|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
শট টু শট, ফ্রেম টু ফ্রেম সত্যজিৎচর্চা |
সত্যজিতের ছবিতে ঘুরেফিরেই আসে ঐতিহ্য আর আধুনিকতার দ্বন্দ্ব, চরিত্রগুলির মূল্যবোধের সংঘাতেই তা প্রকাশ পায়। গ্রাম ও নগর, পুরনো ও নতুনের বিন্যাসে ছেয়ে থাকে তাঁর ছবির আখ্যান। সেই আখ্যানকে উপজীব্য করেই সুরঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায় খুঁজেছেন কী ভাবে আমাদের এই বাঙালি সমাজ নিয়ত পরিবর্তনের ভিতর দিয়ে ক্রমশই পাল্টে যাচ্ছে, এক নতুন গড়ন নিচ্ছে। সুরঞ্জন মার্কিন মুলুকে চলচ্চিত্রের শিক্ষক, সেখানে অবিরত এশিয়া আর ইউরোপের সিনেমা নিয়ে চর্চা করে চলেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর এই সত্যজিৎ রে/ ইন সার্চ অব দ্য মডার্ন (পেঙ্গুইন, ২৫০.০০) এগারো বছর আগে এক বার আমেরিকার স্ক্রেয়ারক্রো প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। ‘দিস বুক ফোকাসেস অন রে’জ নেগোশিয়েশনস উইথ দ্য মডার্ন...’ জানিয়েছেন লেখক। মূলত অপু-ট্রিলজি, চারুলতা, অরণ্যের দিনরাত্রি, প্রতিদ্বন্দ্বী এ সমস্ত ছবির ভিতর দিয়ে স্বাধীনতা-উত্তর বাঙালির সংকট, নতুন মধ্যবিত্ত সমাজ, মেয়েদের মুক্তি, শিক্ষার গুরুত্ব ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গ আলোচনা করেছেন তিনি।জনসংখ্যা বিজ্ঞান বা ডেমোগ্রাফি বিষয়ে গবেষণার পর প্রতিষ্ঠা সেনগুপ্তের চলচ্চিত্রে সঙ্গীত: কিছু অভিজ্ঞতা-অভিব্যক্তি (প্রিয়শিল্প, ১৫০.০০) প্রকাশ পেল সম্প্রতি। চলচ্চিত্রে যে গানের ব্যবহার, জনসাধারণের কাছে তার পৌঁছবার স্বাভাবিক প্রবণতা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে লেখক দেখেছেন, গত পনেরো-কুড়ি বছরে যতটুকুই পরিবর্তন আসুক না কেন তা সংস্কৃতির নতুন প্রেক্ষিত তৈরি করছে, ভাল-খারাপের তুলনা এখানে আপেক্ষিক। বয়স, শিক্ষা, নারী-পুরুষ, শহর-গ্রামের ফারাকে যে বৈচিত্র লক্ষ করা যায় তা মেনেই পাঁচশোরও বেশি মানুষের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। বাংলা হিন্দি দু’রকম গানের জন্যেই একই সঙ্গে সমীক্ষা চালিয়েছেন বিশিষ্ট কিছু জীবিকার মানুষজন ও প্রান্তিক মানুষজনের মধ্যে। যেমন প্রায় পঁচিশটি ছেলেমেয়ে নিয়ে গঠিত কলকাতার একটি অনাথ আশ্রমে সমীক্ষা চালাতে গিয়ে জানতে পারলেন তারা অধিকাংশই ‘স্যাড সং’ শুনতে ভালবাসে। কর্তৃপক্ষ তাদের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে ফিরিয়ে এনেছেন, কিন্তু এক ধরনের বিচ্ছিন্নতার বোধ তাদের আচ্ছন্ন করে রেখেছে। লেখার ধরন থেকে শুরু করে বইটির গড়ন, ভিন্ন এক স্বাদ এনে দেবে পাঠককে।
