নিজস্ব সংবাদদাতা • দুবরাজপুর |
গতবার সে ভাবে বৃষ্টি না হওয়ায় চাষও ভাল হয়নি। স্বভাবতই সার বিলি নিয়ে তেমন কোনও সমস্যা ছিল না। তবে ইউরিয়া সার কিনতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল দুবরাজপুর এলাকার চাষিদের। এ বারও ছবিটা একই। চাষিদের ক্ষোভ, ইউরিয়া সার কেনার জন্য বিভিন্ন সমবায় সমিতিগুলির বাইরে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়। মাঝে মাঝে বিবাদও বেধে যায়। এত কিছু করার পরেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে খালি হাতে ফিরে আসতে হয়।
ক্ষোভ এতটাই, গত কয়েক দিনে দুবরাজপুর ব্লকের বিভিন্ন সমবায় সমিতির বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাঁরা। কখনও পানাগড়-মোড়গ্রাম জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছেন। মঙ্গলবার সকালেও দুবরাজপুরের রুপশিমুল সমবায় সমিতির বাইরে জড়ো হওয়া কৃষকদের তুলনায় সারের যোগান কম থাকায় পুলিশ-প্রশাসনের নির্দেশে সার বিলি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সমবায় সমিতি। চাহিদার তুলনায় যোগান কম থাকায় সমস্যা হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন। এই সমস্যা শুধু দুবরাজপুর ব্লকে নয়, গোটা জেলারই।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ধান রোয়ার ২১ দিনের মাথায় কৃষকেরা জমিতে ইউরিয়া সার দিয়ে থাকেন। ধান রোয়ার সময়ের হেরফের থাকে। তবে এই সারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হয় অগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে। গতবার বৃষ্টি না হওয়ায় চাষিদের মধ্যে হতাশা ছিল। কিন্তু এ বার জেলায় প্রথম থেকে ভাল বৃষ্টি হয়েছে। স্বভাবতই চাষও ভাল হয়েছে। কৃষি দফতরের হিসেব দুবরাজপুর ব্লকেই চাষ হয়েছে ২১,৭৮০ হেক্টর জমিতে। যেটা প্রায় মোট কৃষিযোগ্য জমির ৯৮-৯৯ শতাংশ। চাষ ভাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চাহিদা বেড়েছে ইউরিয়া সারের। |
কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে দেখা যাচ্ছে যে পরিমাণ সারের চাহিদা আছে তার একটা অংশ মাত্র সমবায় সমিতিগুলির হাতে আসছে। আর সার বিলি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সমবায় সমিতির সম্পাদক বা কর্মীরা। দুবরাজপুর (পূর্ব) পুর-কৃষিউন্নয়ন সমবায় সমিতির সম্পাদক আনন্দ রুজ বা রুপশিমূল সমবায় সমিতির ম্যানেজার মহম্মদ নবি হোসেনরা বলেন, “যেখানে এই সারের চাহিদা ১০০ বস্তা। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ৩০ বস্তা। কী ভাবে সব চাষিদের সার বিক্রি করব বুঝতে পারছি না!” দুবরাজপুরের রুপশিমূল গ্রামের বাসিন্দা কর্ণ দাস, গোকরুল গ্রামের রামকৃষ্ণ মণ্ডল, আদমপুরের করিম খানরা বলেন, “ইউরিয়া সারের বদলে খোলা বাজারে অন্য কোম্পানির নাইট্রোজেন সার পাওয়া যায়। কিন্তু এ বার সেটা একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে জমির ফসল বাঁচাতে মরিয়া হয়ে সমবায়গুলির বাইরে ৭-৮ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও সার পাচ্ছি না।”
জেলা কৃষি উপঅধিকর্তা অশোক রায় বলেন, “সত্যিই চাহিদার তুলনায় যোগাম কম। বিষয়টি রাজ্যকে জানিয়েছি।” যদিও জেলা কৃষি দফতরের এক কর্তা বলেন, “কাগজে কলমে ইউরিয়া সারের যোগান ঠিকই আছে। কিন্তু অগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত এই সারের চাহিদা বেশি। সেখানে জেলায় সার আসতে শুরু করে এপ্রিল মাস থেকেই। সমবায় সমিতির মাধ্যমে এ সার বিলি করা হলেও পকিাঠামোগত কারণে এত আগে থেকে সেই সার সমিতিগুলি মজুত রাখতে পারে না। যার ফলে মস্যা তৈরি হচ্ছে।”
ডেপুটি রেজিস্টার (কো-অপারেটিভ সোসাইটি) অংশুক চক্রবর্তী কার্যত মেনে নিয়েছেন সমস্যা কাগজে কলমে না হলেও বাস্তবে রয়েছে। তিনি বলেন, “জেলায় মোট ২৬২টি সমবায় সমিতি আছে। দু’একটি ছাড়া, বাকিদের পর্যাপ্ত অর্থ, গুদাম বা অন্যান্য পরকাঠামোগত সমস্যার জন্য এত আগে থেকে ওই সার ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সঠিক সময়ে পরিমাণ মতো সার যোগান দিতে কোথাও কোথাও সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এর আগেও আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে চাষিরা যাতে এই সঙ্কটে না পড়েন তার জন্য চেষ্টা করব।” |