|
|
|
|
সেই লালগড় থেকে শুরু সবুজের সন্ধান |
বরুণ দে • লালগড় |
অরণ্য সপ্তাহ পালনেও শিরোনামে সেই জঙ্গলমহল। বৃহস্পতিবার লালগড় থেকেই শুরু হল পশ্চিম মেদিনীপুরের অরণ্য সপ্তাহ পালন। সপ্তাহভর গড়বেতা, বাঁশপাহাড়ি, নয়াগ্রাম, গোয়ালতোড়ে প্রচুর গাছ লাগানো হবে। সেই সঙ্গে চারা বিরতণ, অলোচনাসভা তো থাকছেই।
অশান্তির জেরে গত কয়েক বছরে প্রচুর গাছ কাটা পড়েছে জঙ্গলমহলে। ধ্বংস হয়েছে সবুজ। অবাধে চলেছে কাঠ পাচার। রাজ্যের নতুন সরকার গোড়া থেকেই জঙ্গলমহলকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। অরণ্য সপ্তাহেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ বারের অরণ্য সপ্তাহের স্লোগান হল, ‘চলো যাই সবুজের সন্ধানে।’ লালগড় থেকেই সেই সন্ধানের সূচনা হল। সেই সঙ্গে আর্থ-সামাজিক মানোন্নয়নে কেন্দ্রীয় অর্থে জঙ্গলমহলের নানা প্রান্তে তৈরি হচ্ছে কমিউনিটি হল, মার্কেট শেড, গভীর নলকূপ, পাম্প হাউস। |
|
লালগড়ে পড়ুয়াদের মিছিল।
|
বন দফতরই এই কাজ করছে। বৃহস্পতিবার লালগড় ও শালবনিতে ৩টি কমিউনিটি হলের উদ্বোধন হয়। মেদিনীপুরের ডিএফও আশিস সামন্ত জানান, জেলায় এ বার ২০ লক্ষ গাছ লাগানোর ব্যবস্থা হয়েছে। খড়গপুরের ডিএফও মিলনকান্তি মণ্ডল বলেন,“সপ্তাহ জুড়ে জঙ্গলমহলেই বেশি বৃক্ষরোপণে জোর দেওয়া হয়েছে।” এ দিন লালগড় রামকৃষ্ণ স্কুল চত্বরে অরণ্য সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিডিও মানস হালদার, শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো। বনসুরক্ষা কমিটির সদস্যদের হাতে সব মিলিয়ে ৩৮ লক্ষ টাকা তুলে দেওয়া হয়। পাতা সেলাই, ধান ঝাড়ার মেশিন বিলি করা হয়। বিধায়ক শ্রীকান্তবাবু বলেন, “এখানে এমন কর্মসূচি রূপায়িত হবে যাতে আর্থ-সামাজিক অবস্থা পাল্টাবে। মানুষের যন্ত্রণা দূর হবে।” গাছ লাগানোর প্রয়োজনীয়তা মনে করিয়ে দিয়ে বিধায়কের আহ্বান, “আরও বেশি গাছ লাগাতে হবে। অরণ্যের অধিকার জঙ্গলমহলের মানুষের হাতেই থাকবে।”
দেশের ‘পিছিয়ে পড়া’ জেলাগুলোর উন্নয়নে বিশেষ প্রকল্প নিয়েছে কেন্দ্র। ইন্টিগ্রেটেড এ্যাকশন প্ল্যান (আইএপি)-এর বরাদ্দ অর্থে জঙ্গলমহল জুড়ে নানা কাজ চলছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “কেন্দ্রের নির্দেশ রয়েছে চোখে দেখা যায় এমন কাজই করতে হবে। সেই মতো কাজ শুরু হয়েছে। বড় ভূমিকা নিচ্ছে বন দফতরও।” শালবনির ভীমপুরে মার্কেট শেড ও কমিউনিটি হল তৈরি হয়েছে। এ দিন এর উদ্বোধন করেন বিধায়ক। বনসুরক্ষা কমিটির সদস্য অনাদি মাহাতো বলেন, “এ বার শেডের নীচেই বাজার বসবে। কমিউনিটি হলে গ্রামোন্নয়নের মিটিং হবে।” ভীমপুরে দাঁড়িয়েই গ্রামবাসীর চাহিদার কথা শোনেন বন দফতরের কর্তারা। পানীয় জলের সমস্যার কথা উঠে আসে বার বার। ডিএফও (রূপনারায়ণ) রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, “আপনাদের আর কী প্রয়োজন জানাবেন। আর যা তৈরি হল তা আপনাদেরই রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।” এরপর বাঁধগোড়াতেও কমিটিউনিটি হলের উদ্বোধন হয়। বীরকাঁড়ে গভীর নলকূপ ও পাম্প হাউস চালু হয়। এখানে ৭২টি পরিবারের বসবাস। কিন্তু জলাভাবে প্রায়ই চাষের কাজ মার খায়। এ বার পাম্পের জলে ৭০-৮০ বিঘা জমিতে চাষ করা যাবে। |
|
শালবনির ভীমপুরে কমিউনিটি হলের উদ্বোধনে বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো |
ঝাড়গ্রামেও এ দিন অরণ্য সপ্তাহের প্রথম দিনটি পালন করা হয়। এই উপলক্ষে শ্রী রামকৃষ্ণ সারদাপীঠ কন্যাগুরুকুল প্রাঙ্গণে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঝাড়গ্রাম বন-বিভাগ। উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক সুকুমার হাঁসদা, বিনপুরের বিধায়ক দিবাকর হাঁসদা, কন্যাগুরুকুলের মঠাধ্যক্ষা পরিব্রাজিকা বেদহৃদয়া, ঝাড়গ্রামের ডিএফও অশোকপ্রতাপ সিংহ। স্কুলচত্বরে ফল ও ভেষজ গাছের চারা লাগানো হয়। একটি জল প্রকল্পেরও উদ্বোধন হয়।
|
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
|
|
|
|
|