কলকাতার অগুনতি মানুষ ফি বছর চারটে দিন বেড়ায় মায়া সভ্যতার উপত্যকা থেকে আঙ্করভাট মন্দির, হোয়াইট হাউস থেকে অজন্তা ইলোরা। সাধ্যের মধ্যে সাধ মিটিয়ে নেয়। সারা বছরের ‘না পাওয়া’-র তালিকা ছুড়ে ফেলে আশ মিটিয়ে দেখে নেয় আসমুদ্রহিমাচলের নানা বৈচিত্রকে, কলকাতার অলিতে-গলিতে। স্বপ্নের ‘বিদেশ’-কে ছুঁয়ে নেয় কোনও এক পুজোমণ্ডপে।
মন যদি চায় টুক করে নাগাল্যান্ড ঘুরে আসতে, এ শহর হতাশ করবে না। দক্ষিণ কলকাতার ‘পূর্বাচল সর্বজনীন (ইস্ট) দুর্গোৎসব’-এর প্রবেশ তোরণ থেকে মূল মণ্ডপ, সর্বত্র থাকছে নাগাল্যান্ডের সংস্কৃতির টুকরো টুকরো উপাদান। রংবেরঙের মুখোশে সাজানো পুজোয় প্রতিমার সাজও হবে মানানসই। নাগাল্যান্ড সফর সেরেই টিকিট কাটুন চিনের। মণ্ডপে ঢোকার মুখেই যদি স্বাগত জানায় বিরাট ড্রাগন, তা হলে নিশ্চিত পৌঁছে গিয়েছেন বেলেঘাটার ‘পূর্ব কলিকাতা ছাত্র সমিতি’র চাইনিজ প্যাগোডায়।
আর দক্ষিণী সংস্কৃতিতেই যদি মজে মন?
দক্ষিণ কলকাতার ‘নেতাজি জাতীয় সেবাদল’ পূর্ব ভারতের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছে দক্ষিণ ভারতকে। মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে ত্রিপুরার অদূরের ঊনকোটি পাহাড়ের আদলে। আলোর ব্যবহারে তৈরি হচ্ছে পাথুরে পরিবেশ। তবে মা দুর্গা একেবারে দক্ষিণী। তিনি সাজবেন মহল্লাপুরমের প্রস্তর দুর্গামূর্তির আদলে। ‘সিঁথি ইউথ অ্যাথলেটিক ক্লাব’-এর থিম আবার কর্নাটকের এক ভগ্নস্তূপ মন্দির। মণ্ডপসজ্জার বেশিরভাগটা অবশ্য শিল্পীর কল্পনা। ‘গড়পাড় মাতৃ মন্দির’-এর মণ্ডপ ভাবনা রূপ পাচ্ছে কেরল ও কথাকলি নৃত্যকে ঘিরে। প্রতিমা থাকবে বজরায় ভাসমান। মণ্ডপের চারপাশ ঘিরে নারকেল গাছ। আর পঞ্চাশ বছরে পা দেওয়া শরৎ বসু রোডের ‘জাগরী’ নিয়ে যাবে দক্ষিণ ভারতের শেষ বিন্দু কন্যাকুমারীতে। ‘বিবেকানন্দ রক’-এর আদলে গড়ে উঠবে তাঁদের মণ্ডপ।
দেশ-বিদেশ তো অনেক হল। কিন্তু শিকড়ের টান বাদ দিলে ঘোরা যে অসম্পূর্ণ। তাই ঘরে ফেরার পালা শীল লেনের ‘অটল সুর রোড পল্লিবাসী দুর্গোৎসব সমিতি’-তে। দেবী এখানে অন্নপূর্ণার রূপে বিরাজমান। এই মণ্ডপ দেখাবে এক অন্য জঙ্গলমহল। যেখানে শিশুরা ফিরে পাবে শিক্ষা-খাদ্যের অধিকার। জঙ্গলেরই আর এক ছবি ফুটিয়ে তুলছে বরাহনগরের মিলনগড় সর্বজনীন। তালপাতা, বাঁশ আর সুপুরি গাছ দিয়ে তৈরি এই মণ্ডপের থিম ‘আরণ্যক’।
লক্ষ্য স্থির। চার দিনে চেটেপুটে নিতে হবে দেশ থেকে বিদেশ, রাজ্য থেকে জেলার স্বাদ। কারণ সারা বছরের এইটুকু সঞ্চয় নিয়েই তো লড়তে হবে আরও একটা বছর, আরও কিছু নতুন জায়গা দেখার অপেক্ষায়।
|