সরকারি স্কুলে ‘স্বীকৃতিহীন’ তিন শিক্ষক
তাঁরা সরকারি স্কুলেই পড়ান। কিন্তু বৈধ কোনও স্বীকৃতি নেই। সংখ্যায় তিনজন। এঁরা কি কারও হয়ে প্রক্সি দিচ্ছেন? না, পুরোপুরি তা-ও নয়। চন্দ্রনাথপুর মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতিই তাঁদের নিয়োগ করেছে। সরকারি পদের অতিরিক্ত বলে পরিচালন সমিতিই বেতন জোগায়। মাথাপিছু পাঁচশো থেকে হাজার টাকা। যে মাসে যেমন সংগ্রহ। সমিতির সদস্যরা নিজেদের পকেট থেকে কিছু কিছু দিয়ে থাকেন। বাকিটা শিক্ষণসামগ্রী কেনা-সহ বিভিন্ন তহবিল থেকে সরিয়ে রাখা অর্থ।
ব্যাপারটা কতটা বৈধ তা নিয়ে প্রশ্ন করলে প্রধান শিক্ষক মৌসম দত্ত জানান, স্কুলের পড়ুয়াদের কথা ভেবেই তিনজনকে রাখা হয়েছে। তাঁর দাবি, মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ রোজগার নিশ্চিতকরণ যোজনার (এমএনরেগা) তহবিল থেকে ওই তিন বেসরকারি শিক্ষককে বেতন দেওয়া হোক। প্রধান শিক্ষকের যুক্তি, দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী প্রতিটি পরিবারে অন্তত একজনের বছরে একশো দিনের কাজের ব্যবস্থা করতেই এই যোজনা। তাঁর স্কুলে বেসরকারি ভাবে নিযুক্ত বিপ্লব ভট্টাচার্য, পম্পি চন্দ ও সুমিতা ধরতিন জনই দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী। তাঁর প্রশ্ন, “শিক্ষিত বেকার বলে এঁদের কি কাজের ব্যবস্থা হবে না?” পাশাপাশি তাঁর পরামর্শ দেন, এই তিনজনকে যে হেতু মাটি কাটার কাজে লাগানো সম্ভব নয়, তাই শিক্ষকতার কাজে লাগিয়েই বছরে একশো দিনের মজুরি দেওয়া হোক।
পরিচালন সমিতির সভাপতি চন্দ্রনাথপুরের গ্রামপ্রধান গণেশ সিংহ ছেত্রী অবশ্য তাঁর এই প্রস্তাব শুরুতেই নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি জানান, মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ রোজগার নিশ্চিতকরণ যোজনাটি জাতীয় গ্রামীণ রোজগার নিশ্চিতকরণ আইনের অন্তর্ভুক্ত। ওই আইনে এই ধরনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই।
তবে কেন এমন শিক্ষক নিয়োগ? ছেত্রীর যুক্তি, বিদ্যালয়টিতে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণি মিলিয়ে এ সময়ে ২৪৪ জন ছাত্র। শিক্ষকসংখ্যা মাত্র তিন। এর মধ্যে বিজ্ঞানশিক্ষক মৌসমবাবু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, যাঁকে মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা-সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। বাকি দুজনের মধ্যে দেবচন্দ্র সিংহ অসমিয়া বিষয়ের শিক্ষক। তিনি আবার দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থও। তাঁর পক্ষে স্কুলে আসা প্রায় সম্ভবই হয় না। বাকি রইলেন শুধু রীতা দেব। এই পরিস্থিতিতে এলাকার ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে পরিচালন সমিতি ওই তিন জনকে নিযুক্তি দিয়েছে। কাছাড়ের অতিরিক্ত জেলাশাসক দেবাশিস চক্রবর্তী বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন, ভাতা, ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও মন্তব্যে যাননি। তবে তাঁর আশার, শিক্ষক-সমস্যা শিগগিরই মিটে যাবে। রাজ্য জুড়েই ৩৫ ছাত্রপিছু এক শিক্ষক প্রদানের লক্ষ্যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যে সব স্কুলে আনুপাতিক হারের চেয়ে বেশি শিক্ষক রয়েছেন, সেখান থেকে অতিরিক্ত শিক্ষকদের বদলি করা হবে। সঙ্গে রাজ্যে নিযুক্তি পাবেন আরও ৪০ হাজার শিক্ষক। একই কথা বলেন স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক রুমি নাথও।
সে ক্ষেত্রে এই তিন বেসরকারি শিক্ষকের কী হবে? জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক নিবারণচন্দ্র দাস জানান, এ জন্যই এ ধরনের নিয়োগ অবৈধ। সরকার আইনত এঁদের কোনও দায়দায়িত্ব নিতে পারে না। নতুন শিক্ষক নিয়োগের সময় এঁদেরও রীতিমাফিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আবেদনপত্র জমা দিয়ে পরীক্ষায় বসতে হবে। নির্বাচিতদের তালিকার নিজের স্থান পাকা করে নিতে পারলে তবেই চাকরি জুটবে। গণেশবাবু অবশ্য এতটা নির্দয় নন। তিনি বলেন, হোক না অবৈধ, নতুন নিযুক্তি প্রক্রিয়ায় বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির কোনও ভূমিকা থাকলে তাঁদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আর স্পষ্ট ভূমিকা না থাকলে রাজনৈতিক স্তরে তাঁদের জন্য চাপ সৃষ্টি করবেন তাঁরা। ওই আশাতেই খেটে চলেছেন বিপ্লব, পম্পি, সুমিতা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.