|
|
|
|
|
|
|
...গন্ধ এসেছে |
সাজতে জানলেই সুন্দরী
পুজোয় কী ভাবে নিজেকে উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়
করে তুলবেন? লিখছেন পরমা দাশগুপ্ত |
|
সপ্তমী দিনভর বন্ধুদের সঙ্গে প্যান্ডেলে-প্যান্ডেলে টইটই।
অষ্টমীর সকালে অনভ্যাসের শাড়ি-পাঞ্জাবিতে অঞ্জলির লাইনে।
নবমীর রাতে ভাইবোনেরা মিলে রেস্তোরাঁয় জমিয়ে পেটপুজো।
দশমীতে পাড়ার পুজোর বিসর্জনে।
রুটিন যা-ই হোক, পুজোর চার দিন মানেই জমিয়ে সাজগোজ। কিন্তু শহর ঢুঁড়ে কিনে আনা হাল ফ্যাশনের শাড়ি কিংবা বুটিকের এথনিক ধুতি-পাঞ্জাবি আপনাকে যদি উজ্জ্বল না লাগে, সাজটাই মাটি। আর তার জন্য পুজোর আগের ক’দিনে চাই সঠিক যত্ন। যাতে ঝকঝকে ত্বক আর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলে আরও ঝলমলে হয়ে ওঠে সাজ।
রূপ বিশেষজ্ঞ শর্মিলা সিংহ ফ্লোরার মতে, পুজোর ক’দিন জমিয়ে সাজতে মাসখানেক আগে থেকেই ত্বকের ঘষামাজা শুরু করা উচিত। দিনভর কাজের শেষে বাড়ি ফিরে মুখটা ফেসওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করা, নুনজলে হাত-পা ধোয়া, রাতে শোয়ার আগে মুখ ধুয়ে ময়শ্চারাইজার লাগানো, স্নানের সময়ে স্ক্রাবিং, রোদে বেরোলে সানস্ক্রিন লাগানোর মতো প্রাথমিক যত্ন বাড়িতেই নেওয়া যায়। মেক-আপের আগে তৈলাক্ত ত্বকে টোনার এবং শুষ্ক ত্বকে ময়শ্চারাইজার লাগানোটা জরুরি, জানালেন শর্মিলা।
পুজোর আগে রোদ-বৃষ্টিতে দোকানে দোকানে ঘুরে ক্লান্ত চেহারায় উৎসবের দিনগুলোয় চাই বাড়তি জেল্লা। তাই পুজোর মুখে সালোঁয় গিয়ে পেশাদারী যত্ন নিতে পরামর্শ দিচ্ছেন রূপ-বিশেষজ্ঞ রীতা মোহন। তাঁর কথায়, “পুজোর ছ’দিন আগে বডি স্পা, ৩-৪ দিন আগে ফেশিয়াল এবং দু’এক দিন আগে পেডিকিওর, ম্যানিকিওর এটাই হোক রূপচর্চার রুটিন। বডি স্পা ত্বকের মরা কোষ দূর করে ত্বক উজ্জ্বল করে।” এ ছাড়া, বাইরে থেকে ফিরে মুখ ধুয়ে টোনার বা গোলাপ জল মাখা, ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়শ্চারাইজার বা অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট লাগানো, তৈলাক্ত ত্বকে টক দই মাখা, স্ক্রাবিং এবং ফলের টুকরো দিয়ে ঘরোয়া ফেসপ্যাক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তিনিও। আর পুজোয় মেক-আপের ক্ষেত্রে দুই বিশেষজ্ঞেরই বক্তব্য, দিনের বেলাটা থাকুক হাল্কা শেডের লিপস্টিক, আই শ্যাডো, কাজল-আইলাইনার, ম্যাট ফিনিশ লুকের হাল্কা মেক-আপ। গাঢ় রঙা লিপস্টিক, স্মোকি বা গ্লিটারিং চড়া আই মেক-আপ তোলা থাক রাতের জন্য। |
|
শুধু ত্বক ঝকঝকে হলেই তো হল না, সঙ্গে চাই ঝলমলে, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলও। শর্মিলা এবং রীতা দু’জনেই জানাচ্ছেন, ঘরোয়া যত্ন নেওয়া উচিত সারা বছরই। ত্বকের মতো চুলও রোজ পরিষ্কার করা জরুরি। পাশাপাশি, নিয়মিত তেল গরম করে মাথায় মেখে, গরম তোয়ালে জড়িয়ে টারবান থেরাপির পরে চুলের ধরন অনুযায়ী ভাল শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে কন্ডিশনার বা সিরাম লাগিয়ে বাড়িতেই যত্ন নেওয়া যায়। রোদে বেরোলে চুল ঢেকে রাখাও জরুরি বলে জানালেন তাঁরা। শহরের একটি সালোঁ চেনের তরফে মৌসুমী মিত্র বলেন, “পুজোর মাসখানেক আগেও এ বার কড়া রোদ। যখন-তখন বৃষ্টি পড়ছে। আর্দ্র আবহাওয়ায় চুল ঠিক রাখতে হেয়ার স্পা এবং ময়শ্চারাইজিং জরুরি। চুল পড়া এবং খুশকির সমস্যা এখন ঘরে-ঘরে। সমস্যাটা চুলের নাকি মাথার ত্বকের, তা বুঝে এখন থেকেই স্ক্যাল্প ট্রিটমেন্ট কিংবা স্পা করালে রেহাই মিলবে। পুজোয় চুল থাকবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।” আর এক নামী সালোঁ চেনের তরফে সুজিত ভগৎ বললেন, “চুল পড়া রুখতে অ্যান্টি হেয়ারফল ট্রিটমেন্ট, চুলের গোড়া স্পা ইত্যাদি করানো যায়। খুশকি দূর করতে বাড়িতেই চুলে টক দই এবং মধুর মিশ্রণ লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ভাল অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু দিয়ে চুলটা ধুয়ে নিতে পারেন যে কেউ। মাথায় গরম তেল মেখে এক ঘণ্টা রাখার পরে কিছুক্ষণ গরম তোয়ালে জড়িয়ে রেখে শ্যাম্পু করলেও ফল পাবেন। তবে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া জরুরি।”।
