রোদ ঝলমলে সকালে হঠাৎই গোলমালের আভাস পেলেন বস্টনের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলার।
এক মিনিট আগেই তো কথা হল ফ্লাইট ১১-র পাইলটের সঙ্গে! তা হলে কেন তাঁর নির্দেশ মেনে পঁয়ত্রিশ হাজার ফুট উচ্চতায় উঠতে পারছে না বিমানটি?
প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ঠিক ৮টা ১৯-এ আমেরিকান এয়ারলাইন্সের অফিসে এল ফোনটা। ও পার থেকে শোনা গেল, “ককপিটে সবাই চুপ। বিজনেস ক্লাসে ঝাঁঝালো কিছু ছড়ানো হয়েছে। শ্বাস নেওয়া যাচ্ছে না। এক জন যাত্রীকে ছুরি মারা হয়েছে। আমার মনে হয় প্লেনটা হাইজ্যাক করা হয়েছে।”
বক্তার নাম বেটি অং। ফ্লাইট ১১-র বিমানসেবিকা।
কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ফের এল বেটির গলা, “দু’জন কর্মীকে ছুরি মারা হয়েছে। এখনও বিজনেস ক্লাসে ঢুকতে পারছি না।”
২০০১-এর ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকান এয়ারলাইন্সের অফিসের সঙ্গে বেটির এই কথোপকথনের আধ ঘণ্টার মধ্যেই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নর্থ টাওয়ারে আছড়ে পড়ে ফ্লাইট-১১। সেই বিভীষিকার এক দশক পূর্তির দু’দিন আগে প্রকাশিত হল এই কথাবার্তার রেকর্ডিং।
এই প্রথম এই ধরনের কোনও রেকর্ডিং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হল। ৯/১১-র তদন্তে যুক্ত এক কর্নেলের কথায়, “সেই মুহূর্তে ঠিক কী ঘটেছিল, এই শব্দগুলো তার আসল দলিল।”
যার ‘পরিচালনায়’ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ধাক্কা মেরেছিল ফ্লাইট-১১, সেই জঙ্গিনেতা মহম্মদ আটার কণ্ঠস্বর শোনা যায় রেকর্ডিংয়ে। তাকে বলতে শোনা যায়, “কয়েকটা প্লেন আমাদের কব্জায় আছে। কেউ নড়বে না। তা হলে নিজেরাই মরবে।” তার পরই আটার মিথ্যে আশ্বাস, “সব ঠিক আছে। আমরা এয়ারপোর্টে ফিরে যাচ্ছি।” সেই ‘ফেরা’ অবশ্য আর হয়নি। স্থানীয় সময় পৌনে ন’টায় আক্রান্ত হয় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার। পেনসিলভ্যানিয়ায় ভেঙে পড়েছিল যেই বিমানটি তার চালক জিয়াদ জারার কথাও রয়েছে এই রেকর্ডিংয়ে। জারা বলে, “প্লেনে বোমা আছে। আমরা এয়ারপোর্টে ফেরত যাচ্ছি। আমাদের কিছু দাবিদাওয়া আদায় করার আছে। সবাই চুপচাপ বসে থাক।”
পরবর্তী কণ্ঠস্বর নিউ ইয়র্ক ট্র্যাফিক কন্ট্রোল সেন্টারের এক কর্মীর, “জানলার বাইরে দেখতে পাচ্ছ?” চোখের সামনে তখন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সাউথ টাওয়ারে ধাক্কা মারতে চলেছে অন্য একটি বিমান ফ্লাইট ১৭৫! প্রত্যুত্তরে রেডার কন্ট্রোল ম্যানেজারের উত্তেজিত গলা, “হ্যাঁ। আরে ওটা তো দ্বিতীয় টাওয়ারের দিকে যাচ্ছে! দেখ দেখ, কী দ্রুত ওটা নেমে আসছে নীচে। এক ঝটকায় প্রায় আটশো ফুট নেমে গেল!” কিছু ক্ষণের মধ্যেই ফের তিনি বলেন, “টাওয়ারটা গুঁড়িয়ে গেল!” নেপথ্যে তখন আতঙ্ক আর বিস্ময় মেশানো চিৎকার! |