বই ছাপিয়ে তাঁর সরকারের ৯০ দিনের কাজের হিসাব দিয়েছিলেন মঙ্গলবার। তার চব্বিশ ঘণ্টা পর বুধবার সব মন্ত্রী ও দফতরের সচিবকে বৈঠকে ডেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “বসে থাকবেন না। পা ফেলে এগোন। আমি ফল চাই।” সেই সঙ্গেই তাঁর ঘোষণা, প্রতি তিন মাস অন্তর তিনি নিজে প্রতিটি দফতরের মন্ত্রী ও সচিবদের নিয়ে কাজের মূল্যায়ন করবেন। আর সচিব পর্যায়ে মাসিক মূল্যায়ন করবেন মুখ্যসচিব।
কাজের ক্ষেত্রে কোনও গাফিলতি যে তিনি বরদাস্ত করবেন না তা বুঝিয়ে দিয়ে এ দিন টাউন হলের বৈঠকে সরাসরি বেশ কয়েক জন মন্ত্রীর সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। যেমন সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী শ্যামল মণ্ডলকে তিনি বলেন, “বড় বেশি কথা বলছেন। কাজ তো করছেন না। এখানে বসে কী করেন? কাজ দেখান কাজ। জেলায় গিয়ে বসুন।” জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন দাস মহাপাত্রকে বলেন, “ইংরেজিতে বক্তৃতা বন্ধ করে কাজ করুন।” বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনকে বলেন, “আপনাকে কাঠ পাচার আটকাতে বলেছিলাম। কিছুই বন্ধ হয়নি।” বৈঠকে ছিলেন না পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ। তাঁর দফতরের সচিব রাঘবেন্দ্র সিংহ কিছু বলতে গেলে মমতা তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, “কাগজে-কলমে ‘ডান’, কাজের বেলায় ‘নান’।” |
বাম আমলে জ্যোতি বসু এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বিভিন্ন দফতরের কাজের পর্যালোচনা করতে বহু বৈঠক করেছেন। কিন্তু একসঙ্গে সব দফতরের মন্ত্রী ও সচিবকে নিয়ে বৈঠক আগে কখনও হয়নি। সরকারের গঠনের তিন মাসের মাথায় মমতা সেটাই করলেন এ দিন। প্রায় দু’ঘণ্টার বৈঠক শেষে তাই অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের মন্তব্য, “এটা এক ঐতিহাসিক মিটিং। আবার এমন বৈঠক হবে।”
চলতি আর্থিক বছরে পাঁচ মাস ইতিমধ্যেই অতিক্রান্ত। বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন চলছে। প্রায় প্রতিদিন কোনও না কোনও দফতরের বাজেট বরাদ্দ অনুমোদিত হচ্ছে। এ দিনের বৈঠকে প্রত্যেক দফতরের বরাদ্দের পরিমাণ জেনে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাজেটের টাকা যাতে মাটি ও মানুষ পর্যন্ত পৌঁছয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষ যাতে উন্নয়নটা দেখতে পারেন, তার স্পর্শ পেতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।”
কিন্তু বাজেটে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত তা দিতে পারবে তো সরকার? জবাবে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী বলেন, “বাজেটেই এর বিস্তারিত বলে দেওয়া আছে। তবে যখন অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, তখন টাকার সংস্থানও হবে বলে আমি আশা করি।” কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলে রাজ্যে। নিয়মমতো, ওই সব প্রকল্পের ৯০% অর্থ দেয় কেন্দ্র। বাকিটা রাজ্য। কিন্তু এই সব প্রকল্পে কেন্দ্রের টাকা পেতে গেলে কাজ শেষের শংসাপত্র জমা দিতে হয়। বৈঠকে সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রকল্পের প্রথম দফার কাজ শেষ করে দ্রুত শংসাপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। যাতে পরের কিস্তির টাকা পাওয়া যায়।”
রাজ্যের পিছিয়ে পড়া জেলাগুলির জন্য বিশেষ প্রকল্প তৈরি করে জমা দিলে চলতি আর্থিক বছরেই অতিরিক্ত ৮০০০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ করতে সম্মত হয়েছে যোজনা কমিশন। বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ টেনে অর্থমন্ত্রী জানান, এই টাকা পেতে হলে যোজনা কমিশনের কাছে নির্দিষ্ট প্রকল্প জমা দিতে হবে। তারাই সেই প্রকল্প অনুমোদন করবে। তারাই টাকা দেবে। যোজনা কমিশনের কাছ থেকে সেই সুবিধা আদায় করতে রাজ্যের পিছিয়ে পড়া জেলাগুলিতে বিদ্যুৎ, গ্রামোন্নয়ন, অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ, সংখ্যালঘু, জলসম্পদ, শিক্ষা, সমাজ কল্যাণ দফতরকে বিশেষ প্রকল্প তৈরি করতে বলা হয়েছে।
মুখ্যসচিব সমর ঘোষ বলেন, আর্থিক বছরের বাকি সাত মাস সময়কে দু’টি ভাগ করে কাজ করতে হবে। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি থেকে মার্চ দু’ভাগে কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করে পরিকল্পনা খাতের টাকা খরচ করুন। রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা অর্থ কমিশন এবং ১০০ দিনের কাজের মতো ‘ফ্ল্যাগশিপ’ প্রকল্পের টাকা ঠিকমতো খরচ করতে পারে না। ঠিকমতো কাজ করার জন্য বলেন মুখ্যসচিব। মমতা বৈঠকে কারিগরি শিক্ষা সচিব মনোজ অগ্রবালকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে বসে দফতরের কাজকর্ম একটু ঠিক করে নিতে। জনশিক্ষা সচিব পদে কেউ নেই। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, উচ্চশিক্ষা সচিব সতীশ তিওয়ারি জনশিক্ষা সচিবের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন। |