|
|
|
|
বন্ধের বিরোধিতায় পথে তৃণমূল |
পাহাড়-চুক্তি নিয়ে ফের মোর্চার সঙ্গে আলোচনায় বসবে রাজ্য |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সম্প্রতি খসড়া-চুক্তি হয়েছে। কিন্তু সেই চুক্তির কয়েকটি বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ভিন্ন মত পোষণ করেছে। সেগুলি নিয়ে মোর্চা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করবে রাজ্য সরকার। রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষ বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছেন। তবে ঠিক কোন কোন বিষয়ে কেন্দ্রের ভিন্ন মত রয়েছে, সে বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি তিনি।
এ দিনই আবার দার্জিলিং থেকে লেপচা সম্প্রদায়ের এক প্রতিনিধি দল মুখ্যসচিবের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের দাবি-দাওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে তাদের দাবির বিষয়ে প্রতিনিধি দলটি প্রকাশ্যে কিছু জানাতে চাননি। রাজ্য সরকারও এ নিয়ে মুখ খোলেনি।
এই পরিস্থিতিতে আগামী সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দার্জিলিং সফর আপাতত অনিশ্চিত। গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন গঠনের বিষয়ে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরের দিন এখনও স্থির হয়নি বলে মুখ্যসচিব এ দিন জানান। মুখ্যমন্ত্রীকে দার্জিলিং সফরের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “সফরসূচি চূড়ান্ত হলে, জানিয়ে দেব।”
এ দিকে, বন্ধ প্রত্যাহার নিয়ে সরকারের অনুরোধে সাড়া না মেলায় বন্ধ বিরোধিতায় পথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্য সরকার ও মোর্চার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার থেকে টানা পাঁচ দিনের বন্ধ শুরু হওয়ার কথা উত্তরবঙ্গে। প্রথম দিন বন্ধের ডাক দিয়েছে জনচেতনা, তরাই-ডুয়ার্স নাগরিক মঞ্চ, আমরা বাঙালি, জনজাগরণ-সহ আটটি সংগঠন। একে সমর্থন করেছে আদিবাসী বিকাশ পরিষদও। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল কর্মীদের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী, শিলিগুড়ির বিধায়কও রাস্তায় নামবেন। লক্ষ্য, জনজীবন স্বাভাবিক রাখা এবং পর্যটক ও নিত্যযাত্রীদের সাহায্য করা। আগামী ১৬ ও ১৭ জুলাই বিকাশ পরিষদ এবং ১৮ ও ১৯ জুলাই বাংলা ও বাংলা ভাষা বাঁচাও কমিটিও বন্ধের ডাক দিয়েছে।
আগামী কয়েক দিন জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব পূর্ত দফতরের বাংলোয় পুলিশ, প্রশাসন, পরিবহণ ব্যবসায়ী-সহ বিভিন্ন পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। গৌতমবাবু বলেন, “জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনের সঙ্গে দলীয় কর্মীদের নিয়ে রাস্তায় নামব। শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যও থাকবেন। আমরা জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে বদ্ধপরিকর। পুলিশ-প্রশাসনকে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কোনও যাত্রী, পর্যটক কারও যাতে কোনও অসুবিধে না হয়, তা দেখা হবে। ব্যবসায়ীদের দোকানপাট খুলতে বলা হয়েছে।” বৃহস্পতিবার রাতে রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের তরফে বাসিন্দাদের জনজীবন স্বাভাবিক রাখার আবেদন জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। যানবাহন, বাজার এবং যে কোনও অফিস কেউ অচল বা বন্ধ করার চেষ্টা করলে শিলিগুড়ির মহকুমা শাসকের দফতরে সঙ্গে সঙ্গে জানাতে বলা হয়েছে। এর জন্য একটি টেলিফোন নম্বরও দেওয়া হয়েছে। নম্বরটি হল- (০৩৫৩) ২৪৩০৮০০।
গৌতমবাবু সকাল থেকে এনজেপি স্টেশনে এবং রুদ্রবাবু বাগডোগরা বিমানবন্দরে থাকবেন বলে জানা গিয়েছে। তৃণমূল কর্মীরা শহরের নানা বাস স্ট্যান্ডে থাকবেন। সঙ্গে থাকবে বেসরকারি বাস। মন্ত্রীর অভিযোগ, “পাহাড়ে শান্তি ফিরেছে। পর্যটকেরা নির্ভয়ে পাহাড়ে ঘুরছেন। দার্জিলিং নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে চুক্তি হবে। সিপিএমের প্ররোচনায় কয়েকটি সংগঠন বন্ধ ডেকে অসুবিধা তৈরি করছে। কারও কোনও বক্তব্য থাকলে আসুন। আমি কথা বলব।” পাহাড় সমস্যা, আলাদা রাজ্যের দাবির প্রশ্নে বাম সরকারের আমলে একাধিক বার পাহাড় ও সমতলে টানা বন্ধ হয়েছে। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম টানা বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে।
পাহাড় চুক্তি করতে মুখ্যমন্ত্রী কবে দার্জিলিং আসবেন, তা নিয়ে সরকারি ভাবে কিছু ঠিক হয়নি। গৌতমবাবু বলেন, “বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর দফতর দেখছে। তাঁর দার্জিলিং সফর নিয়ে এখনও কিছু জানি না।” মন্ত্রী ও বিধায়কের এ দিন কলকাতা যাওয়ার কথা ছিল। বন্ধের কারণে তা বাতিল হয়। স্বাভাবিক ভাবে বাস চালানোর কথা ঘোষণা করেছে এনবিএসটিসি’। ওই সংস্থার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “সিপিএম জনজীবন স্তব্ধ করার চক্রান্ত করছে। তা রুখতে হবে। এনবিএসটিসি’র সমস্ত বাস চলবে।” সংস্থার বোর্ড সদস্য সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “কর্মীরা যাঁরা ছুটি নিয়েছেন, তাঁদের কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে।”
দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের তরফেও বন্ধের বিরোধিতার জন্য বাসিন্দা, ব্যবসায়ীদের আহ্বান করা হয়েছে। জেলা ফ্রন্টের আহ্বায়ক অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “জাতিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ডাকা বন্ধের বিরোধিতা করছি আমরা। মানুষের কাছে আহ্বান, বন্ধ প্রত্যাখ্যান করুন। আমরা কাউকে মদত দিচ্ছি না। ওই ধরনের রাজনীতি বরাবর তৃণমূল করে এসেছে। বরাবরই ওঁদের দু’মুখো নীতি রয়েছে।” সেই সঙ্গে পাহাড় নিয়ে রাজ্য ও মোর্চার চুক্তি সর্বসমক্ষে প্রকাশ করা, বিধানসভায় চুক্তিটি পেশ করা এবং সবর্দল সভা ডাকারও দাবি জানিয়েছে সিপিএম। অশোকবাবু বলেন, “অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার নাম নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আদতে মনে হচ্ছে এটা আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রথম ধাপ। কারণ, এর কোনও আইন প্রণয়নের ক্ষমতা নেই। সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকছে না। আমরা তথ্য জানার অধিকারে রাজ্যকে চিঠি দেব।” বন্ধের বিরোধিতা করেছেন সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, “এই বন্ধ সমর্থন করছি না। আলোচনার মাধ্যমেই পাহাড় সমস্যা মেটাতে হবে।” এক দিনের বন্ধে উত্তরবঙ্গে ১২ কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে জানান উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ী সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস। |
|
|
|
|
|