|
|
|
|
|
|
|
...গন্ধ এসেছে |
সঙ্কটে শিল্পী
শান্তনু ঘোষ |
|
পলিথিনের ছাউনি দেওয়া স্টুডিওয় টিমটিম করে জ্বলছে আলো। টুলের উপরে রাখা রেডিওয় বাজছে হিন্দি গান। গানের তালে মাথা দুলিয়ে অসুরের বুড়ো আঙুল তৈরিতে ব্যস্ত এক শিল্পী। ঢুকে এ-দিক, ও-দিক তাকাতেই প্রতিমার পিছন থেকে বেরিয়ে এলেন মাঝবয়সী এক ভদ্রলোক। প্রশ্ন করলেন, ‘‘বায়না করবেন? এ বার দাম একটু বেশি।’’
কেন? মুচকি হেসে, হাতে-পায়ে কাদা মাখা ওই ভদ্রলোক জানালেন, চড়া সুদে টাকা ধার নিয়ে ঠাকুর গড়তে হচ্ছে। প্রতিমাও এ বার অনেক কম তৈরি হয়েছে। দাম না বাড়ালে বিক্রি করে লাভ হবে না। একই কথা জানালেন অন্য শিল্পীরাও। এ চিত্র হাওড়ার কুমোরটুলি প্রসস্থের।
মুম্বই রোডের অঙ্কুরহাটি মোড় থেকে মাকড়দহ-আন্দুল বাইপাস রোড ধরে একটু এগোলেই চোখে পড়ে সরু রাস্তার ধারে বাঁশের খুঁটির উপরে টালি, পলিথিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি স্টুডিও। ভিতরে সার দিয়ে দুর্গা প্রতিমা। এটি মহিয়াড়ি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন। |
|
বৃষ্টি হলেই মাথায় হাত পড়ে এখানকার মৃৎশিল্পীদের। টালির বা পলিথিনের ফুটো দিয়ে জল পড়ে ঠাকুর ভিজে যায়। স্টুডিওয় হাঁটু জল জমে যায়। শিল্পী বিশ্বনাথ চিত্রকর বলেন, “বৃষ্টি নামলে ঠাকুর গড়া বন্ধ করে জল আটকাতে হয়।” রাস্তায় আলো নেই। অপরিসর রাস্তায় প্রতিমা বার করাও সমস্যার। প্রায় ৪০টি পরিবার বাস করেন। আগে এ সময়ে কৃষ্ণনগর থেকে অনেক কারিগর আসতেন। কিন্তু এখন আসেন কয়েক জন। শিল্পী শিবানী পাল (চিত্রকর) বললেন, “বেশি অর্থ পান বলে কারিগররা ভিন্ রাজ্যে চলে যাচ্ছেন।” মৃৎশিল্পীদের ক্ষোভ, কলকাতার কুমোরটুলিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও এ অঞ্চল আজও অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। সাংসদ, বিধায়ক ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বহু বার আবেদন করেও কিছু হয়নি। তাঁরা জানালেন, আগে যে স্টুডিওয় ৪০টি প্রতিমা তৈরি হত এখন সেখানে মাত্র ১৫-২০টি তৈরি হয়। শিল্পী অঞ্জন পাল (চিত্রকর) বলেন, “কাঁচামালের দাম কয়েক গুন বেড়েছে। |
|
কিন্তু প্রতিমার দাম বাড়ালেই উদ্যোক্তারা বিমুখ হচ্ছেন। ফলে তেমন লাভ হচ্ছে না।” তা ছাড়া শিল্পীদের অভিযোগ, প্রসস্থ ছাড়াও কয়েকটি জায়গায় প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। দাম কম বলে অনেকে সেখান থেকে প্রতিমা কিনছেন। দাম বাড়লেও শিল্পীরা কোনও সরকারি অনুদান পাননি। এ বার অনেকে আগে থেকে প্রতিমা তৈরি করেননি। লোকসানের ভয়ে অর্ডারও নিয়েছেন বুঝেশুনে, জানালেন শিল্পী বিজু চিত্রকর। শিল্পী গণেশ চিত্রকরের আক্ষেপ, “চড়া সুদে টাকা ধার নিতে হয়। ধার শোধ করে নিজেদের পেট তো চালাতে হবে। তাই প্রতি বছর ১০-১২টি থিমের ঠাকুর করলেও এ বার করছি মাত্র ৪টি।”
|
চলতি দর |
|
২০১০ |
২০১১ |
এঁটেল মাটি (বড় লরি পিছু) |
৪২০০ টাকা |
৪৯৫০ টাকা |
পলি মাটি(বড় লরি পিছু) |
১৮০০ টাকা |
২৬০০টাকা |
বাঁশ (প্রতি পিস) |
৮৫ টাকা |
১২০ টাকা |
খড় (আঁটি প্রতি) |
১৮ টাকা |
২৩ টাকা |
|
|
ছবি: রণজিৎ নন্দী |
|
|
|
|
|