ফেব্রিক, বুটিক! সে সব কি? শব্দগুলি অচেনা লাগত শ্যামলী, জয়ন্তী, নিরুপমাদের। অথচ আজ তাঁরাই তৈরি করছেন হাল ফ্যাশনের পোশাক। সে সব পরে র্যাম্প দাপাচ্ছেন নামী মডেলরা।
কলকাতার আর্ট কলেজের দুই ছাত্র তমলুকের রামতারক এলাকার দুই যুবক কার্তিক সাহা ও অশোক দাসের স্বপ্ন ছিল শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া। ২০০৩-এ আর্ট কলেজ থেকে পাশ করার পর বছর দুই বন্ধু কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে এই কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকায় প্রথম দিকে ভাল লোকাসানও হয়েছিল। এরপরে কলকাতায় ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে কিছুদিন পড়াশোনা করেন ওই দু’জন।
বাটিকের কাজে দক্ষ কার্তিক। আর নিখুঁত ফেব্রিকের কাজ করেন অশোক। তমলুকে ফিরে বুটিক খোলার চিন্তাভাবনা শুরু। গ্রামের মহিলাদের নিয়ে তৈরি হয় ‘শূন্য’। কার্তিক-অশোকের হাত ধরে নিত্যনতুন পোশাক বানাতে শেখেন মহিলারা। এখন মুম্বই, দিল্লি, কলকাতার পাশাপাশি ইতালি, ফ্রান্স, জাপান, কানাডায় রফতানি হচ্ছে কার্তিক-অশোকের তৈরি নানা ধরনের পোশাক। কার্তিক জানান, বছরে প্রায় ১৮ লক্ষ টাকার ব্যবসা করেছে ‘শূন্য’। কার্তিক-অশোকের কথায়, “আর্ট কলেজের শিক্ষা নিয়ে এমন পেশায় আসার কথা কখনও ভাবিনি। সেই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে গ্রামের মহিলাদেরও স্বনির্ভর করতে পেরে ভাল লাগছে।” গত তিন বছরে অগ্নিমিত্রা পাল, দেব-নীল, সৌমিত্র মণ্ডলের মত নামী ফ্যাশন ডিজাইনারদের সঙ্গে কাজ করেছেন কার্তিক-অশোক। |
কার্তিক-অশোকের হাত ধরে নিপুণ ভাবে ফেব্রিক-বাটিকের কাজ শেখা নিরুপমা, জয়ন্তীরা বলেন, “আগে গেরস্থালির কাজ করে দিন কাটত। আর এখন সারা বছর কাজ করছি। আয়ের টাকায় সংসারেরও হাল ফিরেছে।” ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পালের কথায়, “কার্তিক খুব সুন্দর বাটিকের কাজ করেন। ওঁদের ভাবনা চিন্তাও বেশ অভিনব। তা ছাড়া, কলকাতায় কাজ শিখে নিজের গ্রামের মহিলাদের নিয়ে এ ভাবে কাজ করা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। মহিলা হয়ে আমার খুব ভাল লাগছে।” তমলুকের পাশাপাশি বোলপুরেও তৈরি করেছে ফেব্রিক ও বাটিকের কর্মশালা। সেখানেও কাজ করছেন অন্তত ৩০ মহিলা। শুক্রবার তমলুকে ওই সংস্থার এক কর্মশালার উদ্বোধন করেন জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন, শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি বিভাস কর-সহ বিশিষ্টেরা। সাত বছর ধরে লড়াইয়ের পর তমলুকে সংস্থার নিজস্ব ঘরে কর্মশালা করতে পেরে আপ্লুত কার্তিক-অশোক। কার্তিকের কথায়, “এখন লক্ষ্য নিজেদের ব্র্যান্ড তৈরি করা। আশা করি সফল হব।” |