সত্যদেব দুবে-কে মরাঠি না বলে বরং ভারতীয় নাট্যব্যক্তিত্ব বলাই ভাল। সেই ষাটের দশক থেকে তিনি নাট্যকার নির্দেশক অভিনেতা, সর্বোপরি নাট্যশিক্ষক। অমরীশ পুরি সুলভা দেশপাণ্ডে অমল পালেকর থেকে নাসিরুদ্দিন শাহ অবধি বহু অভিনেতাই বলতে গেলে তাঁর হাতে তৈরি। ভারতীয়তা তাঁর এতটাই মজ্জাগত যে কন্নড় ভাষা করায়ত্ত ছিল না তবু গিরিশ কারনাডের লেখা নাটক মঞ্চস্থ করতে চেয়েছিলেন সত্যদেব, জানিয়েছেন গিরিশই। গিরিশের মতো লিখেছেন আরও অনেকেই, শ্রীরাম লাগু জি পি দেশপাণ্ডে বাপু লিমায়ে প্রমুখ। শান্তা গোখলে সম্পাদিত বইটি: সত্যদেব দুবে/ আ ফিফটি-ইয়ার জার্নি থ্রু থিয়েটার (নিয়োগি বুকস)। শুধু লেখা নয় তাঁকে নিয়ে, তাঁকে ঘিরে বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্বদের গোলটেবিল-আলোচনা, এবং তাঁর নিজের সাক্ষাৎকারও এ-বইতে। রয়েছে তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি, কাজকর্ম-সম্মান-পুরস্কারের হদিস। ছবি-সহ গোটা বইটিরই ছাপা ভাল।মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ভিতরকার মানুষ, আবার সেই ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে লেখালেখিও করেন অনুপমা চোপরা। ১৯৭৫-২০১০ এই পঁয়ত্রিশ বছরে কী ভাবে বদলে-বদলে গিয়েছে বলিউড, সে রকম এক হিসেব-নিকেশ মিলবে তাঁর নতুন বইয়ে: ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো: রাইটিংস ফ্রম দ্য বলিউড ট্রেঞ্চস (পেঙ্গুইন, ৪৯৯.০০)। বছর অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ ছবির তালিকাও আছে বইটিতে। প্রোলগ-এ আছে ’৭৫ সাল থেকে ছবির ধরনধারণ নিয়ে আলোচনা, আর প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে যথাক্রমে ’৯৩-’৯৯ ও ২০০০-২০১০ অবধি তৈরি ছবির আলোচনা। ইন্টারলুড-এ ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে’, আর এপিলোগ-এ শাহরুখ খানকে নিয়ে আলোচনা। শাহরুখ আবার এ-বইয়ের মুখবন্ধে লিখেছেনও, তাঁর লেখা থেকেও আন্দাজ পাওয়া যায় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির পরিবর্তনটা কী ভাবে হচ্ছিল। শাহরুখ জানাচ্ছেন, তিনি যখন প্রথম এসেছিলেন তখন অনেকটাই অসংগঠিত ছিল ইন্ডাস্ট্রি, আস্তে আস্তে তরুণ পরিচালকেরা এসে স্ক্রিপ্ট থেকে শুরু করে ছবির শেষ টাচ্-কেও সুবিন্যস্ত করে তুললেন, বলিউডকেও করে তুললেন ‘গ্লোবাল’। অনুপমার লেখার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে শাহরুখের মন্তব্য: ‘দিস বুক ইজ আ পোর্ট্রেট অব দ্য ইন্ডাস্ট্রি উইথ অল ইটস কনট্রাডিকশনস অ্যান্ড ইনস্টেবিলিটি।’
এ যেন শট টু শট, ফ্রেম টু ফ্রেম সত্যজিৎচর্চা। ছবি তৈরির গল্প, চিত্রনাট্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ, গান-গল্প এ ভাবেই সত্যজিতের সবকটি ছবিকে নতুন ভাবে ধরে রেখেছে পাঁচালী থেকে অস্কার (প্রতিভাস, প্রথম খণ্ড ৪৫০.০০, দ্বিতীয় খণ্ড ৫০০.০০)। অনিরুদ্ধ ধর, উজ্জ্বল চক্রবর্তী ও অতনু চক্রবর্তীর লেখা এই বইটি সংকলন। নব্বইয়ের দশকে ‘সানন্দা’ পত্রিকায় প্রায় পাঁচ বছর চলেছিল সত্যজিতের ছবি নিয়ে এই দীর্ঘ, যৌথ গবেষণা। এত দিন পরে পত্রিকার পাতা থেকে গ্রন্থাকার পেল সুচিন্তিত লেখাগুলি, বাঙালির চলচ্চিত্রচর্চায় আশার কথা বইকী। |
|
|
|
|
|