|
|
|
|
নেতার মৃত্যু, হাসপাতালে ক্ষোভ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কৃষ্ণনগর |
চিকিৎসকের গাফিলতিই মৃত্যুর কারণ। এমনই অভিযোগে তৃণমূলের কয়েকশো কর্মী-সমর্থক বুধবার রাতে শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল শুধু দাপিয়েই বেড়াল না, ‘অভিযুক্ত’ চিকিৎসকের খোঁজে হাসপাতালের ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড’-এ ঢুকে পড়ল তারা। তারপর মিনিট দশেক ধরে ওই চিকিৎসকের নাম ধরে চিৎকার করে শাসিয়েও এল তাঁকে। সংক্রমণ ওয়ার্ডে যন্ত্রণায় কুঁকড়ে থাকা রোগীরা তখন আতঙ্কে কাঁপছেন।
জানতে পেরে হাসপাতালে ছুটে এলেও দলীয় সমর্থকদের পাশেই দাঁড়াচ্ছেন যুব কল্যাণ মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। তিনি বলছেন, “ওই চিকিৎসক বলতেই পারছেন না দলীয় ওই নেতা কেন মারা গিয়েছেন। ওঁর বাড়ির লোকজন তাই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। তবে দলীয় কর্মীরা সংযত থেকে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন।” হাসপাতাল সূত্রে অবশ্য স্পষ্ট অভিযোগ, ওয়ার্ডে ঢুকে ‘তাণ্ডব’ করেছেন তৃণমূলের স্থানীয় কর্মীরাই। মৃতের পরিবারের তরফে ওই চিকিৎসক, ব্রজেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যে সম্পর্কে উজ্জ্বলবাবু বলছেন, “ওই চিকিৎসক দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর শাস্তি চাই।” আর দোষ প্রমাণ করা না গেলে? মন্ত্রী বলেন, “তাহলে কেন ওই দলীয় নেতার মৃত্যু হল তা জানাতে হবে।” যে দফতরের দায়িত্ব খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে, সেই স্বাস্থ্য দফতরের ‘কাজকর্ম’ নিয়ে দলীয় কর্মীদের এমন অনাস্থা এবং হাসপাতালে ঢুকে তাদের ‘তাণ্ডব’ অস্বস্তিতে ফেলেছে রাজ্যের শাসক দলকে। |
|
হাসপাতালে মন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র। |
বুধবার দুপুরে হাসপাতে ভর্তি করা হয়েছিল স্থানীয় তৃণমূল নেতা আনন্দকৃষ্ণ দেবকে (৫৬)। তিনি কৃষ্ণনগর পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর। একটি প্রথমিক স্কুলের শিক্ষক আনন্দবাবু কৃষ্ণনগর শহর তৃণমূলের সভাপতি। তাঁর পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে স্কুলে ছাত্রদের নিয়ে ফুটবল খেলতে গিয়ে বুকে চোট পেয়েছিলেন তিনি। স্থানীয় এক চিকিৎসক তাঁর বুকে সামান্য চোট রয়েছে বলে জানান। কিন্তু বুধবার সকাল থেকে অসুস্থ বোধ করতে থাকায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। শুরু হয় চিকিৎসাও। কিন্তু সন্ধে থেকেই তাঁর খিঁচুনি শুরু হয়। সঙ্গে জ্বর। আনন্দবাবুর ছেলে অনির্বান বলেন, “এই সময়ে চিকিৎসককে বার বার ডাকা সত্ত্বেও তিনি আসেননি। এরপরেই বাবাকে একটি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়। কিন্তু অবস্থা খারাপ হতে থাকলেও ওই চিকিৎসককে আর দেখা যায়নি।” রাত সাড়ে দশটা নাগাদ শেষ পর্যন্ত আনন্দবাবুকে দেখতে আসেন ব্রজেশ্বরবাবু। এক ঝলক দেখেই তিনি জানান আনন্দবাবু মারা গিয়েছে। এরপরই উত্তেজনা ছড়ায়।
ওই চিকিৎসকের সাফাই, “আমাকে কল দেওয়া হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু আমি জরুরি বিভাগে ছিলাম। সেখানে দু-জন মরণাপন্ন রোগী ছিলেন। তাই তাঁদের ফেলে চলে আসতে পারিনি।” তবে অত দ্রুত কেন তাঁর অবস্থার অবনতি হল তা স্পষ্ট জানাতে পারেননি ব্রজেশ্বরবাবু।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অমিত হালদার বলেন, “এ ব্যাপারে একটি তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়া হয়েছে। ময়নাতদন্তও হবে। তারপরেই বোঝা যাবে মৃত্যুর কারণ। এ ব্যাপারে ওই চিকিৎসকের গাফিলতি থাকলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|