...গন্ধ এসেছে
একছুট্টে স্মৃতির পুজোয়
ছেলেবেলা ফিরছে এ বারের পুজোয়!
ছোটবেলা বলতেই মনে পড়ে সেই লাট্টু ঘোরানোর স্মৃতি। মনে পড়ে, কঞ্চির মাথায় কাগজের চরকি বানিয়ে যত্ত জোরে সম্ভব ছুটে যাওয়া। যত জোরে ছুটবে, চরকি ঘুরবে তত জোরে। এই কাগজের চরকি বা লেত্তি-লাট্টু এখন তো প্রায় চোখেই পড়ে না। বিশেষ দেখা মেলে না ডাংগুলি, ব্যাগাডুলি বা কাগজের লুডোরও। হোমওয়ার্কের পাতা থেকে কিছু ক্ষণের জন্য মুখ তুললেও এখনকার ছেলেমেয়েদের শৈশব কিন্তু আটকে কম্পিউটার ও ভিডিও গেম্সেই। ডাংগুলি খেলে দেরিতে বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে পিটুনি বা স্কুল থেকে ফেরার পথে চরকি হাতে দৌড়ে বাড়ি ফিরে বকুনি হারিয়ে যাওয়া শৈশবের এই স্মৃতিগুলিরই এ বার দেখা মিলবে এক্কেবারে সামনাসামনি।
এ বার পুজোয় ফেলে আসা সেই শৈশবে ফিরে যাবেন নরেন্দ্রপুর নীলাচল ফেস-টু পুজো কমিটির সদস্যেরা। লাট্টু-লেত্তি, চরকি, ডাংগুলি, ব্যাগাডুলি, লুডো এ সব দিয়েই তৈরি হবে মণ্ডপের ভিতর ও বাইরের চার দিক। গোটা মণ্ডপেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকবে দুষ্টুমির নানা স্মৃতি। বাবা-মায়েদের হাত ধরে ঠাকুর দেখতে এসে হয়তো তাঁদের ছোটবেলার নানা রকম গল্প শুনতে পারবে ছোটরা।
রাজপুর ধামাইতলার বালক সঙ্ঘের এ বারের থিম কেদারনাথ-বদ্রিনাথ মন্দির। প্লাইউড-বাঁশ-চটের উপর রং করে তৈরি প্রায় ১২০ ফুট লম্বা ও ৭০ ফুট চওড়া পাহাড়ের উপর থাকবে এই মন্দির। এই পাহাড়ে উঠে প্রথমেই দেখা মিলবে শিবঠাকুরের। পাহাড় থেকে নেমে গুহার সামনে তৈরি মণ্ডপে থাকবে সাবেক প্রতিমা। আবার বীরভূম-পুরুলিয়ার বিভিন্ন আদিবাসী গ্রামের আচার-সংস্কৃতির দেখা মিলবে গড়িয়ার পূর্ব বালিয়া পুজোমণ্ডপে। প্রতিমার আদল এখানে আদিবাসী দেবদেবীদের মতো। বীরভূমের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আদিবাসীই এ বার পুজোয় মূল অতিথি। পুজোর চার দিন পাড়ার সবাই এই আদিবাসীদের সঙ্গেই থাকবেন, খাওয়াদাওয়া করবেন।
রাজপুর নবারুণ সঙ্ঘের দুর্গাপ্রতিমা আবার তৈরি হবে বনবিবির মূর্তির আদলে। সুন্দরবনের বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে তাদের এ বারের থিম ‘মিনি সুন্দরবন’। আয়লায় ক্ষতিগ্রস্ত শুকনো ম্যানগ্রোভ দিয়েই তৈরি হচ্ছে নবারুণ সঙ্ঘের পুজোমণ্ডপ। মণ্ডপ চত্বরে থাকবে শুকনো, ছোট ম্যানগ্রোভ দিয়ে তৈরি বাঘ, কুমির। এই আয়লার সময়েই ঘরবাড়ি ভেঙে গৃহহীন হয়েছেন অনেক মানুষ, তেমনই আবার জীবিকার তাগিদে জঙ্গলে গিয়ে বাঘের মুখে পড়ে প্রতি বছর মৃত্যু হয় বহু মানুষের। এ ভাবেই স্বামীহারা হয়েছেন অনেক মহিলা। ওই সব মহিলার এবং পিতৃহারা শিশুদের পুজোর চার দিন আমন্ত্রণ জানিয়েছে এই পুজো কমিটি।
