শহরের অন্যতম স্মারক। এক পায়ে দাঁড়িয়ে উঁকি মারে আকাশে। সেই শহিদ মিনারের চূড়াকে এ বার আকাশ-নীলে ‘রাঙাতে’ উদ্যোগী রাজ্যের পর্যটন দফতর। মুখ্যমন্ত্রীর সায় মিললেই শুরু হয়ে যাবে কাজ। তবে, রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ শুক্রবার জানিয়ে দিয়েছেন, শহিদ মিনারের চূড়ার এই রং-বদল এবং পূর্ণ সংস্কারের জন্য এ দিনই তাঁরা ৫০ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করে দিয়েছেন।
শহিদ মিনারের চূড়ার রং বদলের ভাবনা অবশ্য নতুন নয়। বামফ্রন্টের আমলে তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী যতীন চক্রবর্তী এই স্মারক-স্তম্ভের মাথার গম্বুজাকৃতি চূড়াটি লাল করে দিয়েছিলেন। কারণ, লাল রংকেই তখন ‘উপযুক্ত’ বিবেচনা করেছিল জ্যোতি বসুর সরকার। তবে শেষরক্ষা হয়নি। চারপাশের প্রবল আপত্তিতে আবার মাথার লাল রং মুছে শহিদ মিনারকে আপাদমস্তক ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তার হাল্কা ক্রিম রং। |
রাজনৈতিক দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে এখন আবার নতুন করে ফিরছে পুরনো ভাবনা শহিদ মিনারের চূড়ার রং। তবে স্বাভাবিক ভাবেই এখন আর লাল নয়, এমনকী সবুজও নয়। ভাবা হয়েছে, আকাশ-নীলের কথা। রচপাল জানিয়েছেন, এটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত পছন্দের রং। মহাকরণের অন্দরের খবর, ‘পিঙ্ক সিটি’ জয়পুরের মতো কলকাতার বাড়িগুলিকে আকাশ-নীল করা যায় কি না, তেমন চিন্তাও মমতার মাথায় রয়েছে। যদিও তার আগেই তাঁর সরকারের পর্যটনমন্ত্রী ভেবে ফেলেছেন, শহিদ মিনারের চূড়ার রং আকাশ-নীল করার কথা। মহাকরণে রচপাল বলেন, “শহিদ মিনারের গম্বুজটিতে মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের আকাশি রং করার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।”
শহিদ মিনারের মাথাকে লাল করার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন সত্যজিৎ রায়। এ বার সেটি নীল করার ভাবনাও মেনে নিতে নারাজ অনেকেই। যোগেন চৌধুরীর মতো চিত্রশিল্পীর কথায়, “ঐতিহ্যশালী ভবন, সৌধ বা স্মারকগুলির আসল যে রং, সেটা বদল না-করাই বাঞ্ছনীয়। লাল বা নীল, কোনও রঙেরই দরকার নেই।” সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও রং না বদলেরই পক্ষে। তবে তিনি এটাও বলেন, “শহিদ মিনারের মাথাটি লাল করার মধ্যে অতি কুৎসিত রুচি ছিল। আকাশ-নীল হলে তা অন্তত লালের মতো দৃষ্টিকটু হবে না।” এই ঐতিহ্যবাহী স্মারকের চূড়ার রং বদলের ভাবনা নিয়ে সরাসরি কিছু না-বলে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান বরুণ দে-র মন্তব্য: এ সব ছেড়ে মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে ভাবা বেশি জরুরি। তা-ই করা উচিত সরকারের।”
|