দুই মুখ্যমন্ত্রী সীমান্ত চুক্তির পাশে, বিরোধীরা সংঘাতে
সীমান্ত চুক্তিতে বাংলাদেশকে জমি হস্তান্তর নিয়ে অশান্ত অসম ও মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীরা আজ চুক্তির স্বপক্ষে মাঠে নামলেন।
তরুণ গগৈ ও মুকুল সাংমা দু’জনেই কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো তাঁদের এক কথায় চুক্তি নাকচ করে দেওয়ার উপায় নেই। কিন্তু দুই রাজ্যেই বিরোধী দলগুলি ‘আমাদের জমি বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে’ বলে সাধারণ মানুষের ভাবাবেগ উসকে দিতে চাইছে। গগৈ ও সাংমা এই সমস্যার কথা প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে জানিয়েছেন। কিন্তু বিরোধীরা যাতে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে না পারে, তাই আজ দু’জনকে দিয়েই চুক্তির স্বপক্ষে বলানো হয়েছে।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ আজ নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে যুক্তি দিয়েছেন, সীমান্ত চুক্তির ফলে ভারত পেয়েছে মোট ১২৪০ একর জমি, যেখানে বাংলাদেশের লাভ হয়েছে মাত্র ৩৫৭.৫ একর জমি। অন্য দিকে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা বাংলাদেশ সফর সেরে বিতর্কিত দউকি সীমান্ত দিয়েই রাজ্যে ফিরেছেন। তাঁর যুক্তি, “বাংলাদেশের হাতে থাকা বিতর্কিত ২৪০ একর জমি মেঘালয় পাচ্ছে। তার বদলে দিতে হচ্ছে ৪১ একর।” দু’জনেরই বক্তব্য, দুই দেশের সীমান্ত সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিনের জট খুলে গিয়েছে। এই স্থিতিশীলতাই কাম্য ছিল। যে জমি কার্যত বহু আগেই হাতছাড়া ও ভারতের কাজে লাগছে না, বিরোধী দলগুলি অকারণে তা নিয়ে অশান্তি তৈরি করছে।
কিন্তু আঞ্চলিক স্তরে আন্দোলনের পরে অসমের জমি চুক্তি নিয়ে কাল রাজধানী দিল্লিতে ধর্নায় বসছে বিজেপি। জমি দেওয়ার আগে সংসদ বা মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত করা হয়েছিল কি না, বা রাজ্যের বিধায়ক-সাংসদদের কেন্দ্র জানিয়েছে কি না, তা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন দলের সভাপতি নিতিন গডকড়ী। জমি হস্তান্তরের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই চার সদস্যের একটি স্টাডি গ্রুপ তৈরি করেছে দল, যারা সীমান্ত এলাকা ঘুরে সকলের সঙ্গে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করবে।
১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তিতে দেশভাগের সময়ের র্যাডক্লিফ লাইনকে প্রামাণ্য ধরেই ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত নির্ধারণ হয়। সীমান্তের দু’পারের মানুষেরই এতে আপত্তি ছিল। তাই ভারত ও বাংলাদেশ দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছে। এ বার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বাংলাদেশ সফরে সীমান্ত চুক্তি করে সেই সমস্যার পাকাপাকি সমাধানের চেষ্টা হয়েছে। তৈরি হয়েছে নতুন মানচিত্র। তাতেই দেখা দিয়েছে সমস্যা। তরুণ গগৈর রাজ্যে অসম গণ পরিষদ, বিজেপি, আসু-সহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও আলফা আন্দোলনে নেমেছে। অসমীয়া জাতিসত্তাকে উসকে দিয়ে তাঁদের অভিযোগ, এক দিকে সরকার ৪০ লক্ষ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর বিষয়ে চোখ বুজে রয়েছে, অথচ অসমের জমি বাংলাদেশকে ‘উপহার’ দেওয়া হচ্ছে। একই ভাবে মেঘালয়ের গ্রামবাসীরা রাষ্ট্রপুঞ্জের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
বিরোধীরা যে এই বিষয়টি নিয়ে সরব হবে, তা আগে থাকতেই আঁচ করতে পেরেছিলেন দুই নেতা। সফর চলাকালীনই তাঁরা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন। গগৈ-এর বক্তব্য, ঢাকার সব দাবির কাছে মোটেই মাথা নোয়ানো হয়নি। ঢাকার তরফে করিমগঞ্জের ৩৬০ একর জমি চাওয়া হয়েছিল, রাজ্য দিয়েছে মাত্র ৭০ একর। করিমগঞ্জের এলাকাটি একটি চা বাগানের অধীন। চা বাগানটির সঙ্গেও ভারত নয়, বাংলাদেশ সরকারেরই চুক্তি রয়েছে। ওই এলাকায় ২৬টি পরিবারের পাট্টা রয়েছে। তবে, তাদের কেউই গত পাঁচ দশকে ওই জমিতে চাষবাষ করেননি। ধুবুরির বরইবাড়ির ক্ষেত্রে তো জমিটি পুরোপুরি বাংলাদেশের হাতেই ছিল। অবশ্য গগৈর সাফাইয়ে গলছে না আসু। আজ থেকে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ সপ্তাহ পালন করবে তারা। চলবে পথ অবরোধ, অবস্থান বিক্ষোভ। অসমের ২৬টি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদদের প্রতিবাদে সামিল করা হবে।
জঙ্গি-সমস্যার সমাধানেও যে বাংলাদেশ তাঁদের সাহায্য করছে, তা জানিয়ে গগৈ বলেন, “বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি হয়ে গেলেই আলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ফিরিয়ে আনা হবে। অসম সমস্যা সমাধানে, শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য চেটিয়াকে চাই, এ কথা বাংলাদেশকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে।” আর মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, এত দিনের বিতর্কিত সীমান্ত এ বার সুসম্পর্কের প্রবেশপথ হতে চলেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.