ছিটমহল সমস্যা শীঘ্রই মিটে যাবে। আপাতত সেখানকার বাসিন্দাদের নাগরিকত্বের বিষয়টিকেই সব চেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত। ঢাকায় তাঁর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এই আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মহম্মদ এরশাদ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তিস্তা চুক্তি নিয়ে আশাবাদী রংপুরের সাংসদ এরশাদ। কিন্তু তিনি মনে করেন, এ যাত্রায় এই জলবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়ায় বাংলাদেশের মন জয়ের একটা বড় সুযোগ হাতছাড়া হল দিল্লির।
ঢাকা সফরের দ্বিতীয় দিনে নিজের হোটেলেই জাতীয় পার্টির নেতা এরশাদের সঙ্গে দেখা করেন মনমোহন। বাংলাদেশে ভারতের যে ১১১টি ছিটমহল রয়েছে, দু’য়েকটি ছাড়া তার সব ক’টিই এরশাদের সংসদীয় এলাকায়। ছিটমহলবাসীর সমস্যা নিয়ে সংসদের ভিতরে-বাইরে বার বার সরব হয়েছেন তিনি। আবার তাঁর উদ্যোগেই ভারতের সঙ্গে বোঝাপড়া করে তিস্তার উপরে ডালিয়া ব্যারেজ নির্মাণ হয় বাংলাদেশের লালমণির হাটে। বাংলাদেশের বৃহত্তম সেই ব্যারেজ থেকে দেশের উত্তরাঞ্চল জুড়ে সেচ-খালও কাটিয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদ। এই অঞ্চল থেকে বার বার নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন তিনি, এমনকী জেলে থেকেও। এই জন্যই বাংলাদেশে তিস্তা প্রকল্পের রূপকারও বলা হয়ে থাকে সেনাশাসক হিসাবে নিন্দিত এরশাদকে। ঢাকা থেকে টেলিফোনে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমি উত্তরবঙ্গের মানুষ। ঊষর উত্তরবঙ্গে সেচের জন্যই ব্যারেজ আর খালের ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু তিস্তার জল না মেলায় সব শুকিয়ে যাচ্ছে। |
চাষাবাদ শিকেয় উঠেছে।”
মনমোহনের সঙ্গে আলোচনাতেও তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি এবং ছিটমহল সমস্যাই বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে বলে জানিয়েছেন এরশাদ। আগ্রহ নিয়ে অনেক তথ্য নোটবইয়ে লিখেও নেন প্রধানমন্ত্রী। তবে, এই দুই সমস্যা নিরসনে মনমোহন যে আন্তরিক, আধ ঘণ্টার আলোচনায় তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি এরশাদের। ট্রানজিটের সুবিধা দেওয়া ছাড়াও বাংলাদেশের ৪৬ ধরনের পোশাকের জন্য বাজার খুলে দিয়েছে ভারত। এরশাদ বলেন, “বাংলাদেশের কাছে এটা বিরাট প্রাপ্তি। ঢাকার দীর্ঘদিনের চাওয়া ভারত পূর্ণ করেছে।” |
হুসেইন মহম্মদ এরশাদ |
|
কিন্তু তার পরেও তিনি মনে করেন, আরও একটু উদার হয়ে মনমোহনের এই ঢাকা সফরেই তিস্তার জলবণ্টন চুক্তি সেরে ফেলতে পারত ভারত। এই সফর ঘিরে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে বিরাট প্রত্যাশার সঞ্চার হয়েছিল, তা হলে তা পূর্ণ হত। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বলেন, “রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার বিষয়টি বাস্তব। কিন্তু বাংলাদেশ তো কোনও অযৌক্তিক দাবি করেনি। নিম্ন অববাহিকার দেশ হিসাবে যে জল তাদের প্রাপ্য, তারা শুধু সে’টুকুরই নিশ্চয়তা চেয়েছিল।” এরশাদ মনে করেন, এই সফরে জলবণ্টন চুক্তি করা গেলে দু’দেশের সম্পর্ক যে মাত্রায় পৌঁছত, সে সুযোগ সহসা আসে না।
এরশাদ বলেন, “৬০ বছর ধরে জিইয়ে রয়েছে ছিটমহল সমস্যা। হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্দশার মধ্যে পশুর মতো জীবনযাপন করছেন। তাঁরা আমার কাছে এসে যখন দুর্দশার কথা বলেন, চোখে জল এসে যায়।” রংপুরের সাংসদ জানিয়েছেন, মনমোহনকে তিনি বলেছেন, আর দেরি নয়, ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি রূপায়ণ করে ছিটমহল বিনিময়ের কাজ শেষ করা হোক। প্রধানমন্ত্রী তাঁকে আশ্বস্ত করেছেন, আর কালক্ষেপ হবে না। এই সমস্যা মিটিয়ে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইন্দিরা-মুজিব চুক্তিকে জিইয়ে রাখতেই এই সফরে প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই প্রথম দু’দেশের ছিটমহলগুলিতে জনগণনা করা হয়েছে। এর পরে সেখানকার বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে শেষ করতে চায় ভারত। তার পরে বাংলাদেশের সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে একটি সময়সীমা নির্দিষ্ট করে ধাপে ধাপে ছিটমহল বিনিময়ের প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। এর মধ্যে ছিটমহলবাসীদের জীবন ধারণের মান উন্নত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনবিঘা করিডরও ২৪ ঘণ্টা খুলে রাখা হচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধান যে তাঁর ছোটবেলাটা ভারতের কোচবিহারে কাটিয়েছেন, এবং এখনও তিনি নিয়মিত সেখানে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে আসেন, তা শুনে কৌতূহল প্রকাশ করেন মনমোহন। বিদায় দেওয়ার সময়ে বলেন, “আপনার কথা আমার মনে পড়বে। দিল্লি গেলে অবশ্যই আমার সঙ্গে দেখা করে আসবেন।”
|
সরকারি সাইট হ্যাক করে মমতার সমালোচনা
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঢাকা |
ভারতীয় হাইকমিশনের ওয়েবসাইট। কিন্তু খুললেই লেখা ভেসে উঠছে ‘শুনুন মমতা, ন্যূনতম কাণ্ডজ্ঞান থাকলে আপনি আমাদের ২৫ শতাংশ পানি দিতে চাইতেন না। বাংলাদেশে আসুন, নদীগুলো ঘুরে দেখুন। এখন আমাদের নদীর মধ্যে ধান চাষ করা হচ্ছে। আপনাদের নীতির কারণে আমাদের নদীগুলি শুকিয়ে যাচ্ছে।’ কাল রাত বারোটার পর ওয়েবসাইটির এমনই দশা দাঁড়ায়। ওয়েবসাইটের হোমপেজে লেখা ছিল ‘হ্যাকড বাই বাংলাদেশি হ্যাকার।’ রাতে ভিসা আবেদনের অনলাইন পদ্ধতির লিঙ্ক-সহ অন্যান্য লিঙ্ক অবশ্য সক্রিয় ছিল। আজ দুপুরে ফের পুরোদমে চালু করা হয়েছে ওয়েবসাইটটি। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সাম্প্রতিক সফরে তিস্তা ও ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষরিত না হওয়ার ক্ষোভ থেকেই হ্যাকাররা কাজটি করেছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। হ্যাকিংয়ের পর হোমপেজের প্রেস রিলিজ বিভাগে লেখা ছিল, ‘বাংলাদেশি হ্যাকাররা এই সাইটটি হ্যাক করেছে। ভারত সীমান্তে হত্যা বন্ধ কর। আমরা মানুষ, পাখি নই, বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করা তোমাদের দায়িত্ব।’ |