মনমোহন-মমতা চিড় উস্কে দিয়ে আক্রমণ বিজেপির
তিস্তা চুক্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে , তা আরও উস্কে দিয়ে এ বার কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণে নামল বিজেপি।
সংসদের বাদল অধিবেশন শেষ হয়েছে কাল। সংসদের দুই সভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি ও সুষমা স্বরাজ আজ দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে সরকারের মধ্যে মতবিরোধকেই সুকৌশলে উস্কে দেন বিজেপি নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব, কংগ্রেসের সঙ্গে সরকারের বিরোধ, এমনকী শরিকদের সঙ্গে সরকারের সংঘাতের প্রসঙ্গটি টেনে এনে মনমোহন সিংহ সরকারকে বিপাকে ফেলতে চান বিজেপি নেতারা। সুষমা-জেটলিদের অভিযোগ, বাংলাদেশ যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী বিজেপি নেতাদের বৈঠকে ডাকলেও ভারতের ভূখণ্ড প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া নিয়ে কোনও আলোচনাই করেনি। আর এখন তো স্পষ্ট, শুধু বিরোধীরাই নয়, সরকারের শরিক দলগুলিকেও সঙ্গে নেয়নি মনমোহন সরকার।
অরুণ জেটলির বক্তব্য, “তিস্তা চুক্তি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই অন্ধকারে রেখে মনমোহন সরকার এগিয়ে যেতে চেয়েছিল। বিদেশ নীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকার নিজেদের মধ্যেই যুদ্ধ করছে। এমনকী, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে আসার পরেও আমাদের স্পষ্ট করে জানানো হয়নি সরকার আসলে কী কী চুক্তি করে এসেছে। দেশের সামনে গোটা চুক্তি ব্যাখ্যা করা উচিত প্রধানমন্ত্রীর।” সুষমা বলেন, “সরকার এমন ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করছে, যে আমাদের সায় নিয়েই তিনি বাংলাদেশ সফর করেছেন। কিন্তু যে দিন আমাদের সঙ্গে তিনি বৈঠকে বসেছিলেন, সে দিন এক ইঞ্চি জমি হস্তান্তর নিয়ে উচ্চবাচ্য করা হয়নি। ফলে আমাদের সমর্থনের প্রশ্নই উঠছে না। প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগেই সংসদের দুই সভার বিরোধী দলনেতা যৌথ বিবৃতি জারি করে আমরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলাম।” দলীয় স্তরে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী একটি গোষ্ঠীও গঠন করেছেন।
বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, সদ্যসমাপ্ত সংসদের অধিবেশনের গোড়াতে বিরোধীদের মধ্যে নানা বিষয়ে মতপার্থক্য দেখা গেলেও দিন যত গড়িয়েছে, ততই বিরোধীরা সংসদে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, আর সরকার ছত্রভঙ্গ হয়েছে। অণ্ণা হজারেকে নিয়ে সরকার যে সুরে কথা বলেছে, রাহুল গাঁধী তার ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন। অণ্ণা সঙ্কট মোকাবিলা করার জন্য পি চিদম্বরম, কপিল সিব্বল কঠোর অবস্থান নিলেও প্রণব মুখোপাধ্যায়, সলমন খুরশিদরা হেঁটেছেন ভিন্ন পথে। এমনকী, কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের সরকারের মন্ত্রীর বিরোধও প্রকট হয়ে উঠেছে। সংসদে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বিল পাশ হয়ে গেলেও কংগ্রেসের সাংসদরা মিলেই কপিল সিব্বলের ছ-ছ’টি বিল আটকে দিয়েছেন। আর সন্ত্রাস মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথা বলছেন, দিগ্বিজয় সিংহের মতো কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা সন্ত্রাসবাদীদের বাড়িতে গিয়ে তাঁদেরই হাত শক্ত করছেন।
সুষমার মতে, সরকারের বিরুদ্ধে রাশিরাশি দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ, অথচ সব দায় চাপানো হচ্ছে ইউপিএ শরিকদের ঘাড়ে। টু-জি কাণ্ডে যেন প্রধানমন্ত্রী ও চিদম্বরমের কোনও দায় নেই। দায় যেন শুধু এ রাজার। এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্নীতিও শুধু যেন প্রফুল্ল পটেলের। মূল্যবৃদ্ধির যাবতীয় দায় চাপানো হয়েছে শরদ পওয়ারের উপরে। অরুণ জেটলির কথায়, “একে সরকারের দুর্নীতি, তার উপর সরকারের এই পরস্পরবিরোধী মনোভাবের ফলে জনরোষ যে তীব্র আকার নিয়েছে, তা তিনটি ঘটনায় স্পষ্ট। এক, রামলীলা ময়দানে পুলিশি হামলার পরে মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে। অণ্ণা হজারের আন্দোলনেও যার প্রতিফলন হয়েছে। দুই, দিল্লিতে জঙ্গি হামলার পর রাহুল গাঁধী হাসপাতালে গিয়ে যে ভাবে আমআদমির কাছে হেনস্থা হয়েছেন, সেটা কংগ্রেসের কাছেও অশনি-সঙ্কেত। তিন, রাজ্যসভায় যখন বলেছিলাম, চিদম্বরম-সিব্বলের মতো আইনজীবীরা এখন প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিচ্ছেন, বিরোধীদের কাছ থেকে নয়, বেশি সাধুবাদ পেয়েছি কংগ্রেসের থেকেই। ফলে ইউপিএ সরকারের দিন যে ঘনিয়ে এসেছে, তা অনায়াসে বলা যায়।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.