অরক্ষিত’ লিলুয়া হোম
ভোরে পাঁচিল টপকে চম্পট তিন কিশোরীর
কোয়ার্টার্স রয়েছে। কিন্তু সুপার সেখানে রাতে থাকেন না। ডেপুটি সুপারের পদ দীর্ঘ দিন খালি। কর্মী হাতে গোনা। আর রক্ষী? সাকুল্যে এক জন। তিনিই রোজ রাতে পাহারা দেন!
দুর্গত মেয়েদের নিরাপত্তাদানে রাজ্যের অন্যতম সরকারি আবাস লিলুয়া হোমের নিরাপত্তার হাল এমনই ঢিলেঢালা। যার সুযোগে বৃহস্পতিবার ভোরে হোমের পাঁচিল ডিঙিয়ে পালাল তিন কিশোরী। পিঙ্কি মিশ্র, সলমা খাতুন ও শ্রাবণী পাল নামে ১৪-১৭ বছরের ওই তিন জনের খোঁজে তল্লাশিতে নেমেছে হাওড়া পুলিশ। রাজ্যের সব থানাকে সতর্ক করা হয়েছে। হোম-কর্মীদের গাফিলতি ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ-সূত্রের খবর, হোমের পিছনের কুড়ি ফুট উঁচু পাঁচিল টপকে পালাতে চেষ্টা করে সাত কিশোরী। পাঁচিলের লোহার শিকে ওড়না বেঁধে তা বেয়ে পাঁচ জন ও-পারে চলেও যায়। দু’জনকে রক্ষী ধরে ফেলেন। পরে হোমের কর্মীরা পাশের কারখানার ভিতরে আরও দু’জনের হদিস পান। কারখানা চত্বরের একটা ঝোপে তারা লুকিয়ে ছিল। বেলা বারোটা নাগাদ তাদের হোমে ফিরিয়ে আনা হয়।
হোমের ‘আশ্রয়’ ছেড়ে ওরা পালাতে চেয়েছিল কেন? পুলিশের দাবি: হোমে অতি খারাপ মানের খাবার দেওয়া হয় বলে অভিযোগ জানিয়েছে ধরা-পড়া মেয়েরা। তাদের আরও নালিশ, আবাসিকদের ছোট্ট ঘরে প্রায় বন্দি করে রাখা হয়। এবং তারা আরও লেখাপড়া করতে চাইলেও কর্তৃপক্ষ গা করেন না। লিলুয়া হোম-কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানাচ্ছেন, ষষ্ঠ শ্রেণির পরে ওখানে লেখাপড়ার সুযোগ নেই।
কিন্তু লিলুয়া হোম থেকে মেয়ে পালানোর ঘটনা তো নতুন নয়। বার বার কী ভাবে তা সম্ভব হচ্ছে?
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, হোমের পিছনে ওই কারখানার অবস্থানগত সুযোগ নিচ্ছে পলায়নে ইচ্ছুক মেয়েরা। কোনও মতে হোমের পাঁচিল ডিঙিয়ে কারখানা চত্বরে ঢুকে পড়লেই কাজটা অনেক সোজা হয়ে যায়। কারণ, কাকভোরে বা গভীর রাতে কারখানা-কর্মীদের চোখ এড়িয়ে কারখানার লোহার দরজা টপকানো কার্যত কোনও ব্যাপারই নয়। আর ওই ফটক পেরোলেই বড় রাস্তা।
এ দিন পিঙ্কি-সলমা-শ্রাবণীরা এ ভাবেই গা ঢাকা দিয়েছে বলে পুলিশের সন্দেহ। হোম লাগোয়া কারখানাটির রক্ষী শ্যামল দত্তের কথাতেও তেমনই ইঙ্গিত। তিনি বলেন, “ভোর পৌনে ৫টা নাগাদ হঠাৎ শুনি, গেট টপকানোর আওয়াজ! বেরিয়ে দেখি, একটা মেয়ে গেটের উপরে! ধরতে গিয়েও পারলাম না। তখন সবাইকে খবর দিলাম।” পুলিশের অনুমান, শ্যামলবাবু আওয়াজ শোনার আগেই বাকি দু’জন চম্পট দেয়। আর যে দু’জন তখনও গেটে চড়তে পারেনি, তারা সুযোগের অপেক্ষায় ঝোপে লুকিয়ে ছিল। হোম-কর্মীরা পরে তাদেরই পাকড়াও করেন।
তবে পুরো ঘটনার জেরে হোম-পরিচালনায় গাফিলতির ছবিটাই আরও প্রকট হয়েছে। হাওড়া জেলা সমাজকল্যাণ বিভাগের কর্মীরাও মানছেন, লিলুয়া হোমের ‘অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি’র কারণেই আবাসিকেরা বার বার পালাচ্ছে। বিভাগের তৃণমূল সমর্থিত কর্মী-সংগঠনের সভাপতি সুবীর সাহার অভিযোগ, “বামফ্রন্টের অপশাসনে লিলুয়া হোমের হাল শোচনীয়। অবিলম্বে আধুনিকীকরণ জরুরি। সমাজকল্যাণমন্ত্রীকে জানিয়েছি।” মন্ত্রী কী বলেন? রাজ্য নারী-শিশু উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র জানান, তিনি দফতরের সচিব রিনচেন টেম্পোকে ওই কিশোরীদের খোঁজে উদ্যোগী হতে বলেছেন। সাবিত্রীদেবীর কথায় “লিলুয়া হোম নিয়ে অভিযোগ আছে। ওই হোমের আধুনিকীকরণে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বাজেটে অর্থ বরাদ্দও হয়েছে।” বালির তৃণমূল বিধায়ক সুলতান সিংহের মন্তব্য, “লিলুয়া হোমের আবাসিকদের পুনর্বাসনের সমস্যা আছে। কমিটি গড়ে তা সমাধানের চেষ্টা হবে।”
Previous Story South Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.