|
|
|
|
শিয়ালদহ থেকে সল্টলেক পাঁচশো হাঁকল প্রাইভেট |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
স্বাভাবিক জীবন একেবারে থমকে যায়নি ঠিকই। তবে দুর্ভোগের বহরও কম কিছু ছিল না।
রাজ্যে তৃণমূল-কংগ্রেস জমানায় প্রথম পরিবহণ ধর্মঘট বৃহস্পতিবার নয়-নয় করে অনেকটাই প্রভাব ফেলল। বাস-মিনি-ট্যাক্সিমালিকদের বড় অংশ ধর্মঘটে সামিল হয়েছিলেন। অন্য দিকে সরকারি বাস-ট্রাম চলার কথা ছিল, চলেওছে। কিন্তু রাস্তায় বেরনো মানুষের ভোগান্তি লাঘবের পক্ষে তার সংখ্যা আদৌ যথেষ্ট ছিল না।
পরিবহণমন্ত্রী সুব্রত বক্সি অবশ্য দাবি করেছেন, সার্বিক পরিবহণের সামান্য অংশই এ দিনের ধর্মঘটে সামিল হয়েছে। তিনি বলেন, “রাজ্যের মানুষ অর্থনৈতিক ভগ্নস্তূপে দাঁড়িয়ে। সরকার এখন ভাড়া বাড়িয়ে তাঁদের উপরে চাপ সৃষ্টি করতে চায় না। তা ছাড়া জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি হলেই যদি ভাড়া বাড়াতে হয়, তা হলে তো বছরে একাধিক বার যাত্রী-ভাড়া বাড়াতে
হবে!” কিন্তু সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার পরিবহণ-মালিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসল না কেন?
সুব্রতবাবুর জবাব, “কাদের সঙ্গে বসব? বাস, ট্যাক্সি, মিনি সবার হরেক সংগঠন। এক-একটার এক-এক রকম মত। কেন্দ্রীয় সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে সরকারের আপত্তি নেই।”
এই টানাপোড়েনের ফল এ দিন ভুগতে হয়েছে আম-নাগরিককে। যাঁরা ট্রেনে চেপে হাওড়া বা শিয়ালদহ স্টেশনে এসে নেমেছেন, তাঁদেরই নাকাল হতে হয়েছে সবচেয়ে বেশি। কারণ, ট্যাক্সি ছিল না বললেই চলে। বেলা দশটায়, অর্থাৎ ভরা অফিসটাইমেও দেখা গেল, শিয়ালদহের প্রিপেড ট্যাক্সির স্ট্যান্ড খাঁ খাঁ! মওকা বুঝে কিছু প্রাইভেট গাড়ি চুটিয়ে ‘ব্যবসা’ করেছে। যেমন, লটবহর নিয়ে এক পরিবার সল্টলেক যেতে চাইলে প্রাইভেটের চালক দর হাঁকলেন পাঁচশো টাকা! উপায়ান্তর না-দেখে ওঁরা তাতেই রাজি। হাওড়া স্টেশনেও প্রিপেড ট্যাক্সির দেখা মেলেনি। ব্যাগ-বোঁচকা নিয়ে ট্রেন থেকে নামা লোকজন অগত্যা হাঁটা দিয়েছেন বাসস্ট্যান্ডের দিকে। সেখানেও বিশেষ লাভ হয়নি। বাস যে হাতে গোনা! |
|
তবে সমস্যা আগাম আঁচ করে বহু লোক এ দিন পথে বেরনোরই ঝুঁকি নেননি। বেশ কিছু স্কুল আগেই ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছিল। আবার শিক্ষক-শিক্ষিকা না-আসায় খুদে পড়ুয়াদের বহু স্কুলে এ দিন সাতসকালে ছুটি হয়ে যায়। অফিস-আদালতেও হাজিরা ছিল তুলনায় হাল্কা। ফলে যে সব বাস-ট্রাম পথে বেরিয়েছিল, তাতেও খুব বেশি সওয়ারি নজরে পড়েনি। একই কারণে মেট্রো-পরিষেবা স্বাভাবিক থাকলেও তাতে যাত্রী হয়েছে দৈনিক গড়ের ১৫% কম।
পরিবহণমন্ত্রীর দাবি: দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় ধর্মঘটের প্রভাব পড়েনি বললেই চলে। মিনিবাস অবশ্য চলেছে খুব কম। উত্তর চব্বিশ পরগনাতেও সরকারি বাস স্বাভাবিক ভাবে চলেছে। আর ট্যাক্সি বেরিয়েছে অতি সামান্য। সকালে বিমানবন্দরেও ট্যাক্সির দেখা মেলেনি। বেলা বাড়লে অল্প কিছু ট্যাক্সি চলতে শুরু করে। বস্তুত কলকাতায় এ দিন যাঁরা রাস্তায় বেরিয়েছেন, তাঁদের প্রথম পছন্দ ছিল অটো ও মেট্রো। ধর্মঘটে অটো সামিল হয়নি। কিন্তু কোনও কোনও রুটে অটোচালকেরা বেশি ভাড়া আদায় করেছেন বলে অভিযোগ। বিভিন্ন রুটে ভূতল পরিবহণের বাতানুকূল বাস ছেড়েছে কিছুক্ষণ অন্তর। হুগলি নদীতে লঞ্চ-পরিষেবা চালু ছিল।
|
ধর্মঘটে পরিবহণ |
যান-হকিকত |
প্রতিদিন
চলে |
বৃহস্পতিবার চলেছে |
ট্যাক্সি |
৩৫০০০ |
২০০০ |
বেসরকারি বাস |
৩৯০০০ |
২০০০০ |
মিনিবাস |
৪০০০ |
১৫০০ |
সরকারি বাস |
১৩০০ |
১৭০০ |
ট্রাম |
৮৫ |
১২৯ |
ট্রাম কোম্পানির বাস |
২০৫ |
২৬৮ |
|
এ দিকে পরিবহণ ধর্মঘটকে ঘিরে বিক্ষিপ্ত কিছু অপ্রীতিকর কাণ্ডও ঘটেছে এ দিন। যেমন, সকালে কয়েকটি যুবক মোটরবাইকে চেপে হাওড়ার বাসস্ট্যান্ডে এসে সাতটি বাস ভাঙচুর করে। পরে তারা হাওড়া ফাঁসিতলার মোড়ে হাওড়ামুখী একটি দিঘার বাস আটকেও তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ।
এ প্রসঙ্গে ‘হাওড়া জেলা বাস-মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর মুখপাত্র নিখিলেশ চক্রবর্তী বলেন, “কিছু রুটের বাস চলতে দেখে আমাদেরই সংগঠনের কিছু চালক ও কন্ডাক্টর খুবই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। তাঁরাই এই কাজ করে থাকতে পারেন। খুবই নিন্দনীয় ঘটনা।” বেলুড়ে কিছু যুবক একটি বাস ভাঙচুর করে। আবার লেকটাউন থানার শ্রীভূমিতেও ভিআইপি রোডে দু’টি বেসরকারি বাস থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে ভাঙচুর করে এক দল যুবক। লেকটাউন ট্র্যাফিক গার্ড গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। |
|
|
|
|
|