...গন্ধ এসেছে
রবিঠাকুর থেকে সবুজের অভিযান
ত্তর কলকাতার বড় বড় পুজোর পাশাপাশি মাঝারি বা ছোট পুজোগুলোতেও রয়েছে নিজস্বতা। যেমন, পাইকপাড়া ৩১ পল্লি যুব সংসদের পুজোয় প্রতি বছরই থাকে নতুনত্বের চমক। উদ্যোক্তারা জানালেন, এ বার তাঁদের মণ্ডপে থাকবে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির নানা কোলাজ। মূলত রবীন্দ্রনাথের জন্ম সার্ধশতবর্ষের কথা মাথায় রেখেই এই উদ্যোগ বলে জানালেন তাঁরা। তাঁদের এ বারের থিম হল, ‘বারো মাস রবীন্দ্রনাথ’। মণ্ডপের ভেতরে থাকবে সহজ পাঠের ছবি। থাকবে রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গল্পের ওপর পটচিত্র, ছবি।
টালার সার্কাস ময়দানে বেলগাছিয়া সাধারণ দুর্গোৎসবের মণ্ডপ সেজে উঠবে সবুজ বাঁচাও অভিযান নিয়ে। উদ্যোক্তারা জানালেন, প্রচুর গাছের চারা পোঁতা হয়েছে মণ্ডপ জুড়ে। সবুজ, শ্যামল পৃথিবী ও রুক্ষ পৃথিবীর মধ্যে যে কতটা তফাত তা এই মণ্ডপে তুলে ধরা হবে। প্রতিমাতেও থাকবে অভিনবত্ব। প্রতিমা দর্শনের জন্য যেতে হবে শিবের জটার মধ্য দিয়ে।
আবার টালা বারোয়ারি মণ্ডপে এলে বিজ্ঞাপনের বিবর্তন কী ভাবে হল তা উপলব্ধি করা যাবে। এই মণ্ডপে এলে সেই আশির দশকের বিজ্ঞাপনের গান যেমন শোনা যাবে, সে রকমই দেখা যাবে সত্তরের দশকে পুজোর সময়ে বিজ্ঞাপনের ছবিও। পুজোর বিজ্ঞাপন কী ভাবে বদলে যাচ্ছে তার ধারণা পাওয়া যাবে এই মণ্ডপে এলে।
টালা দক্ষিণপল্লি সাধারণ দুর্গোৎসবের এ বারের থিম, পড়াশোনার চাপে বাচ্চাদের মনের বিকাশ কী ভাবে রুদ্ধ হয়ে যায়। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি দেখানো হবে প্রাঞ্জল ভাবে, যাতে পুজো দেখতে আসা প্রতিটি মানুষই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেন। পাশাপাশি, টালার মন্মথনাথ দত্ত রোডের সম্মেলনী পুজো বা টালাপল্লি সাধারণ দুর্গোৎসবের পুজোয় রয়েছে সাবেকিয়ানার ছোঁয়া। পুজোর কর্মকর্তারা জানালেন, থিম না থাকলেও এই পুজো দেখতে ভিড় করেন দূরের এলাকার মানুষও।
শ্যামবাজার পাঁচমাথা মোড়ের কাছে নবীন সঙ্ঘের পুজোয় এ বার থাকবে ঢাটরা শিল্পের নিদর্শন। উদ্যোক্তাদের দাবি, এর আগে মেদিনীপুরের এই শিল্পের প্রদর্শনী কলকাতায় হয়নি। বাঁশের ফ্রেমে কাপড় লাগিয়ে ছোট ছোট পাথর বসিয়ে নানা ধরনের মূর্তি ফুটিয়ে তোলা হবে। থাকবে দুর্গার দশ রূপ, কালীর দশ রূপ, থাকবে নারায়ণেরও নানা রূপ।
অন্য দিকে, নলিন সরকার স্ট্রিট সর্বজনীন পুজোর এ বারের থিম প্রকৃতি ও পুরুষ। এই মণ্ডপে দর্শকেরা যখন প্রতিমা দর্শনে ঢুকবেন তখন তাঁদের মনে হবে যেন ডিঙির ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। দুর্গাপ্রতিমায় থাকবে ‘থ্রি ডি এফেক্ট’। মনে হবে, যেন কোনও বিশাল পাথর ফেটে বেরিয়ে আসছেন দশভূজা।
শিকদারবাগান সাধারণ দুর্গোৎসব এ বার ৯৯ বছরে পা দিল। এই পুজোয় কোনও থিম না থাকলেও সাবেক পুজো নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনাকল্পনা। এলাকায় আর এক পুরনো মোহনবাগান বারোয়ারি দুর্গোৎসবের পুজোও সাবেক। কর্মকর্তারা জানালেন, পাড়ার সবার যোগদানটাই তাঁদের পুজোর প্রধান আকর্ষণ।
শ্যামপুকুর আদি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির মণ্ডপে এলে শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা টের পাওয়া যাবে। উদ্যোক্তারা জানালেন, কী ভাবে ছোট ছেলেমেয়েদের স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যায় তার নিদর্শন থাকবে এই মণ্ডপে। নানা মডেলে মণ্ডপ সাজানো হবে।
বাগবাজার এলাকার বেশির ভাগ পুজোই সাবেক। থিমের ছোঁয়া না থাকলেও এই বহু পুরনো পুজোগুলো দেখতে ভিড় হয় ভালই। কোনও মণ্ডপে থাকে বড় বড় ঝাড়বাতির প্রদর্শনী। কোনও পুজো ঘিরে আবার চলে জমজমাট মেলা। যেমন মণীন্দ্র কলেজের পাশে শ্যাম স্কোয়ার সর্বজনীনে এ বার কোনও থিম না থাকলেও এই পুজো একেবারে প্রথম থেকেই জমজমাট। সাবেক এই পুজো ঘিরে বসে মেলা। মেলা চলে বেশ কয়েক দিন। বাগবাজার সর্বজনীনের মতো বড় পুজোর পাশেই তৈরি হচ্ছে নব বাগবাজার সর্বজনীন পুজোর মণ্ডপ। এই পুজোও সাবেক। গৌরীমাতা উদ্যানের পুজো ও বাগবাজার পল্লির পুজোও সাবেক।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.