মুম্বই বিস্ফোরণের জন্য ভিন্ রাজ্যের লোকদের দুষলেন মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস) প্রধান রাজ ঠাকরে। রাজের মতে, “গত দশ বছরে মুম্বইয়ে অপরাধের হার বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। খোঁজ নিয়ে দেখুন, কারা এর পিছনে রয়েছে।” এমএনএস প্রধান মনে করেন, প্রতি বারই পুলিশ বা গোয়েন্দা দফতরের উপর দায় চাপানো উচিত নয়। মুম্বই পুলিশ যথেষ্ট করে। কিন্তু বাইরে থেকে আসা এত লোক সামলানো সম্ভব নয়। তা ছাড়া জঙ্গি হামলার অপরাধীদের কখনওই ফাঁসি দেওয়া হয় না। এ ভাবে বাড়বাড়ন্ত আটকানো সম্ভব? তাঁর কথায়, “কাসভের মতো একটা বাইরের ছেলে তাজ হোটেলের রান্নাঘরটাও চেনে, আমি-আপনি শহরে থেকেও তা চিনি না।”
|
বিস্ফোরণে নিহত ও আহতদের প্রতি সমবেদনা জানাতে সব অনুষ্ঠান বাতিল করল বলিউড। বুধবারই ফরাসি সরকারের সাম্মানিক পুরস্কার অনুষ্ঠান বাতিল করেছিলেন ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন। ‘ডন টু’-এ শাহরুখ খানের প্রথম ছবি প্রকাশ অনুষ্ঠান বাতিল করে দেন পরিচালক ফারহান আখতার। মহেশ ভট্ট পরিচালিত ‘মার্ডার টু’-এর পার্টিও বাতিল হয়ে যায়। ‘মার্ডার টু’-এর অভিনেতা ইমরান হাশমি বলেন, “মানুষ মারা যাচ্ছে আর আমরা পার্টি করব?” রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের উপস্থিতিতে মহারাষ্ট্র আইনসভার ৭৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল ১৯ জুলাই। সেটিও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে একই কারণে।
|
মুম্বই বিস্ফোরণের রাতেও কয়েক জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বলিউডের পরিচালক-অভিনেতা-অভিনেত্রী ব্যস্ত থাকলেন ফ্যাশন শো আর পার্টি নিয়ে। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা অশোককুমার প্রধান ছিলেন পার্টির আয়োজক। দিল্লির এক অভিজাত হোটেলে বুধবার রাতে দেখা গেল পর্যটনমন্ত্রী সুবোধকান্ত সহায়, বিজেপির জাতীয় সচিব বাণী ত্রিপাঠী, প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীবপ্রতাপ রুডিকে। সুরেশ ওবেরয়, মধুর ভান্ডারকর, মুগ্ধা গডসে ও অনুষ্কা শর্মার মতো বলিউডের চেনা মুখদেরও দেখা যায় পার্টিতে। মুম্বই বিস্ফোরণের কথা কি এঁরা জানতে পারেননি? মধুর বললেন, “এমন দিনে আসতে চাইনি। কিন্তু অশোক প্রধানও বন্ধু, তাই ওঁর কথা ফেলতে পারিনি।”
|
মুম্বই বিস্ফোরণ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ অমিতাভ বচ্চন। টিভি চ্যানেলগুলো যে ভাবে নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার জেরে ঘটনাস্থলে গিয়ে কৃতিত্ব জাহির করার চেষ্টা করছে, তাতেই রুষ্ট প্রবীণ এই অভিনেতা। তাঁর কথায়, “প্রতি বারের মতো এ বারও মিডিয়া এই মর্মান্তিক ঘটনা আপনাদের ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য লড়াই করবে। আর প্রতি বারের মতো আমাদের মুম্বই শহর সব ভুলে উঠে দাঁড়াবে। তার পর ফের অন্য ঘটনা নিয়ে মাথা ঘামাবে সংবাদমাধ্যম।”
|
