মনোরঞ্জন...
শারদ মজলিশ

‘এসেছি আবার ফিরে সেখানেই
অচেনা পথের চেনা ঠিকানা
তোমার শহর চেনে না আমায়,
বাহানা খোঁজার খোঁজে বাহানা’


বাইরে শরতের মেঘমুক্ত রাত। আকাশ ঝিলমিল করছে তারায় তারায়। নারকেল গাছগুলোর ওপর পিছলে যাচ্ছে চাঁদের আলো। আর ঘরের ভেতর মায়াবী ল্যাম্পশেডের আলোয় ভেসে বেড়াচ্ছে গান, সুর। কথা আর সুর মিলিয়ে সে এক অপার্থিব প্রহর। হারমোনিয়াম বাজিয়ে শ্রীকান্ত আচার্য যখন একের পর এক বাংলা গজল গেয়ে সুরের নেশায় আচ্ছন্ন করে ফেলছেন, তখন একটা কথাই মনে হয়েছিল, বাংলা ভাষায় কেন এত দিন গজল লেখা হল না? সেই কবে নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন, “বুলবুলি নীরব নার্গিস বনে’, অথবা, ‘আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন দিল ওহি মেরা ফস গয়া’। তার পর কেটে গেল কত দিন। সে সব এখন স্মৃতি। আর কেউ গজল লিখলেন না।
সেই আক্ষেপ কাটতেই পারে এ বার পুজোয়। শরতের মেহফিলে।
কী ভাবে হঠাৎ শ্রীকান্ত গজলে মজলেন?
এরও একটা ভূমিকা আছে।
বছর দু’য়েক আগে এক অনুষ্ঠানে মেহেদি হাসানের গাওয়া ‘গুলশন গুলশন শোলা-এ-গুল কি’ গজলখানি গেয়েছিলেন শ্রীকান্ত। সেই গান শুনে পরদিন কবি শ্রীজাত এসএমএস করেছিলেন শ্রীকান্তকে--“আজকাল তো কেউ আর গজল গায় না। তোমার মুখে গজল শুনে খুব ভাল লাগল।”
এই ঘটনার এক বছর বাদে শ্রীজাতের কাছে হঠাৎ একদিন শ্রীকান্তের ফোন, “গজলের মূল ফর্ম্যাটটা রেখে যদি বাংলায় গান লেখা হয়, আর সে গান যদি তুমি লেখো, কেমন হয়?” শ্রীজাত তৎক্ষণাৎ রাজি। কবিতা আর গান নিয়ে ক্রমাগত পরীক্ষানিরীক্ষা করে চলাটাই তো তাঁর হালের নেশা। তাঁর লেখা গানের রূপক-উপমাই তো নাড়িয়ে দিয়েছে শ্রোতাদের ‘চল রাস্তায় সাজি ট্রামলাইন/ আর কবিতায় শুয়ে কাপলেট।’ এ হেন শ্রীজাত যে গজল লেখার সুযোগ লুফে নেবেন এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু সুর করবেন কে? “একটু ভাবতেই নামটা মনে এসে গেল,” বলছেন শ্রীকান্ত, “আমার বহু গানেই সুর দিয়েছে যে, সেই জয় সরকার। আমার জনপ্রিয় গান ‘পৃথিবীর ছবি’ কিংবা ‘বৃষ্টি তোমায় দিলাম’এ সবের সুরকারই তো জয়।”
সুতরাং গায়ক শ্রীকান্ত আচার্য, কবি শ্রীজাত আর সুরকার জয় সরকারএই তিন জনে মিলে তৈরি হল বাংলা গজলের গোটা অ্যালবাম। ‘মুসাফিরানা’।
তিন শিল্পীর অদম্য বাসনায় শুরু হল গান বাঁধার পালা। “একটার পর একটা গান লেখা হয়েছে, সুরে বাঁধা হয়েছে। গজলের কথা খুঁজতে, সুর খুঁজতে আমি, জয়, আর শ্রীজাত তিন জনেই মুসাফিরের মতোই ঘুরে বেরিয়েছি,” বলছিলেন শ্রীকান্ত।
