আরামবাগে ব্যাহত গ্রামোন্নয়ন
১৩টি পঞ্চায়েত থেকে ইস্তফা ২৭ সদস্যের
রামবাগ মহকুমার ১৩টি পঞ্চায়েতে নতুন সঙ্কট।
সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে ওই পঞ্চায়েতগুলি থেকে সব মিলিয়ে তিন জন উপপ্রধান-সহ ২৭ জন সদস্য পদত্যাগ করেছেন। সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসনে তাঁদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে। এ ছাড়াও, আরও তিনটি পঞ্চায়েত থেকে এক প্রধান-সহ ৬ সদস্য পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই সিপিএম-তৃণমূল আকচা-আকচির জেরে মহকুমার ৬৩টি পঞ্চায়েতের বেশির ভাগেই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। তা পুরোপুরি কাটার আগেই এই নতুন সঙ্কটে গ্রামোন্নয়নের কাজ ফের ব্যাহত হচ্ছে।
মহকুমার সব পঞ্চায়েতই বামেদের দখলে রয়েছে। ইতিমধ্যে খানাকুলের ৪টি পঞ্চায়েত থেকে এক উপপ্রধান-সহ ৯ জন, পুড়শুড়ার তিনটি পঞ্চায়েত থেকে ৯ জন, আরামবাগের চারটি পঞ্চায়েত থেকে এক উপপ্রধান-সহ ৭ জন এবং গোঘাটের দু’টি পঞ্চায়েত থেকে এক উপপ্রধান-সহ দু’জন পদত্যাগ করেছেন। এ ছাড়াও, খানাকুল-১ ব্লকের তাঁতিশাল পঞ্চায়েতের প্রধান মুন্সি জামাল হোসেন এবং পুড়শুড়া ও আরামবাগের দু’টি পঞ্চায়েত থেকে পাঁচ সদস্য পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্লক অফিসে।
পদত্যাগের কারণ হিসাবে বিভিন্ন পঞ্চায়েতের সদস্যেরা অসুস্থতা, শিক্ষকতার জন্য সময় না দিতে পারা ইত্যাদি নানা ব্যক্তিগত কারণ লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। খানাকুল-১ পঞ্চায়েত থেকে সদ্য পদত্যাগী উপপ্রধান বিশ্বজিৎ কুণ্ডু বলেন, “আমি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। সেখানে শিক্ষকতা করে পঞ্চায়েতের কাজকর্ম দেখার সময় পাচ্ছি না। তাই ইস্তফা দিয়েছি।”
বিশ্বজিৎবাবুরা পদত্যাগের পিছনে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখালেও তাঁদের দল সিপিএম দুষেছে তৃণমূলকে। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূলের ‘হুমকি’ এবং ‘কাজ করতে না দেওয়া’র জন্যই বিভিন্ন পঞ্চায়েত থেকে তাদের সদস্যেরা ইস্তফা দিচ্ছেন। আরামবাগের সিপিএম নেতা বিনয় দত্ত বলেন, “বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই তৃণমূল এখানাকর বহু পঞ্চায়েতে আমাদের কাজ করতে দিচ্ছে না। বিভিন্ন মাস্টার রোল কিংবা বেআইনি কাজে জোর করে সই করতে বাধ্য করাচ্ছে। দুর্নীতিতে ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কায় আমাদের পঞ্চায়েত সদস্যদের পদত্যাগ করতে হচ্ছে।” তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য সিপিএমের এই অভিযোগ মানেনি। তৃণমূলের তরফে মহকুমার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তথা চুঁচুড়ার বিধায়ক তপন মজুমদার বলেন, “সিপিএম আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে। আসলে নানা দুর্নীতি ধরা পড়ার আশঙ্কায় বিভিন্ন পঞ্চায়েত থেকে সদস্যেরা ইস্তফা দিচ্ছেন।”
সংশ্লিষ্ট ব্লকগুলির বিডিও-রা জানিয়েছেন, পদত্যাগের প্রকৃত কারণ জানতে শুনানির ব্যবস্থা হয়েছে। দেখা হচ্ছে, চাপে পড়ে কেউ পদত্যাগ করছেন কিনা। শুনানির পরেই পদত্যাগপত্র গৃহীত হচ্ছে। তা জেলা পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন দফতরে পাঠানো হয়েছে। ৬ মাসের মধ্যে ফাঁকা সংসদগুলির জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করার কথা ওই দফতরের।
কিন্তু তত দিন পর্যন্ত গ্রামোন্নয়নের কাজ কী ভাবে হবে, তা নিয়ে চিন্তায় গ্রামবাসীরা। কেননা, বন্যা পরিস্থিতির কারণে ইতিমধ্যেই খানাকুলের ২টি ব্লক এবং আরামবাগ ও গোঘাটের বহু চাষজমি নষ্ট হয়েছে। ভেঙেছে বহু মাটির বাড়ি, রাস্তাঘাট, সােঁকা, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। উপচে গিয়েছে পুকুর। অকেজো হয়ে পড়েছে পানীয় জলের কল। এই সব সমস্যা দূর করতে পঞ্চায়েতগুলির দ্রুত এগিয়ে আসা জরুরি। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “বিভিন্ন পঞ্চায়েত থেকে সদস্যেরা ইস্তফা দেওয়ায় গ্রামোন্নয়নের কাজ ব্যাহত হচ্ছে ঠিকই। জেলাশাসককে সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। ওই সংসদগুলিতে নির্বাচনের দিন ক্ষণ জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর ঠিক করবে। আপাতত, প্রধানদের বাড়তি দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে। পুড়শুড়ার কিছু এলাকায় বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতায় কাজ চালাচ্ছে পঞ্চায়েত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.