...গন্ধ এসেছে
বসুন্ধরার টানে
বার বিধাননগরের বেশ কয়েকটি ব্লকে দুর্গাপুজোর রজত জয়ন্তীবর্ষ। সেই সব ব্লকে পুজো নিয়ে উন্মাদনা যথেষ্ট। তবে পিছিয়ে নেই অন্যরাও। মণ্ডপ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ক্ষান্তি নেই কারও।
এফডি ব্লকের এ বারের থিম সাজানো হচ্ছে ভাইজ্যাগের পটভূমিতে। পুজো কমিটির সভাপতি প্রদীপ সেনগুপ্ত জানালেন, সমুদ্রের ধারে পাহাড়ের উপর তিনটি মন্দিরের একটিতে থাকবে প্রতিমা। অন্য দু’টির একটিতে শিব ও অন্যটিতে থাকবে চল্লিশ ফুটের ফাইবারের দুর্গা। সেটি বিসর্জন না দিয়ে সংরক্ষণ করা হবে।
পঁচিশ বছরের আইবি ব্লকের পুজো হচ্ছে গ্রাম্য পরিবেশের পটভুমিতে। গ্রামের দোতলা বাড়ির আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। পুজোর সহকারী সম্পাদক সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় জানান, গ্রামের পরিবেশের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করা হচ্ছে হাতপাখা, পটচিত্র প্রভৃতি। তাঁর কথায়: “এই সব পটচিত্র কিংবা হাতপাখা পরে বিভিন্ন গ্রামের লোকজনের মধ্যেই বিতরণ করা হবে। একটি বিশেষ গ্রামের পরিবেশের আদলে থিম হবে।” চার দিন ধরে গ্রামের পটভূমিতে দর্শকদের পুজো দেখাতে চাইছে সল্টলেকের এই ব্লকটি।
রজতজয়ন্তী বর্ষে বিকে ব্লকের নিবেদন ‘বসুন্ধরা ইতি জীবন’। পুজোর বিষয়বস্তু, সৃষ্টির ইতিকথা। কী ভাবে ধ্বংসের পরে ফের পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব বিকশিত হয়। কী ভাবে নতুন সৃষ্টি ক্রমেই নতুন জীবনের দিকে এগিয়ে চলে আলো এবং ধ্বনির মাধ্যমে তা মণ্ডপে ফুটিয়ে তোলা হবে। পুজোর বিষয়বস্তুকে বাস্তবে রূপ দিতে বিভিন্ন ধরনের রেপ্লিকাও ব্যবহার করা হচ্ছে গোটা মণ্ডপে।
সল্টলেকের অন্যতম প্রাচীন পুজো সিকে-সিএল ব্লকের। সেখানেও এ বার পুজো পা দিচ্ছে পঁচিশ বছরে। রজত জয়ন্তী বছরে এ বার এই ব্লকের নিবেদন ‘প্রগতি’। মণ্ডপে তাই ব্যবহার করা হচ্ছে ইস্পাত।
২৮তম বছরে এই (পার্ট-১) ব্লকের নিবেদনে তুলে আনা হচ্ছে জীবনের উত্থান-পতন। বিষয়বস্তুকে প্রাণ দিতে মণ্ডপ তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের মই। কাঠ থেকে দড়ি সব ধরনের পাঁচশো মই ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তা সৌম্য গুপ্ত। মইগুলিকে বিভিন্ন অবস্থায় রেখে জীবনের উত্থান-পতন দেখানো হবে।
বত্রিশ বছরের বিই (পূর্ব)-র পুজোর ভাবনায় উঠে এসেছে ‘সময়’। গোটা মণ্ডপটি তৈরি হচ্ছে দু’টি ঘড়ির আদলে। একটি বালি ঘড়ি এবং অন্যটি যন্তরমন্তর-এর ঘড়ি। উদ্যোক্তা রজত সাহা জানান, যে পরিবেশের মধ্য দিয়ে মূল মণ্ডপ পর্যন্ত দর্শকদের পৌঁছতে হবে সেখানে বোঝানো হবে একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে সকলকে চলতে হচ্ছে। মূল মণ্ডপে দেবীর সামনে গিয়ে সেই কঠিন সময়ের সমাপ্তি ঘটবে।
সল্টলেকের এজি ব্লকে পুজোর এ বার রজতজয়ন্তী বর্ষ। পুজোর বিষয়: ‘সাজাব তোমায় সবুজে শ্যামলে ফুলে ফলে সহজে সরলে।’ আট হাজার বছর আগে পৃথিবী কতটা সবুজ ছিল আর বর্তমানে সেই সবুজ কোথায় এসে ঠেকেছে, তাই দেখানো হবে এই পুজোয়। গাছেরও যে প্রাণ আছে তা বোঝাতে থিমের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে এলাকার বিভিন্ন গাছের জন্য বিশেষ ধরনের জামাও তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান উদ্যোক্তারা।
সিজে ব্লকের পুজো ২৬ বছরে পা দিল। এ বার সেখানে দেখানো হবে ‘প্রকৃতির বনমহোৎসব’। উদ্যোক্তারা জানান, সূর্যের মধ্যে হিলিয়াম গ্যাস বিপদমাত্রা ছাড়াচ্ছে। ফলে পৃথিবী ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে। এই অবস্থায় পরিবেশ সচেতনতার বার্তা দিতে এ বার ধুতরো ফুলকে সৃষ্টির প্রতীক হিসেবে দেখানো হচ্ছে এখানকার মণ্ডপে। ধুতরো ফুলের মধ্যেই তৈরি হবে দেবীর নাটমন্দির। বিধাননগরের চেয়ারপার্সন তথা এই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “মানুষকে প্রকৃতির প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণে উৎসাহিত করতেই এই ধরনের বিষয়কে পুজোর ভাবনার মধ্যে আনা হয়েছে।” প্রায় কাছাকাছি গিয়েছে এজে ব্লকের থিম। এখানে থিম: ‘আকাশবাণীর রূপকথা’। বিশ্ব উষ্ণায়ন সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে এখানে দেবীকেই প্রকৃতি রূপে কল্পনা করা হয়েছে। গোটা মণ্ডপটিই সাজানো হবে গাছ দিয়ে। বিশাল গাছের গুঁড়ির মধ্যে মা দুর্গাকে বসানো হবে।

ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.