কথাবার্তায় ‘ছিরিছাঁদ’ নেই। পোশাক-আশাক বড়ই ‘অশালীন’। শুধু তা-ই নয়, প্রায়ই তিনি ‘অন্যত্র’ রাত কাটান। এমনই এক গুচ্ছ ‘অপরাধে’ পড়শিরা বাড়িতে চরাও হয়ে মধ্য-তিরিশের এক মহিলার চুল কেটে দিলেন। সারা পাড়া ঘোরালেন তাঁকে। ভাঙচুর করলেন গাড়ি। হুমকি দিলেন বাড়িতে আগুন লাগানোরও। কৃষ্ণনগরের অঞ্জনাপাড়ার ওই বাসিন্দাদের একাংশের ফতোয়া, ‘এ পাড়ায় মহিলার ঠাঁই নেই।’
এ দিন প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে ‘শাস্তি’-পর্ব চলার পরে বেলা তিনটে নাগাদ পুলিশ যায়। স্বামী, কিশোর পুত্র-কন্যা-সহ ওই মহিলাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হলেও গভীর রাত পর্যন্ত তাঁদের বাড়িতে ফেরানোর কোনও চেষ্টাই হয়নি। থানার সামনে রাত কাটাচ্ছেন জেনেও পুলিশের দাবি, লিখিত অভিযোগ করেই ওই দম্পতি কোথাও চলে গিয়েছেন। নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র অবশ্য বলেন, “পড়শিদের হুমকিতে পিছিয়ে গেলে চলবে না। ওঁদের বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব অবশ্যই পুলিশের।” |
স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর প্রতিমা প্রামাণিক এ নিয়ে মুখ খোলেননি। স্থানীয় ওয়ার্ড কমিটির তৃণমূল সভাপতি সঞ্জয় বসুর দাবি, “মহিলা অসামাজিক কাজকর্মে জড়িত। পাড়ার লোকের খেপে ওঠার সঙ্গত কারণ আছে। আমাদের কিছু করার ছিল না।” কৃষ্ণনগরের কংগ্রেস পুরপ্রধান অসীম সাহার মতে অবশ্য এটা ‘মধ্যযুগীয় বর্বরতা’।
ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন? মহিলার স্বামী বলেন, “আমার সঙ্গে ঝগড়া করে কয়েক দিন আগে ও বন্ধুর বাড়ি চলে যায়। এ দিন দুপুরে ফিরে গাড়ি থেকে নামতেই পাড়ার লোক ঘিরে ধরে কৈফিয়ত চায়, ‘কোথায় ছিলেন এ ক’দিন?’ সঙ্গে কটূ কথা।” আগুনে ঘি পড়ে মহিলা পাল্টা কথা শোনাতেই। নিমেষে ঘিরে ধরে বেশ কিছু মানুষ। শুরু হয় ‘শাস্তি’।
পড়শিদের এত রাগের কারণ কী? মহিলার দাবি, “আগেও পাড়ার কিছু লোক বিরক্ত করত। গেঞ্জির ব্যবসা করে একচালা থেকে তিনতলা বাড়ি করাতেই অনেকের চোখ টাটিয়েছে।” আর পড়শিদের সমস্বর দাবি, অনেকের সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ রয়েছে মহিলার। পোশাক ‘অশালীন’। তা বলে মারধর! প্রতিবেশীদের পাল্টা প্রশ্ন, ‘কেন নয়?’ |