২০০৬ সালে এক বার তিনি ফাঁকি দিয়েছিলেন মৃত্যুকে। সে বার ট্রেন থেকে নামার পরই সেই ট্রেনে ঘটেছিল বিস্ফোরণ। বুধবার দাদারে আবার মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেলেন তিনি। তাঁর নাম দীপক পটেল (৩৬)। পেশায় ইন্টিরিয়র ডেকরেটর। নিজের গাড়ি নিয়ে দাদারে এসেছিলেন তিনি। বাসস্টপের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ই হঠাৎ ঘটে বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণে তাঁর গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বেঁচে যান তিনি। অনেক সংবাদমাধ্যম শুরুতে প্রচার করে, আদতে দীপকের গাড়িটিই সন্ত্রাসবাদীরা ব্যবহার করেছিল। এই খবর প্রচার হতে শুরু করলে স্বভাবতই হতভম্ব হয়ে যান দীপক। পরে অবশ্য ভুল ভাঙে সকলের।
|
এর আগে দু’বারই তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন। তাঁর নাম ছিল প্রত্যক্ষদর্শীর তালিকায়। কিন্তু এ বার আর তেমনটা হল না। এ বার তিনি নিজেই জখমের তালিকায়। তাঁর নাম সুন্দর সিংহ বিস্ত। পেশায় তিনি ডাকপিওন। ১৯৯৩ এবং ২০০৩ সালে এই জাভেরি বাজারেই ঘটেছিল বিস্ফোরণ। দু’টো ক্ষেত্রেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সুন্দর। ভাগ্যের জোরে বেঁচে গিয়েছিলেন দু’বারই। গায়ে একটু আঁচড়ও লাগেনি। কিন্তু বুধবারের বিস্ফোরণ থেকে তিনি আর রক্ষা পেলেন না। মারাত্মক জখম অবস্থায় এখন জে জে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সুন্দর।
|
তিরিশ সেকেন্ডের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেন কান্দিভালির মুকেশ পরমার। পরিবহণ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত এই প্রবীণ ব্যক্তি বুধবার সন্ধ্যায় জাভেরি বাজারেই ছিলেন। বিস্ফোরণের মাত্র তিরিশ সেকেন্ড আগে তিনি বেরিয়ে যান সেখান থেকে। “সপ্তাহে পাঁচ দিনই জাভেরি বাজারে কাজে আসতে হয়। কালও এসেছিলাম। ভিড়ের ভিতর থেকে সবে বেরিয়ে এসেছি। সঙ্গে সঙ্গে দারুণ জোরে একটা শব্দ। সবাই দেখলাম ছুটছে। আমিও ছুটতে শুরু করলাম।” বলছিলেন মুকেশ। তার পর এক দোকানির কাছে শুনলেন বিস্ফোরণ ঘটেছে। মুকেশ তখন দ্বিতীয় জীবন পেয়ে ধন্যবাদ দিচ্ছেন ঈশ্বরকে।
|
মুম্বই বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে দু’জনের কফিনবন্দি দেহ পৌঁছল কলকাতায়। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ দেহ দু’টি আনা হয় বিমানে। তাঁদের নাম প্রভাত নায়েক (২৭) এবং সূর্যকান্ত পাণ্ডে। প্রভাতবাবুর বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরে। সূর্যবাবু জামশেদপুরের বাসিন্দা। দু’জনেই মুম্বইয়ে জরির কাজ করতেন। প্রভাতবাবুর দেহ নিয়ে তাঁর ভাই বিমানবন্দরে নেমে রাতেই পটাশপুর রওনা হয়ে যান। তিনি বলেন, “দাদা মুম্বইয়ে জরির কাজ করতেন। মাত্র ১১ মাস আগে বিয়ে করেন। বৌদি গ্রামের বাড়িতেই থাকেন।” গুরুপদবাবু জানান, প্রভাতবাবু বুধবার সন্ধ্যায় মুম্বইয়ের জাভেরি বাজারে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। বিস্ফোরণের পরে দাদার খোঁজ শুরু করেন গুরুপদবাবু। বৃহস্পতিবার সকালে জে জে হাসপাতালের মর্গে দাদার দেহ খুঁজে পান। সূর্যবাবুর দেহ বিমানে রাঁচি নিয়ে যাওয়া হবে। |