পুজো মানে চুলের নতুন কায়দাও। সুজিতের মতে, এ বার মেয়েদের লম্বা চুলে ফ্রন্ট লেয়ার বা ফ্রিঞ্জ, কর্পোরেট লুকের জন্য পোকার স্ট্রেট, রেজার কাট এবং ছোট চুলে ওয়েজ কাট চলছে ভাল। ফ্যাশন সচেতন ছেলেরা আনইভেন কাট এবং অন্যরা ব্যালেন্স কাট কাটতে পারেন। মৌসুমী জানালেন, মেয়েদের ক্ষেত্রে চাহিদা রয়েছে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ লুকের লেয়ার্ড গ্র্যাজুয়েশন ছাঁটের। এখনকার ট্রেন্ড চুলের পিছনের দিকের দৈর্ঘ্য একই রেখে সামনেটা ফ্রিঞ্জ বা লেয়ার করা। ফ্রিঞ্জে দেখতেও কমবয়সী লাগে। তবে তাঁর পরামর্শ, চুল স্ট্রেট করালে এই ধরনের কোনও কায়দা না করানোই ভাল। ছেলেদের ক্ষেত্রে এ বার সোবার কাটিং, সামনে ফ্রিঞ্জেরই কদর বেশি। বড় চুল ফ্যাশনে নেই। তবে ঢেউ খেলানো চুল হলে কাঁধ অবধি রাখা যেতেই পারে, জানালেন মৌসুমী। আর চুলে রং করার ক্ষেত্রে দু’জনেই বলছেন হাইলাইটের ফ্যাশন চলে গিয়েছে। ফিরেছে লো লাইটিং (শুধুমাত্র রোদে বোঝা যাবে) বা পুরো চুলে একটাই গাঢ় রং বা গ্লোবাল কালারের চল।
কিন্তু ত্বক বা চুল, দুয়েরই ঔজ্জ্বল্য অনেকটা নির্ভর করে খাওয়াদাওয়ার উপরেও। হজমের সমস্যা থাকলে এক দিকে যেমন চুলের স্বাস্থ্যহানি ঘটে, ত্বকও হারায় তার স্বাভাবিক জেল্লা। তা ছাড়া, পুজোর কয়েক দিন যখন খুশি ইচ্ছেমতো খাওয়াদাওয়ায় পেটের উপরে অত্যাচারও হয় যথেষ্টই। তাই পুজোর আগে খাওয়াদাওয়ার দিকটাতেও নজর দেওয়া জরুরি। ডায়েটিশিয়ান রনিতা ঘোষ যেমন জানাচ্ছেন, পুজোর আগে হাল্কা, সহজপাচ্য প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া ভাল। তা পেটের গোলমাল কমিয়ে ত্বক বা চুলও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে। কার্বোহাইড্রেট বা আমিষের পাশাপাশি ভিটামিন বা মিনারেলের জন্য ফল বা সব্জিও খেতে হবে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল ত্বককে ভাল রাখে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও গড়ে তোলে। মুসাম্বি বা কমলালেবু না পেলে দিনে একটা পাতিলেবুর রস খাওয়া যেতে পারে। খাওয়া যায় আমলকীও। রণিতা বলেন, “এখন সকলেই স্লিম এবং ফিট থাকতে পছন্দ করেন। তরমুজ বা পেঁপের মতো লালরঙা ফল ফ্যাট কমায়। এগুলির পুষ্টিগুণও যথেষ্ট বেশি। রোজকার ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট এবং তেল ও ফ্যাটজাতীয় খাবারের পরিমাণ কম রাখা, কোল্ড ড্রিঙ্ক কম খাওয়া, দিনে দু’একটা ফল, টক দই, হাল্কা ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজও মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। আর পুজোয় উজ্জ্বল থাকতে হলুদ দিয়ে রান্না করুন। তা ত্বকে জেল্লা আনবে।”
সুস্থ শরীরে পুজোর চার দিনই আনন্দে কাটাতে চান যাঁরা, তাঁদের জন্য ডায়েটিশিয়ান সুনন্দা ঘোষের পরামর্শ, “পুজোয় বাইরে খাওয়াদাওয়া হবেই। তবে বাইরের খাবার কেনার আগে দোকানটা পরিচ্ছন্ন কি না খেয়াল রাখা জরুরি। এই ক’দিন প্রচুর ঘোরাঘুরির পাশাপাশি রাত জাগাও বেশি হয়। তাই বেশি ভাজাভুজি না খেয়ে একটু স্বাস্থ্যকর পদ বাছলে পেটের সমস্যা হবে না। দুপুরে ভারী খাওয়াদাওয়া হলে, রাতে ডিনারটা হাল্কা থাক, রাতে ভূরিভোজ হলে সকালে হাল্কা ব্রেকফাস্ট। তা হলেই ফিট্ থাকা যাবে।”
হাতে আর মাত্র ক’টা দিন। এখন থেকেই শুরু হয়ে যাক না প্রস্তুতি। ঝলমলে হয়ে ওঠার টিপ্সও হাতের মুঠোয়। এ বার পুজোয় নজর কাড়ছেন আপনিই। |
|
|
|
|
|