কর্তৃত্ব প্রমাণের লড়াইয়ে ঝুঁকিই নিলেন আডবাণী
লালকৃষ্ণ আডবাণীর রথযাত্রায় সায় দিলেও এখনই বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী স্থির করতে নারাজ সঙ্ঘ নেতৃত্ব। বিজেপির একাংশের বক্তব্য, এই অবস্থায় তড়িঘড়ি রথযাত্রার ঘোষণা করে বড় ঝুঁকি নিয়েছেন আডবাণী।
আরএসএস সূত্রের মতে, দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের রূপরেখা ধরে আডবাণী রথযাত্রায় বেরোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দল ও সঙ্ঘ তাতে সায়ই দিয়েছে। কিন্তু এটাও ঠিক, পরের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির তরফে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী কে হবেন, তা চূড়ান্ত করার সময় এখনও আসেনি।
সঙ্ঘের মনোভাব জানার পরে অনেকেই মনে করছেন, রথযাত্রার কথা ঘোষণা করে আডবাণী বড় ঝুঁকি নিয়েছেন। বিজেপির সংসদীয় বোর্ডের সকলের সঙ্গে কথা না বলে শুধু দলের সভাপতি নিতিন গডকড়ীর সঙ্গে আলোচনা করে রথযাত্রার বিষয়টি গত কাল ঘোষণা করে দিয়েছেন আডবাণী। মনমোহন সিংহ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকে পুঁজি করে সরকার বিরোধিতার রাশ হাতে তুলে নিয়ে নিজেকে ‘প্রমাণ’ করাই এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ আডবাণীর কাছে। একই সঙ্গে দলের দ্বিতীয় সারির নেতাদের প্রতি তাঁর বার্তা, এখনই অবসর নেওয়ার প্রশ্ন নেই। বরং আশির কোঠা পেরিয়েও দলের বাকিদের তুলনায় তিনি অনেক সক্রিয়। এখনও তিনিই বিজেপির শীর্ষ নেতা।
আডবাণী নিজে অবশ্য বলছেন, “আমার এই যাত্রার সঙ্গে নির্বাচনের কোনও সম্পর্ক নেই। নির্বাচনে দলের নেতা কে হবেন, তার সঙ্গেও এটিকে যোগ করে দেখার কোনও অর্থ হয় না। কেউ তো আগে হাল ধরুন, পরে দেখা যাবে নেতা কে হচ্ছেন।” কিন্তু আডবাণীর রথযাত্রার ঘোষণার পরেই দলের অনেক নেতা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলি বা নরেন্দ্র মোদীকে ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান, এমন অনেকেই আডবাণীর সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন। অক্টোবর-নভেম্বরে আডবাণীর যাত্রা শুরু হলে আরও অনেকে তাঁর শিবিরে নাম লেখাবেন বলে মনে করছেন এঁরা।
অনন্ত কুমার, রবিশঙ্কর প্রসাদ, শাহনওয়াজ হোসেনের মতো নেতারা ইতিমধ্যেই আডবাণীর যাত্রা পথ চূড়ান্ত করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এই শিবিরের এক নেতার কথায়, “জনগণের ক্ষোভকে পুঁজি করে অণ্ণা হজারে ইতিমধ্যেই আন্দোলনের একটি ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রেখেছেন। ঠিক তার পরেই আডবাণীর মতো প্রবীণ নেতার রথ যখন রাস্তায় নামবে, কে বলতে পারে, ঠিক সেই রকম বা তার থেকে বেশি সাড়া পাবেন না তিনি? আর এক বার এই যাত্রার মাধ্যমে যদি তিনি আম-জনতার প্রতিনিধি হয়ে উঠতে পারেন, তা হলে সঙ্ঘের পক্ষে পরবর্তী নেতা বাছাইয়ের সময় আডবাণীকে বাদ রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।”
আডবাণী-শিবির অবশ্য একটি ঝুঁকির কথাও বলছে। ১৯৯০ সালে আডবাণীর রাম রথযাত্রার মাধ্যমেই বিজেপির উত্থান। কিন্তু তার পর যতগুলি যাত্রা আডবাণী করেছেন, সেগুলি রাম রথযাত্রার মতো সফল হয়নি। দীর্ঘ ব্যবহারে রথযাত্রা এখন ক্লিশেও হয়ে পড়েছে। রামমন্দির আন্দোলনের সময় হিন্দুত্বের যে উদ্দীপনা ছিল, এখন তা নেই। সুতরাং এ বারে কী হবে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। এই অংশের আরও আশঙ্কা, একবার যাত্রা শুরু হলে কংগ্রেস কোনও না কোনও ভাবে আক্রমণে নামবে। জিন্না-পর্বের পরে বিজেপির যে অংশ তাঁকে কোণঠাসা করতে সক্রিয় হয়েছিল, তাঁরাও সেই সুযোগে কংগ্রেসের সঙ্গে গোপনে হাত মিলিয়ে যাত্রা পণ্ড করতে উদ্যোগী হবেন।
আডবাণীর প্রস্তাবিত রথযাত্রা নিয়ে দলের মধ্যে যতই গুঞ্জন থাক, প্রকাশ্যে এ নিয়ে কোনও মতভেদের কথা অস্বীকার করেছেন বিজেপির দ্বিতীয় সারির দুই শীর্ষ নেতা সুষমা স্বরাজ ও অরুণ জেটলি। সুষমা আজ এ ব্যাপারে বলেন, “আডবাণীজির যাত্রার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পদের কোনও সম্পর্ক নেই।”
পরিস্থিতি যা-ই হোক, রাজনৈতিক জীবনের প্রায় শেষ ধাপে এসে আর একটি বড় অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি হচ্ছেন আডবাণী। যেখানে তাঁর মূল চ্যালেঞ্জ নিজের সঙ্গেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.