ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বাংলাদেশ সফর দু’ দেশের মৈত্রীর বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করবে বলে জানালেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে মানিক সরকারও বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। তিনি জানান, গত বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যখন এসেছিলেন, সে সময়ে বেশ কিছু দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বিষয় আলোচিত হয়। সেগুলি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশেরই সদিচ্ছা রয়েছে, সফরকালে সেটা ভাল ভাবেই বোঝা গেল। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বাংলাদেশ সফরে পূর্ব-ঘোষিত নানান বিষয় নিয়ে যেমন আলোচনা ও চুক্তি হয়েছে, সে রকম বেশ কয়েকটি নতুন বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে সমঝোতায় পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে। এই সফরের ফলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বাড়বে বলেই ধারণা মানিকবাবুর।
তিস্তা নদীর জলবন্টন নিয়ে প্রত্যাশিত চুক্তিটি না হওয়ায় ফেনি নদীর জলবন্টন অথবা বাংলাদেশে মধ্যে দিয়ে পণ্য পরিবহণের জন্য ট্রানজিটের সুবিধা সংক্রান্ত কোনও চুক্তি না হওয়াকে বেশি গুরুত্ব দিতে রাজি নন মানিকবাবু। চুক্তিগুলি আদৌ হবে না, এ রকম কোনও ইঙ্গিত তিনি দেখতে পাননি। আগামী দিনে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, তার সমাধান হয়ে যাবে তিনি আশা করেন।
তিনি জানান, ভারত ও বাংলাদেশ তাদের সীমান্ত সমস্যা সমাধানে এ বার অনেকটা এগিয়েছে। চুক্তিও হয়েছে। ত্রিপুরার কমলপুর সীমান্তে চন্দননগর ও বিলোনিয়ার মহুরির চরের সমস্যা মিটতে চলেছে। সীমানা চিহ্নিত হয়ে গেলে সীমানা নির্দেশক স্তম্ভ দেওয়ার কাজ শুরু হবে। জিরো লাইন দিয়েই যাতে বেড়া দেওয়া যায় মহুরির চরে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ রাজি হয়েছে। এতে সীমান্তবর্তী এলাকার বহু মানুষ উপকৃত হবেন। শেখ হাসিনা ও মনমোহন সিংহের মধ্যে জঙ্গি সমস্যা নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ফের পরিষ্কার ভাষায় জানিয়েছে, কোনও জঙ্গি সংগঠনকে সে দেশের মাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকটি নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীর বাংলাদেশ-কেন্দ্রিক যে শিবির রয়েছে সে প্রসঙ্গও আলোচনায় উঠে আসে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিদের শিবিরের সংখ্যা আগের থেকে কমেছে ঠিকই, কিন্তু এখনও সে দেশে ২০টির মতো শিবির রয়েছে। এ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক তথ্য বাংলাদেশ সরকারকে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সঙ্গে আলাদা বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও হয়েছে বলে তিনি জানান। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আখাউড়া রাস্তা সংস্কারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার করা হবে বলে বাংলাদেশ সরকার তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এ পথ দিয়েই এ বার স্বদেশে ফিরেছেন।
বাংলাদেশের ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, এ বারের সফরের ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিনিয়োগের সম্ভাবনা আরও বেড়েছে। তা ছাড়া, বাংলাদেশের বেশ কিছু পণ্য ভারতে পাঠাতে এখন থেকে আর শুল্ক দিতে হবে না, ফলে ও দেশের ব্যবসায়ী মহলে দারুণ উৎসাহ দেখা দিয়েছে। আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগের কাজ দ্রুত শুরু হবে বলে তিনি আশা করেন। পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদন শুরু হলে ১০০ মেগাওয়াট বাংলাদেশকে দেওয়া যেতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন। কিন্তু সম্পূর্ণ বিষয়টি ভারত সরকারের মাধ্যমেই বাংলাদেশকে ঠিক করতে হবে, এটাও তিনি জানিয়ে এসেছেন।
এ বারের সফরে দুই প্রতিবেশী দেশ আরও কাছাকাছি আসার সুযোগ পেল বলে মনে করেন মানিকবাবু। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথার সময়ে তাঁকে ত্রিপুরা সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তিনি রাজ্য সফরে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। |