নার্স নেই, ওটিতে নিয়েও অস্ত্রোপচার হল না বধূর
পাঁচ মাস হত্যে দেওয়ার পরে বৃহস্পতিবার অস্ত্রোপচারের দিন নির্ধারিত হয়েছিল। কিন্তু অপারেশন টেবিলে উঠিয়েও নার্সের অভাবে অস্ত্রোপচার হল না এক বধূর। রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালের এই ঘটনায় ক্ষোভে পড়েছেন ওই বধূর বাড়ির লোকজন। তাঁদের বক্তব্য, জমি বন্ধক দিয়ে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এত দিন বাদে ‘ডেট’ পড়লেও স্রেফ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ‘উদাসীনতায়’ অস্ত্রোপচার হল না।
এই ঘটনায় আরও একবার রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল বেআব্রু হল। সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, মহকুমা হাসপাতালেই যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে গ্রামীণ হাসপাতাল বা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির কী দুর্দশা, তা সহজেই অনুমেয়। প্রশ্নের মুখে পড়ে রামপুরহাট হাসপাতালের সুপার হিমাদ্রি হালদারের ব্যাখ্যা, “একই দিনে দু’টি কোল্ড অপারেশনের (আগে থেকে ঠিক করা অস্ত্রোপচার) তারিখ পড়ে যাওয়ায় সমস্যা হয়েছে। তবে চিকিৎসক এবং নার্সদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ও নার্স কম থাকার জন্য এই কাণ্ড হয়েছে। তবে এ রকম হওয়া ঠিক হয়নি।”
রামপুরহাট থানার হরিওকা গ্রামের বাসিন্দা সরস্বতী মণ্ডলের জরায়ুতে সংক্রমণ হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। তাঁর স্বামী ট্রেনে হকারি করেন। সরকারি হাসপাতালে কম খরচে চিকিৎসা করানোর জন্য পাঁচ মাস ঘুরে ঘুরে অবশেষে এ দিন অস্ত্রোপচারের দিন ঠিক হয়। সেই মতো মঙ্গলবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তিও করানো হয়। সরস্বতীদেবীর কথায়, “এ দিন সকালে চিকিৎসক আমাকে জানিয়ে দেন, অস্ত্রোপচার হবে। আমাকে অপারেশনের ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকী চিকিৎসক আমার হাতে সুচ ঢুকিয়ে স্যালাইনও চালু করেন। অক্সিজেন দেওয়ার জন্য সিলিন্ডার এনে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। হঠাৎই আমাকে বলা হল, আমার অস্ত্রোপচার আজ হবে না। পরে অস্ত্রোপচারের দিন জানিয়ে দেওয়া হবে।”
হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের ইন-চার্জ উমা ভারতী বলেন, “বর্তমানে এই হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের উপরে যা রোগীর চাপ, সেই তুলনায় হাসপাতালে নার্সের সংখ্যা খুবই কম। কম করে ১২ জন নার্স দরকার। আছেন ৯ জন। তাঁদের মধ্যে এক জনকে হাসপাতালেরই অন্য বিভাগে তুলে নেওয়া হয়েছে। এক জন গিয়েছেন প্রশিক্ষণে।” তিনি জানান, বাকি ৭ জনের মধ্যে ওই সময় উপস্থিত ছিলেন চার জন। বাকিদের অন্য সময় ‘ডিউটি’ ছিল। যে সময় সরস্বতীদেবীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে আসা হয়, তখন উপস্থিত চার নার্সই অন্য অস্ত্রোপচারে ব্যস্ত ছিলেন। উমাদেবীর কথায়, “এই অবস্থায় কোল্ড অপারেশনের জন্য কোনও নার্স পাওয়া যাবে না বলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে জানিয়ে দেওয়া হয়।”
হাসপাতাল সুপারের বক্তব্য, “মহকুমা হাসপাতাল হলেও এখানে রোগীর চাপ জেলা হাসপাতালের মতো। বীরভূম, মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি পড়শি ঝাড়খণ্ড রাজ্যের অনেক রোগী এখানে রোজ আসেন। হাসপাতালে ২৮৬টি শয্যা অনুপাতে প্রয়োজন কমপক্ষে ৭২ জন নার্সের। কিন্তু আছেন ৬৫ জন। তাঁদের মধ্যেও অনেকে দরকারে ছুটি নেন। প্রশিক্ষণে যান। ফলে, সমস্যা রয়েই যায়।”
কিন্তু নার্স পাওয়া যাবে কি না, তা আগাম না জেনেই কেন অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হল ওই রোগিণীকে? সুপারের যুক্তি, “হঠাৎ দু’টি জরুরি সিজার কেস এসে পড়েছিল। তা ছাড়া অন্য কোল্ড অপারেশনে অনেকটা সময় লেগেছে। ফলে, নার্স পাওয়া যায়নি।”
সরস্বতীদেবী আপাতত হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগেই ভর্তি। হিমাদ্রিবাবুর আশ্বাস, আজ, শুক্রবার ওই বধূর অস্ত্রোপচার হবে। কিন্তু এ দিনের অভিজ্ঞতার পরে সরস্বতীদেবীর আশঙ্কা, “পাঁচ মাস পরে ডেট পড়েছিল। মানসিক প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছিলাম। একেবারে শেষ মুহূর্তে এমন অঘটন ঘটল! আদৌ কাল অস্ত্রোপচার হবে কি?”
First Page Swasth Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.