বাবাকে পুড়িয়ে মারল ছেলে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
মদ্যপ বাবার অতাচার সহ্য করতে না পেরে তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছিল বছর তেরোর ছেলেটি। মায়ের ‘সম্মতি’ নিয়েই। অন্তত জেরায় সে এমনই কবুল করেছে বলে পুলিশের দাবি।
আগুন যখন দাউদাউ করে জ্বলছে, ছেলেকে আর দেড় বছরের শিশুকন্যাকে নিয়ে সোজা বর্ধমানের হিরাপুর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন মা। পুলিশকে ছেলেটি বলেছে, বাবা তাকেও কারণে-অকারণে মারতেন। যাতে সে স্কুলে যেতে না পারে তা নিশ্চিত করতে আগের দিন তাকে ন্যাড়াও করে দেন। শুক্রবার ছেলেটিকে বর্ধমানের জুভেনাইল হোমে পাঠানো হয়েছে। মাকে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আসানসোল আদালত। মেয়ে তাঁর সঙ্গে রয়েছে। |
হিরাপুরের সাঁতা গ্রামে ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার রাতে। মৃত অনন্ত মাজি (৪৫) মূলত জনমজুরের কাজ করতেন। বাড়িতে তৃতীয় পক্ষের স্ত্রী কল্পনা, ছেলে বান্টি আর দেড় বছরের একটি মেয়ে। তবু প্রায় সারা দিনই তিনি মদ খেয়ে থাকতেন। স্থানীয় সূত্রে পুলিশ জেনেছে, তাঁর প্রথম স্ত্রী অত্যাচার সহ্য করতে না পেরেই পালিয়েছিলেন। দ্বিতীয় স্ত্রী মারা যান। বছর পনেরো আগে তিনি তৃতীয় বার বিয়ে করেন। বান্টি তৃতীয় পক্ষেরই সন্তান।
স্থানীয় সাঁতা হাইস্কুলের ছাত্র বান্টি পুলিশকে বলেছে, “দিনের পর দিন মাকে মারধর, গালিগালাজ করত বাবা। আমাকেও ধরে পেটাত। বহু বার স্কুলে যেতেও বাধা দিয়েছে। বুধবার বিকেলে ন্যাড়া করে দেয়। আর সহ্য হচ্ছিল না।” বৃহস্পতিবার সে স্কুলে যেতে পারেনি। সন্ধ্যায় বাবা যথারীতি মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফেরেন। ঘরেই ছিল এক বোতল কেরোসিন। তা বাবার গায়ে ঢেলে সে দেশলাই কাঠি জ্বেলে ছুড়ে দেয়। দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে।
বান্টির দাবি, মায়ের সম্মতি নিয়েই সে বাবার গায়ে আগুন দিয়েছে। জেরায় তার মা-ও সে কথা স্বীকার করেছেন বলে পুলিশের দাবি। তাঁর কথায়, “বছরের পর বছর সহ্য করেছি। আর পারছিলাম না।” মনোবিদ জ্যোতির্ময় সমাজদারের মতে, “ওঁরা হয়তো নানা ভাবে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করেছেন, পারেননি। অবসাদ ঘিরে ধরেছে। অবসাদে মানুষ অনেক সময়ে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। এর মধ্যে কোনও অপরাধপ্রবণতা আছে বলে মনে হয় না।”
এ দিন ঘটনা শুনে স্তম্ভিত সাঁতা হাইস্কুলের শিক্ষকেরা। তাঁদের খেদ, সপ্তম শ্রেণির ছাত্রটির মধ্যে যে এত ক্ষোভ জমে ছিল, তা তাঁরা বুঝতেই পারেননি। বন্ধুরা শুধু অবাক নয়, পুলিশ বান্টিকে ধরে নিয়ে গিয়েছে জেনেই মনখারাপ হয়েছে তাদের। শুধু একটা কথাই তারা জানতে চেয়েছে, বান্টি কবে ফিরবে? কবে আবার স্কুলে আসবে সে? |