সুন্দরবনের দুর্গা যদি বনবিবির আদলে হন তো মিশরে থাকলে দুর্গা অবশ্যই হবেন মিশরীয় আদলে। ঠিক মিশরীয় ঢঙেই প্রতিমা তৈরি করে প্লাইউড-থার্মোকল দিয়ে মণ্ডপ বানিয়ে এ বার পুজোয় মিশর সভ্যতাকে তুলে ধরছেন রাজপুর-মালিকাপুর পুজো কমিটি।
সোনারপুর-চাঁদমারি এপি নগর পুজো কমিটির অবশ্য এ বারের ভাবনা একটু অন্য রকম। নিজেদের আর একটু বেশি স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টায় পুজোর বাজেট খানিক কমিয়ে কেনা হচ্ছে একটি অ্যাম্বুল্যান্স। প্রতি বছরের মতো এ বারও এখানে পুজো হবে নবদুর্গারই। চট ও বাঁশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। তবে শুধুই পুজো নয়, ওই চার দিন ধরে চলবে মেলাও, যা এখন প্রায় হারিয়েই যাচ্ছে। মেলার মাঝখানেই থাকবে পুজোমণ্ডপ।
শুধু মেলা প্রাঙ্গনের মাঝখানেই নয়, কোনও দুর্ঘটনাস্থলের পাশে পুজো মণ্ডপ থাকলে তা ঠিক কেমন হত? পুজোর পাশাপাশি দুর্ঘটনাস্থলের পরিবেশ তুলে ধরাই এ বার রাজপুরের ধামাইতলা মাতৃসঙ্ঘের উদ্দেশ্য। মাস দুয়েক আগে দুর্ঘটনায় পড়েছিল কালকা মেল। ইঞ্জিন লাইচ্যুত হয়ে বগির উপরে উঠে গিয়েছিল অন্য সব বগি। মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ৬০ জনের। ধামাইতলা মাতৃসঙ্ঘ পুজো প্রাঙ্গনে এ বার এক দিকে থাকবে দুর্ঘটনাস্থলের ভয়ঙ্কর দৃশ্য, অন্য দিকে রেল লাইনের পাশে তৈরি কেবিনম্যানের দোতলা ঘরে থাকবে মা দুর্গার মণ্ডপ।
তবে, রাজপুর ১১ পল্লি উন্নয়ন সমিতির পুজো কিন্তু ফিরে গিয়েছে প্রায় দেড়শো বছর আগে। প্রায় ১৫০ বছর ধরে মণ্ডপ এবং দুর্গামূর্তির যে নানা পরিবর্তন হয়েছে, তা-ই তুলে ধরা হবে এই মণ্ডপে। রামচন্দ্রের দুর্গাপুজো, বনেদিবাড়ির পুজো, জমিদারবাড়ির পুজো, বারোয়ারি পুজো, জেলেপাড়ার পুজো ঠিক কেমন হত, দেখা যাবে সবই। আবার পুরনো দিনের ওই সব মূর্তি ও মণ্ডপের আদল বর্তমান সময়ে কী ভাবে ফিরে এসেছে, দেখা মিলবে তারও। প্রায় দুই বিঘে জমির উপর নানা ধরনের মণ্ডপ ও দুর্গামূর্তি দেখা যাবে। আধুনিক প্রজন্ম পরিচিত হবে পুরনো আচার-আচরণের সঙ্গে।

ছবি: পিন্টু মণ্ডল।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.