তিন মুসাফিরের সেই খোঁজের ফসলে কোথাও উঠে এসেছে নারীপুরুষের আলোছায়া-মাখা প্রেম, অভিমান, বিরহ; কোথাও রয়েছে জীবনের প্রতি নিরাসক্তি, ঔদাসীন্য; কোথাও বা দৈনন্দিন বেঁচে থাকার পেলব অনুভূতি। এমনকী বিচ্ছেদের অনুভবের মধ্যেও ত্রয়ী পেয়েছেন এক অদম্য পিছুটান। আর জয়ের সুরে সে সব কথা অন্য মাত্রা পেয়েছে শ্রীকান্তের গলায়, “রাখা থাক রাস্তা, দুপুর বেকরারি/কোনও দিন হয়তো ফিরেও আসতে পারি।”
উর্দু-বাংলার বেমিশাল মিশেল। আর তার মধ্যে উঠে আসা চিরন্তন জীবনের টুকরো-টুকরো ছোঁয়াযার মূলে আছে একটাই বিশ্বাসপুরোপুরি বিচ্ছেদ বলে কিছু নেই। একেকটা গান হয়ে উঠেছে জীবনের দিকে বারবার ফিরে তাকানোর হাতছানি। আবার জীবনের ভেতরে থেকে তাকে ছাপিয়ে যাবার উড়ানও। “আসলে এটাকে শ্রীকান্ত-শ্রীজাত-জয়এই ত্রয়ীর সম্মিলিত প্রচেষ্টা হিসেবেই দেখতে চাইছি আমরা। এখানে কেউই একে অপরের থেকে এগিয়ে নেই,” বলছেন শ্রীকান্ত।
এই মুহূর্তে শ্রীকান্ত আচার্য, শ্রীজাত আর জয় সরকার তিন জনেই খুব তৃপ্ত। ‘মুসাফিরানা’ করতে গিয়ে গজল গানের নতুন একটা ভাষা ও সুরের সঙ্গে জড়িয়ে রইল তাঁদের অভিজ্ঞতা। ইন্ডাস্ট্রিতে এতটাই পেশাদারিত্ব এখন যে সহজে সুরকার-গীতিকার-গায়কেরা আন্তরিক হতে পারেন না। জয় বললেন, “গীতিকার, সুরকার, গায়ক সবাই মিলে এক হলে এমন কাজ সচরাচর হয়ে থাকে। সব চেয়ে খুশি হয়েছি এটা ভেবে যে, কী সুন্দর একটা বন্ধুত্ব গড়ে উঠল, আদানপ্রদান হল আমাদের মধ্যে এই কাজ করতে গিয়ে। ‘মুসাফিরানা’র সব চেয়ে বড় পাওনা এটাই।”
এ বার পুজোয় ওরিয়ন এন্টারটেনমেন্টের পরিবেশনায় এ গান বাজলে বুঝতে হবে বাঙালির সঙ্গীত রুচি নতুন বাঁক নিচ্ছে। সেই সঙ্গে বাংলা গানও পাবে নতুন বাঁক।

গজলে বাংলা ছোঁয়া

দু’টি করে পংক্তি জুড়ে জুড়ে একখানা পরিপূর্ণ গজল তৈরি হয়। দু’লাইনের কাপলেটকে বলা হয় ‘শের’। ‘শের’গুলি আলাদা করে বের করে আনলেও কবিতার মতোই গভীর মানে দাঁড়ায়, এটাই হল গজল রচনার প্রাথমিক নিয়ম। শ্রীজাত বললেন, “গজলের সেই নিয়ম ও ভাব ধরেই বাংলা গজলগুলি লিখেছি।” অন্য দিকে জয় সরকার গজলে সুর দিয়েছেন জগজিৎ সিংহের ঘরানা মেনে। কারণ জগজিতের গজল খুব বেশি করে সাধারণ মানুষের মন ছুঁয়ে যায়। মুখে মুখে ফেরে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.