স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেখুন স্বাস্থ্যকেন্দ্রই শয্যাশায়ী,
ডাক্তারবাবু বসেন আবাসনে

থা ছিল, মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে উন্নীত করে ১৫ শয্যার একটি হাসপাতাল করা হবে। নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে অর্থ অনুমোদনের জন্য দু’বার প্রশাসনিক স্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন মঙ্গলকোটের ব্লক স্বাস্থ্যকর্তারা। কিন্তু অনুমোদন মেলেনি। উল্টে হাসপাতালের মূল ভবনটিকেই ‘বিপজ্জনক’ বলে ঘোষণা করেছে পূর্ত দফতর। এই অবস্থায় হাসপাতাল চলছে নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী আবাসনে। তাও শুধু বহির্বিভাগই।
বেশ কয়েক বছর আগের কথা। বর্ধমানের জেলা পরিষদ ও স্বাস্থ্যকর্তারা ঠিক করেন, কাটোয়া মহকুমার ৬টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে হাসপাতাল হিসাবে গড়ে তোলা হবে। বেছে নেওয়া হয়, কাটোয়া ১ ব্লকের চন্দ্রপুর, কাটোয়া ২ ব্লকের অগ্রদ্বীপ, কেতুগ্রাম ১ ও ২ ব্লকের পান্ডুগ্রাম ও শিবলুন এবং মঙ্গলকোটের লাখুড়িয়া ও ক্ষীরগ্রাম স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে। কিন্তু এর মধ্যে শিবলুন ও ক্ষীরগ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে উন্নয়নের কোনও কাজ শুরুই হয়নি।
মঙ্গলকোটে ক্ষীরগ্রাম স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল এতটাই খারাপ, যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মূল ভবনটিকে বিপজ্জনক বলে ঘোষণা করেছে পূর্ত দফতর। শিবলুন হাসপাতালের অবস্থাও তথৈবচ। বনজঙ্গল ঘিরে রয়েছে হাসপাতাল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাতভর সেখানে চলে নানা অসামাজিক কাজকর্ম। হাসপাতালের উন্নতির জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তার প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে বর্ধমানের জেলাশাসক, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও স্থানীয় বিধায়ককে।
ক্ষীরগ্রামের বাসিন্দারা জানান, ১৯৭৯ সালে চালু হয়েছিল প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। এক সময় ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী ভর্তি থাকতেন। চিকিৎসক, নার্স-কর্মীরা থাকতেন আবাসনে। প্রাথমিক ভাবে নির্ণয় করা হত যক্ষারোগ-ও। আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের ভরসার স্থল ছিল স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি।
হাসপাতালের সেই সুদিন আর নেই। রোগী ভর্তি তো কবেই উঠে গিয়েছে। বন্ধ যক্ষারোগ নির্ণয়ও। বিপজ্জনক ভবনকে এড়িয়ে তাই হাসপাতাল চলছে দু’টি আবাসনে। নার্স আবাসনে অ্যালোপ্যাথি আর চতুর্থ শ্রেণির কর্মী আবাসনে হোমিওপ্যাথি। ফার্মাসিস্ট নেই। তাই রোগী দেখার পাশাপাশি ওষুধও দিতে হয় চিকিৎসককেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসকের কথায়, “ওষুধ সংরক্ষণ করে রাখাটাও এক সমস্যা এখানে। এ ভাবে কি হাসপাতাল চলে!”
প্রতি দিন প্রায় শ’খানেক রোগী আসেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। করুণাসিন্ধু চৌধুরী, নিমাই রায়দের কথায়, “এত টুকু জায়গার মধ্যে রোগী দেখেন ডাক্তারবাবুরা। বর্ষাকালে তো আমরা ভাল করে দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত পাই না।”
ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক মাত্র নার্স শুভ্রা বিশ্বাস হাসপাতাল আবাসনে থাকার জায়গা না পেয়ে বর্ধমান থেকে যাতায়াত করেন। তা সত্ত্বেও প্রতি মাসে তাঁর বেতন থেকে ঘর ভাড়া কেটে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরও একই অবস্থা। অন্য দিকে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিত্যক্ত বেশ কয়েকটি ঘর দখল হয়ে গিয়েছে বলে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মঙ্গলকোট ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, “লাখুড়িয়ার পরেই ক্ষীরগ্রামকে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। এখন ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবস্থা ভয়ঙ্কর। দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন।”
বর্ধমান জেলার সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (কাটোয়া) শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রায় ৬৯ লক্ষ টাকার একটি পরিকল্পনা স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হয়েছে। আশা করি, দ্রুত অনুমোদন পাওয়া যাবে।”
সেই আশাতেই এ বার বুক বেঁধেছেন গ্রামবাসীরা।
Previous Story Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.