|
|
|
|
নুন মেশানো চামড়া থেকে দূষণ বন্ধে কেন্দ্রীয় নির্দেশ |
পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
দূষণের ‘ভূত’ যেন পিছু ছাড়ছে না চর্মশিল্পের। পচন রোধের জন্য মৃত গরু, ছাগল, মোষের চামড়ায় নুন মিশিয়ে সংরক্ষণ করে রাখাটাই এই শিল্পে দীর্ঘ কালের প্রথা। কিন্তু চামড়ার ওই নুনই পরে নদী, খাল-বিলের জলে মিশে দূষণ ছড়ায় বলে অভিযোগ উঠেছে। আর তার জেরেই নুন মেশানো চামড়া আর চর্মশিল্পে ব্যবহার করা যাবে না বলে সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।
তা হলে সংরক্ষণের বিকল্প উপায় কী? পর্ষদ কিন্তু অন্য কোনও উপায় ট্যানারি মালিকদের জানায়নি। বরং জানিয়েছে, ওই ধরনের চামড়া দেশের বাজার থেকে তো কেনা যাবেই না, বিদেশ থেকেও আমদানি করা নিষিদ্ধ।
মৃত পশুর চামড়া ছাড়ানোর পরে তাতে প্রচুর পরিমাণে নুন মাখিয়ে গুদামে রেখে দেওয়া হয়। ওই চামড়াই পরে বাজার থেকে কিনে আনেন ট্যানারি মালিকরা। পর্ষদের যুক্তি, সোডিয়াম ক্লোরাইড-সহ অন্যান্য রাসায়নিক যুক্ত ওই নুনই ট্যানারির বর্জ্য জলের মাধ্যমে বেরিয়ে এসে দূষণ ছড়ায়। মিষ্টি জল লবণাক্ত করে তোলে। ‘ক্যালকাটা লেদার কমপ্লেক্স ট্যানারিজ অ্যাসোসিয়েশনের’ সভাপতি রমেশ জুনজা বলেন, “চামড়া যাঁরা সংগ্রহ করেন প্রত্যেকেই নুন ব্যবহার করে। অন্য কোনও পদ্ধতিতে চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা অন্তত এ দেশে চালু নেই। পর্ষদের নির্দেশ মানতে হলে সব ট্যানারি বন্ধ হয়ে যাবে।” দূষণ বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ট্যানারিগুলিতে বর্জ্য জল পরিশোধনের পরেও ওই নুন থেকে যায়। ফলে দূষিত জল চর্মশিল্প তালুকগুলি থেকে গিয়ে নদীতে মিশলে তা দূষণ ছড়ায়। আবার সেচের কাজে ওই জল ব্যবহার হলে কৃষি জমি লবণাক্ত হয়ে উর্বরাশক্তি হারায়।
কাঁচা চামড়ার অভাবে এমনিতেই পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের ট্যানারি শিল্প চরম সঙ্কটে রয়েছে। মালিকদের অভিযোগ, চোরা পথে দেশের চামড়া রফতানি হয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশগুলিতে। এই অবস্থায় পর্ষদের নির্দেশ মানতে হলে ট্যানারি বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই বলে দেশের চর্মশিল্প মহল মনে করছে।
কিন্তু চামড়ায় নুন দেওয়া ছাড়া কি অন্য উপায় নেই?
মৃত পশুর শরীর থেকে চামড়া ছাড়ানোর পর তার গায়ে পাতলা মাংস, রক্ত, কিছু শিরা-উপশিরা থেকে যায়। আর থাকে অত্যন্ত সক্রিয় এবং শক্তিশালী কিছু বিশেষ ধরনের জীবাণু। কাঁচা চামড়া শুধু ফেলে রাখলে ওই জীবাণুর দল চামড়ার গায়ে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে পচন ধরিয়ে দেয়। আর উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এমনও কিছু জীবাণু রয়েছে, যেগুলি এক দিনের মধ্যে ৪০০ কোটি পর্যন্ত স্বজাতির জীবাণুর জন্ম দিতে পারে। এই জীবাণুদের বংশ নাশ করতেই ‘খারি সল্ট’ নামে এক বিশেষ ধরনের নুন চামড়ায় মাখিয়ে রেখে দেওয়া হয়। কারণ ওই নুনে থাকে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম সালফেট, সোডিয়াম সালফেট ও সোডিয়াম ক্লোরাইড। যা ওই জীবাণুদের ধ্বংস করার মোক্ষম মারণাস্ত্র।
বিশেষজ্ঞদের যুক্তি, নুনের ওই ম্যাগনেসিয়াম এবং সোডিয়াম সালফেটই জলের সঙ্গে মিশলে ভয়ঙ্কর ক্ষতি হয়। অন্য দিকে ট্যানারি মালিকদের বক্তব্য, নুন থাকবে না, এমন চামড়া কোথায় মিলবে তার সন্ধান তা হলে পর্ষদ জানাক। কেন্দ্রীয় পর্ষদের ওই নির্দেশিকা কার্যকর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি এসেছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে। রাজ্যের এক কর্তা জানান, সমস্যাটি জটিল। নুনের পরিবর্তে চামড়া সংরক্ষণের বিকল্প কোনও উপায়ও কেউ জানে না। আবার দূষণের সমস্যাটাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিষয়টি নিয়ে ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। |
|
|
|
|
|