...গন্ধ এসেছে
অক্ষরধাম থেকে সাঁওতাল গ্রাম
কালবেলার সোনালি রোদই বলে দিচ্ছে আসছে পুজো। কিন্তু যে কোনও সময় কালো হয়ে আসছে আকাশ। তার পরেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। তাতে অবশ্য থেমে নেই পুজোকমিটিগুলির ব্যস্ততা। বৃষ্টিই পড়ুক আর যা-ই হোক, মণ্ডপগুলির সামনে গেলেই সমান তালে কানে আসছে কাঠে পেরেক ঠোকার আওয়াজ, শুরু হয়ে গিয়েছে বাঁশ বাঁধাও।
পাঠানপুরে মাঠ জুড়ে ৬০ ফুট উঁচু মহীশূরের রাজবাড়ির আদলে মণ্ডপ তৈরি করছে বিরাটির সন্ধানী সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। এ বার তাদের ৩৯তম বর্ষ। আবার বিরাটির চার ও পাঁচ নম্বর মহাজাতি নগর সর্বজনীন পুজো কমিটির মণ্ডপ চত্বরে ঢুকলে মনে হবে চলে এসেছেন কোনও এক সাঁওতাল গ্রামের রাস্তায়। চোখে পড়বে গৃহস্থের উঠোনে ধানের গোলা, নাট মন্দির, আর তার পাশেই পুজোমণ্ডপ। ৩০ ফুট চওড়া ও ৩৫ ফুট উঁচু এই মণ্ডপ কিন্তু আলো ঝলমলে নয়, চোখে পড়বে পুরুলিয়ার ডোকরা শিল্পের নিদর্শন। প্রতিমা অবশ্য সাবেক। আর মণ্ডপের ভিতরে থাকবে সাঁওতালদের জীবনযাত্রার নানা দিক নিয়ে থার্মোকলের তৈরি বিভিন্ন মডেল।
হিন্দুস্থান ভলেন্টিয়ার সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে ঝুড়ি, সাজি, চুপড়ি, কুলো ইত্যাদি দিয়ে। ৬০ ফুট উঁচু ও ৩৫ ফুট চওড়া এই মণ্ডপে থাকছে বাঁশ ও বেতের তৈরি গৃহস্থালির নানা ব্যবহার্য জিনিস। থাকবে কাঠের তৈরি নানা রকম মূর্তিও। তবে মূল প্রতিমা সাবেকই।
রজতজয়ন্তী বর্ষে সুন্দরবনের হোগলা পাতা দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করে গ্রামীণ সমাজকে তুলে ধরতে চেয়েছে নিমতা নবদিগন্ত সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। মণ্ডপের চার দিকে গোলাকার বৃত্তে সাজানো থাকবে পোড়ামাটির তৈরি বিভিন্ন মডেল, যা দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হবে সমাজের বিভিন্ন ছবি।
পঁচিশতম বর্ষে নিমতা উত্তর শিবাচল সর্বজনীন পুজো কমিটির মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে গুজরাতি স্থাপত্যের আদলে। তবে এই পুজোর মূল আকর্ষণ একটু অন্য রকম। নারকেলের ছোবা, বাতিল প্লাস্টিকের প্যাকেট ও বোতল দিয়ে শিবাচল এলাকারই ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের তৈরি নানা ধরনের হাতের কাজ চোখে পড়বে মণ্ডপে।
বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিরাটির নতুনপল্লি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির মণ্ডপও। ৩০ ফুট উঁচু ও ৫০ ফুট চওড়া এই মণ্ডপে বাঁশ কেটে তৈরি করা নানা নক্শায় থাকবে সাঁওতালদের জীবনাযাত্রার নানা ছবি। গ্রামীণ সমাজচিত্র ফুটিয়ে তুলতে মণ্ডপ চত্বরে থাকবে ধানের গোলা, নাট মন্দিরও।৬০ ফুট উঁচু পাঁচিল ঘেরা দেবালয় তৈরি করছে নিউ ব্যারাকপুরের পাঁচ নম্বর পার্কে ভাঙাগড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। বিশাল ওই পাঁচিলের গায়ে থাকবে বিভিন্ন দেবদেবীর মুখের প্রতিকৃতি এবং মণ্ডপের চূড়ায় থাকবে শিবলিঙ্গ।
