বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের আবেদনে পুজোর আগে তাঁদের অগ্রিম দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন উপাচার্য। বিভিন্ন অভিযোগের তদন্তে আসা উচ্চশিক্ষা দফতরের প্রতিনিধিদের আপত্তিতে তা প্রত্যাহার করলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুব্রত পাল। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের পেনশনার্স অ্যাসোসিয়েশন। উপাচার্যের দাবি, “অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের এমন অগ্রিম দেওয়া যায় না, তা আমার জানা ছিল না। এ ব্যাপারে তাঁদের রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানাতে বলেছি।”
সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা উপাচার্যের কাছে আবেদন করেন, ঈদ বা পুজো উপলক্ষে অন্য কর্মীদের মতো তাঁদেরও অগ্রিম দেওয়া হোক। এত দিন তাঁরা এ রকম অগ্রিম পেতেন না। তবু ‘পেনশনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর দাবি মেনে উপাচার্য গত ৬ সেপ্টেম্বর ওই কর্মীদের পাঁচ হাজার টাকা করে অগ্রিম দেওয়ার নির্দেশ দেন। এর পরে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ওঠা বেশ কিছু অভিযোগের তদন্তে আসেন উচ্চশিক্ষা দফতরের একটি প্রতিনিধি দল। তাতে ছিলেন মধুমিতা রায়, মানিক ভট্টাচার্য ও সুগত মারজিৎ। তাঁদের আপত্তিতে ওই অগ্রিম দেওয়ার নির্দেশ প্রত্যাহার করেন উপাচার্য।
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ পেনশনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যেরা। সংগঠনের তরফে জানানো হয়, প্রায় ৮০০ পেনশন-প্রাপককে অগ্রিম নিতে আসার জন্য জানানো হয়েছিল। শুক্রবার তাঁদের প্রায় ১৫০ জন এসেওছিলেন। অগ্রিম মিলবে না জেনে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুজিতচন্দ্র দাস বলেন, “আমরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি জানিয়েছেন, উচ্চশিক্ষা দফতের প্রতিনিধি দল আপত্তি করেছে। অর্থ দফতরের কর্তা বা সহ-উপাচার্যও এ ব্যাপারে কিছু বলেননি। তাই খানিকটা চাপে পড়ে তিনি নির্দেশ প্রত্যাহার করেছেন।” অর্থ দফতের এক কর্তা বলেন, “উপাচার্য ওই নির্দেশ দিতে পারেন না। কারণ সরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা কোনও উৎসবে অগ্রিম পান না।”
পেনশনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি হরমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সব অস্থায়ী কর্মী মাসে দুই-তিন হাজার টাকা বেতন পান, তাঁদেরও পাঁচ হাজার টাকা করে অগ্রিম দেওয়া হচ্ছে। যারা দৈনিক মজুরি পান, তাঁদের দেওয়া হচ্ছে দেড় হাজার টাকা করে। সরকারি নিয়মে ২০ হাজার টাকার বেশি যে কর্মীরা বেতন পান, তাঁদের দু’হাজার টাকার বেশি অগ্রিম দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের ১১ হাজার টাকা অগ্রিম দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের অগ্রিম নেওয়া টাকা কী করে শোধ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওই প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা।’’ তিনি আরও বলেন, “আমাদের সঙ্গে উপাচার্যের কথা হয়েছিল, অনুদান হিসেবে দেওয়া হবে ৮০০ টাকা। প্রতি মাসে ৪২০ টাকা করে পেনশন থেকে কেটে নেওয়া হবে। এই দশ মাসের মধ্যে কেউ মারা গেলে তাঁর অগ্রিমের টাকা আমরা সমিতির পক্ষে ফেরত দিতে বাধ্য থাকব, এ কথাও জানিয়েছিলাম। তবু অগ্রিম দেওয়া হল না।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, বিভিন্ন আর্থিক গোলমাল সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্তে বর্ধমানে আসে উচ্চশিক্ষা দফতরের দলটি। তাঁরা রাজবাটি ক্যাম্পাসে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে অবসরপ্রাপ্তদের অগ্রিম দেওয়ার নির্দেশ সম্পর্কেও প্রশ্ন তোলেন। উপাচার্য শুক্রবার বলেন, “ওই দলের সদস্যেরা নানা অভিযোগের তদন্তে এসেছিলেন। আমাকে প্রচুর জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন। তাঁদের আপত্তিতেই অগ্রিম দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে।” |