সিডি চাই না মিস্ড কল?
না, এ বার তো আমকল্কা।
বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। পুজোর বাজারে কান পাতলে এ সব শব্দই শোনা যাচ্ছে হরদম। মেয়েদের চোখ টানতে সমুদ্রগড়-ধাত্রীগ্রামের এ সব শাড়ির জুড়ি মেলা ভার।
কালনার ধাত্রীগ্রাম এবং পূর্বস্থলী ১ ব্লকের সমুদ্রগড়। দু’টি এলাকা পাশাপাশি। বহু বছর ধরেই তাঁত শিল্পের জন্যএই এলাকা দু’টি বিখ্যাত। সারা বছর রমরমিয়ে ব্যবসা চলে এখানে। তবে পুজোর মরসুমে ব্যবসা তুঙ্গে ওঠে। মাস দু’য়েক আগে থেকেই তাঁতিরা ব্যবসা শুরু করে দেন। দুর্গাপুর, আসানসোল, কলকাতা, হাওড়া-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে কালনা মহকুমার শাড়ি। |
নিয়ম করে প্রতি বছরই পুজোর মরসুমে বেশ কিছু নতুন চমক বাজারে নিয়ে আসেন এখানকার তাঁতিরা। উপচে পড়া বরাত সামাল দিতে শুধু এলাকার শিল্পীই নন, কাজে নামতে হয় উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি-সহ বেশ কয়েকটি এলাকার কারিগরদেরও। পুজো মরসুমে ব্যবসা হয় একশো কোটিরও বেশি। এ বারও আমকল্কা নিয়ে তাঁতিরা বেশ উচ্ছ্বসিত। তাঁদের দাবি, চওড়া পাড় আর চওড়া নকশা-র জোরে আমকল্কা আগের সব রেকর্ড ভেঙে দেবে।
তাঁতিরাই জানালেন, টিন এজার হোক বা পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলা। এ বার পুজোয় তাঁদের চাই এমন শাড়ি, যার পুরোটাই কারুকাজে ভরা। আমকল্কা তাই সে দিক থেকে আঠেরো থেকে আশির প্রথম পছন্দ। একশো কাউন্টের মিহি সুতোয় বোনা এই শাড়ির আঁচল, পাড় এবং গায়ে রয়েছে সুতো ও জড়ির নকশা। সেই নকশায় ফুটে উঠছে পদ্ম, আম, রথ। প্রায় ৪৮ ইঞ্চি চওড়া কাপড়ের মধ্যে ৬-৮ ইঞ্চি এলাকা জুড়ে জড়ির পাড়। শিল্পীদের দাবি, আমকল্কার নকশা অপেক্ষাকৃত বড় বলেই নজর কাড়ছে বেশি। সব ধরনের ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখেই এই শাড়ির সুতোয় ব্যবহার করা হয়েছে অজস্র রং। দুই এলাকার গুরুত্বপূর্ণ বাজারে আবার মিলছে তসরের আমকল্কা-ও। খোলা বাজারে তাঁতের আমকল্কা বিকোচ্ছে হাজার থেকে বারোশ’র মধ্যে। তবে তসরের আমকল্কার জন্য দিতে হবে ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা।
সমুদ্রগড়ে রয়েছে টাঙ্গাইল তাঁত বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতি। সমিতির সদস্যেরা পুজোর মরসুমে লরিতে করে শাড়ি পাঠান রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। সমিতির এক সদস্য কার্তিক ঘোষের কথায়, “শুধু এলাকার খরিদ্দার নয়। বাইরের খরিদ্দাররাও মুগ্ধ আমকল্কায়। প্রচুর বরাত মিলছে এই শাড়ির।” ঈদের বাজারেও প্রচুর আমকল্কা বিক্রি হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
আমকল্কার পাশাপাশিই এ বার চাহিদা রয়েছে কনট্রাস্ট ও জামদানি শাড়ির। ব্যবসায়ীদের দাবি, কনট্রাস্ট শাড়ির গা, পাড়, আঁচলে ব্যবহার করা হয়েছে আলাদা আলাদা নকশা। জামদানি রয়েছে তিন ধরনের, মেশিন, সিল্ক ও হাতে তৈরি। মেশিন জামদানি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ২ হাজারে। সিল্ক জামদানির দর ১৭০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। হাতে তৈরি জামদানি মিলবে ৮০০ থেকে ২৮০০-য়। মহকুমা তাঁত শিল্পী সঙ্ঘের সম্পাদক মনোজ রায় জানান, ধাত্রীগ্রাম ও সমুদ্রগড় এলাকায় শিল্পীদের হাতে তৈরি জামদানির সুনাম রয়েছে বহু বছর ধরেই। তবে বর্তমানে এই শাড়ি তৈরির শিল্পী হাতে গোনা।
চাহিদা থাকলেও অন্য বছরের থেকে এ বার তাঁতের বাজার কিছুটা চড়া। ব্যবসায়ীরা এর কারণ হিসেবে সামনে এনেছেন, সুতোর দাম এবং শিল্পীদের মজুরি বৃদ্ধির কারণকে। তাঁদের দাবি, শাড়ি পিছু এ বার দাম বেড়েছে প্রায় দেড়শো টাকা।
তা হোক, পুজো তো আর বছরে বার বার আসে না। |