কর্নাটকের মন্দির তৈরি করছে নিউ ব্যারাকপুরের বিদ্রোহী সঙ্ঘ। তিরুপতির মন্দিরের আদলে বাঁশ ও বেতের মণ্ডপ তৈরি করছে পল্লিউন্নয়ন সমিতি। থাকছে নানা রকম আলোকসজ্জাও।
৭০ ফুট উঁচু ও ৮০ ফুট চওড়া বুদ্ধমন্দির তৈরি করছে মহাজাতি পরিষদ সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। তবে মূল আকর্ষণ বুদ্ধমন্দিরে পোড়া মাটির প্রতিমা। আবার ইস্কন মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করছে শক্তিসঙ্ঘ সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি।
পূর্বাচল সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজো কিন্তু সাবেক ঘরানার। একাধিক চূড়া নিয়ে তৈরি এই মণ্ডপে আঁকা থাকবে বিভিন্ন রকমের ছবি। আয়োজন করা হচ্ছে বস্ত্রদানের। থাকছে ক্যুইজ ও শঙ্খধ্বনির মতো বিভিন্ন প্রতিযোগিতারও। এ রকমই বিভিন্ন রকম প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে অগ্রদূত, খড়ের মাঠ, দুর্গবাড়ি, অফিস ব্লক, সবুজ চক্র, মিলন সঙ্ঘ, চারের পল্লি, ঘ্যাসের মাঠ, দাদা-ভাই, বোধন ইত্যাদি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজোতেও। এই পুজো কমিটিগুলি অবশ্য এ বার সাবেক রীতিতেই পুজো করছে। থাকছে বিভিন্ন রকম আলোকসজ্জাও।
নির্দিষ্ট কোনও থিম নয়, মধ্যমগ্রামের পুজো কমিটিগুলি এ বার দুর্গাপুজো করছে এক্কেবারে সাবেক কায়দায়। বাঁশ ও কাপড়ের মণ্ডপে সাবেক কায়দায় পুজো করবে উদয়রাজপুর পেয়ারাবাগান পুজো কমিটি। বঙ্কিমপল্লি বারোয়ারিখোলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির এ বারের আকর্ষণ এলাকাবাসীদের জন্য ভূরিভোজের আয়োজন। সাবেক পুজোর পাশাপাশি নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে নেতাজি সঙ্ঘ, বীরেশপল্লি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি।
এ দিকে, ৬৪তম বর্ষে সহজ পাঠের মডেল ছবি ও ছড়া দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিরাটির মাঝেরহাটি মোড়ের নিমতা ললিত গুপ্ত স্ট্রিট সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পুজোয়। চট ও প্লাস্টার অফ প্যারিসের তৈরি ১৫টি ঘরের দেওয়ালের গায়েই দেখা যাবে ছড়া ও ছবিগুলি। ৬০তম বর্ষে তামিলনাড়ুর মামাল্লাপুরম শিবমন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করছে মধ্য নিমতা পুজো কমিটি। এর প্রবেশদ্বারের দু’পাশে থাকছে ৮ ফুট উচ্চতার দু’টি হাতি। এ ছাড়া, মূল মন্দিরের দু’পাশে দু’টি করে মোট চারটি মন্দিরও থাকছে। থাকছে ভিন্ন ধরনের আলোকসজ্জা। নিমতা আদি কালীবাড়ি সর্বজনীন পুজো কমিটির এ বারের থিম অক্ষয় ধাম। আর নিমতা পল্লিমঙ্গল সমিতি তৈরি করছে সোনার তরীর আদলে মণ্ডপ।

ছবি: সুদীপ ঘোষ।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.