরি করতে চান। ঘিসিং পার্বত্য পরিষদ ভেঙে আলাদা রাজ্যের দাবিতে সশস্ত্র আন্দোলনে যোগ না দিলে ছত্রে তাঁকে প্রাণে মারার হুমকি দেন বলেও অভিযোগ।
দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এক সময়ে কালিম্পঙের তিনকাটারির জঙ্গলে নাগা জঙ্গিদের এনে অস্ত্র প্রশিক্ষণ শিবির চালানোর অভিযোগও ছিল ছত্রের বিরুদ্ধে। পুলিশি-হানায় ওই শিবির বন্ধ হয়ে গেলে ছত্রে আত্মগোপন করেন। ২০০১-এর ১০ ফেব্রুয়ারি দিল্লি থেকে দার্জিলিঙে ফেরার পথে পাঙ্খাবাড়ির কাছে ঘিসিংয়ের কনভয়ে গ্রেনেড, একে-৫৬ রাইফেল নিয়ে হামলা হয়। এক পুলিশকর্মী-সহ ২ জনের মৃত্যু হয়। প্রাণে বেঁচে যান ঘিসিং। ওই হামলায় জড়িত অভিযোগে ছত্রে গ্রেফতার হন।
ইতিমধ্যে পাহাড়ে বদলে গিয়েছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। ক্রমশ জিএনএলএফের পরিবর্তে ‘কর্তৃত্ব’ বেড়েছে মোর্চার। রাজ্যের নয়া সরকার গঠিত হওয়ার পরে ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ চুক্তিও হয়ে গিয়েছে। এই ‘পরিস্থিতি’তে আরও ‘কোণঠাসা’ হয়েছেন পাহাড়ের এ দিকে-ও দিকে ছড়িয়ে থাকা জিএনএলএফের নেতা-কর্মীরা। তার উপরে এ দিন ছত্রে সুব্বা বেকসুর খালাস পাওয়ার পরে তাঁদের ‘অস্বস্তি’ আরও বেড়েছে। জিএনএলএফের এক নেতার কথায়, “বিনা দোষে কেউ ১১ বছর জেল খাটলে অভিযোগকারীর দিকে আঙুল তো উঠবেই।”
ফিরে দেখা
১০ ফেব্রুয়ারি, ২০০১ পাঙ্খাবাড়ির চিলুনিধুরায় কনভয়ে হামলা। জখম ঘিসিং। মৃত ২।
২৬ মার্চ, ২০০১ ছত্রে সুব্বা ধৃত। পরে সঙ্গীরা। নিরাপত্তার কারণে মামলা গেল জলপাইগুড়িতে।
২৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৩ শুনানি শুরু।
৩ মার্চ, ২০০৯ সাক্ষ্য দিলেন ঘিসিং।
৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১ সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.