|
|
|
|
প্রকল্প নিয়ে জট কাটাতে মমতা-সজ্জন জিন্দল বৈঠক আজ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
অবশেষে জল্পনার অবসান। শালবনিতে প্রস্তাবিত ইস্পাত প্রকল্পের জমি-জট খুলতে আজ, শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন জিন্দল গোষ্ঠীর কর্ণধার সজ্জন জিন্দল। সব কিছু ঠিকঠাক চললে, এ দিন দুপুর তিনটে নাগাদ মহাকরণে এই বৈঠক হওয়ার কথা। সেখানে উপস্থিত থাকার কথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও।
রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই আলোচনা নিয়ে জল্পনা হয়েছে বিস্তর। এবং প্রকল্পের জন্য সংস্থার সরাসরি কেনা ২৯৪ একর জমি নিয়ে ঊর্ধ্বসীমা আইনে সমস্যা দেখা দেওয়ার পর তা আরও জোরালো হয়েছে। পূর্বতন বাম সরকার যে জিন্দলদের ঠিক ভাবে জমি দেয়নি, সম্প্রতি তা স্পষ্ট বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রকল্প দ্রুত এগোনোর কথা বার বার বলেছে তাঁর সরকারও। যেমন শুক্রবারই শিল্পের জন্য গঠিত কোর কমিটির বৈঠক শেষে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, “এই প্রকল্পের কাজ যেন দ্রুত এগোয়, প্রশাসনিক দিক থেকে তা সুনিশ্চিত করতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা সচেষ্ট। তবে রাজ্য সরকারও চায় যে, অন্তত প্রথম পর্যায়ের কিছুটা কাজ শুরু করুক জিন্দল গোষ্ঠী।”
প্রয়োজনে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে তিনি নিজে যাবেন বলেও জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, জিন্দলদের এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন মোট ৪,৩৩৪ একর জমি। এর মধ্যে ৩,০৩৫ একর খাস জমি। ৭৯৯.৯৭ একর জমি প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের কাছ থেকে নিয়ে সংস্থাকে দিয়েছে রাজ্য। ১৮৯.৬২ একর জমি পাট্টা-মালিকদের থেকে কিনে
নেয় রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম। আর ২৯৪ একর জমি সরাসরি কিনে নেয় সংস্থা।
সমস্যার সূত্রপাত এই ২৯৪ একর জমি ঘিরেই। কারণ জমির ঊর্দ্ধসীমা আইন অনুযায়ী, শিল্পের জন্য ২৫ একরের বেশি জমি রাখতে ১৪ ওয়াই ধারায় আবেদন করতে হয়। এবং তা করে অতিরিক্ত জমি রাখার জন্য ভূমি দফতরের আগাম অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু ভূমি দফতর জানিয়েছিল, ২৯৪ একর জমি কেনার আগে প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেয়নি সংস্থা। ফলে আটকে রয়েছে জমির লিজ চুক্তি।
সম্প্রতি এই জট কাটার সম্ভাবনা তৈরি হয় দু’পক্ষের আলোচনার পরই।
প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়, আইনি পথে হেঁটে বিতর্কিত জমি প্রথমে খাস করে নেবে রাজ্য সরকার। তার পরে সেই জমি হাতে পাওয়ার জন্য তাদের কাছে আবেদন করবে সংস্থা। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস রাজ্য দিয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন
সংস্থা কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু গোড়াতেই তাঁরা ১৪ ওয়াই ধারায় আবেদন করেননি কেন? এ প্রসঙ্গে এ দিনও জিন্দল স্টিলের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, ২০০৭ সালেই এই আবেদন জানানো হয়েছিল। ২০১০ সালে ওই আবেদনই ফের জমা দিতে বলে রাজ্য সরকার। এবং তা করাও হয়েছিল। কিন্তু তার পর থেকে বিষয়টি আর এগোয়নি। প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ভোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় তখন বিষয়টি আর এগোয়নি।
বিনিয়োগ ঘোষণার মাধ্যমে রাজ্যে পা রাখার পর থেকেই বারে বারে বাধার মুখে পড়েছে জিন্দলদের ইস্পাত শিল্প। ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর শিলান্যাস করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু তার থেকেও বড় হয়ে ওঠে প্রকল্পের অদূরেই মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা। এর পর আর্থিক সমস্যা তৈরি হয় বিশ্ব জোড়া মন্দার জেরে। কারণ, তখন মন্দা ও ইস্পাতের পড়তি চাহিদার কারণে প্রকল্পের জন্য ব্যাঙ্ক ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এই সব কিছুর পরে আবার তৈরি হয় জমি-জট। আজকের বৈঠকের পর এই সব বাধা পেরিয়ে অবশেষে প্রকল্পের কাজে গতি আমদানি করা সম্ভব হবে বলেই শিল্প দফতর সূত্রে দাবি। |
|
|
|
|
|