ঘরে ফেরার কথা ভাবছেন স্বর্ণকাররা
বার?
তল্পিতল্পা গুটিয়ে ‘দেশে’ ফেরা? নাকি রুটি-রুজির তাগিদে আতঙ্কের মধ্যেও থেকে যাওয়া?
বুধবারের রাত বিনিদ্র কেটেছে। আর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ওই দুশ্চিন্তা কপালে ভাঁজ ফেলেছে মুম্বইয়ের জাভেরি বাজারের দীর্ঘদিনের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুশীল কোটাল, গোবিন্দ দাস, গোরা মেদ্দার মতো অনেকের। কারও বাড়ি হাওড়ায়, কারও হুগলি, মেদিনীপুর বা বর্ধমানে। এ দিন কেউই দোকান খোলেননি। তাঁদের ভাবনা ‘দেশে’ ফিরলে সব কিছু নতুন করে শুরু করতে হবে। না ফিরলে থাকতে হবে ‘নিরাপত্তাহীনতা’য়।
ঠিক যেন শাঁখের করাত!
১৯৯৩, ২০০৩, ২০১১তিন বার জঙ্গি হানায় কেঁপে উঠেছেন মুম্বইয়ের ‘বাঙালিটোলা’ জাভেরি বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী, কারিগরেরা। কিন্তু এ বার তাঁরা সরাসরিই বলছেন, “মুম্বই এখন আতঙ্কনগরী। এ শহরে আর নিরাপত্তাই নেই।” টেলিফোনে সকলের গলায় উদ্বেগ আর আতঙ্ক।
টেকমেমোন স্ট্রিট, আব্দুর রহমান স্ট্রিট, নাস্তা (খাউ) গলি, ধঞ্জি স্ট্রিট জাভেরি বাজারকে ঘিরে রয়েছে এই রাস্তাগুলি। দু’দিকে অজস্র বহুতলে পায়রার খোপের মতো দোকান। যার সিংহভাগ মালিকানাই বাঙালিদের হাতে। তাঁদের অনেকেরই বাবা-ঠাকুর্দা সোনা-রুপোর কারিগর হিসাবে ঘাঁটি গেড়েছিলেন ওখানে। আর ‘দেশে’ ফেরেননি। তাঁদের উত্তরাধিকারীরা এখন সেই ব্যবসার হাল ধরেছেন।
মেদিনীপুরে উদ্বিগ্ন এক পরিবার।-নিজস্ব চিত্র
তাঁদেরই এক জন সুশীল কোটাল। আদতে ডোমজুড়ের রাঘবপুরের বাসিন্দা। জাভেরি বাজারের ধঞ্জি স্ট্রিটে একটি বাড়ির একতলায় ৩৫ বছর সোনার দোকান চালাচ্ছেন। বুধবার সন্ধ্যাতেও দোকানে ছিলেন। নাস্তা গলি পাশেই। হঠাৎই বিস্ফোরণের শব্দ শোনেন তিনি। ভেবেছিলেন গ্যাস সিলিন্ডার ফেটেছে। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিউরে ওঠেন। বৃহস্পতিবার মুম্বই থেকে ফোনে সুশীলবাবু বলেন, “বৃষ্টি হচ্ছিল বলে রাস্তায় ভিড় কম ছিল। আচমকা বিস্ফোরণে আমাদের বাড়ি কেঁপে ওঠে। নাস্তা গলির দিকে তাকিয়ে দেখি, বহু লোক ভয়ে দৌড়চ্ছে। রক্তাক্ত অবস্থায় অনেকে কাতরাচ্ছেন।”
টেকমেমোন স্ট্রিটে ১৯৮৪ থেকে সোনার দোকান চালান ডোমজুড়েরই মাকড়দহের গোবিন্দ দাস। তিনি বলেন, “বিস্ফোরণ শুনে নাস্তা গলির দিকে যাচ্ছিলাম। আগেই পুলিশ আটকে দিল। দেখলাম, একের পর এক অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকছে, বেরোচ্ছে।”
জাভেরি বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে পুরনো সংগঠন ‘বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি গোরা মেদ্দা ১৯৭৪ সাল থেকে পায়ভেলি থানার পিছনে একটি বহুতলে দোকানঘর নিয়ে ব্যবসা করছেন। বাড়ি ডোমজুড়ের দফরপুরে। এ বার তিনি ফিরে আসার চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “বিস্ফোরণের পরে বহু বাঙালি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেছি। পর পর জাভেরি বাজারকেই কেন লক্ষ্য করা হচ্ছে বুঝতে পারছি না। এই মুম্বই আগের মতো নেই। ফিরতে চাই।”
তবে ‘দেশে’ ফেরা যে সহজ হবে না, সে কথাও মানেন ব্যবসায়ীরা। কারণ, ব্যবসায়িক যোগাযোগের সবটাই মুম্বইয়ে। জাভেরি বাজারের ওই ব্যবসায়ীরা যখন ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায়, তখন তাঁদের নিয়ে একই রকম দুশ্চিন্তায় এ রাজ্যে বাস করা তাঁদের পরিবারের লোকজন।
পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটের পাকুড়িয়া গ্রামের রুইদাস পরিবারের যুবক সঞ্জয় ও তাঁর খুড়তুতো ভাই লালু জাভেরি বাজারে সোনার কাজ করেন। ওই গ্রামেরই যুবক কৌশিক কুলেও সোনার কাজ করেন মুম্বইয়ের আলিবাগে। নাস্তাগলিতে খেতে গিয়ে বিস্ফোরণে তিন জনই জখম হন বলে খবর পেয়েছেন বাড়ির লোক। কিন্তু কী অবস্থায়, কোথায় তাঁরা ভর্তি, জানতে পারছেন না। জাভেরি বাজারে যাঁর দোকানে কাজ করতেন দুই ভাই, সেই টোটন সাঁতরা কোলাঘাটের শুলনি গ্রামের বাসিন্দা। লালুর দাদা নিতাই বলেন, “দুই ভাইয়ের কাছে মোবাইল নেই। বিস্ফোরণ হয়েছে শুনে টোটনবাবুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। বৃহস্পতিবার সকালে ফোনে পাই। উনি প্রথমে কিছু বলতে চাননি। পরে জানান সঞ্জয় ও লালু হাসপাতালে ভর্তি। বিকট আওয়াজে শ্রবণশক্তি কমে গিয়েছে কৌশিকের।”
‘বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন’ সূত্রে জানা গিয়েছে, নাস্তা গলিতে বিস্ফোরণে হুগলির চণ্ডীতলার ধীমান বেলেল ও অপেরা হাউসে বিস্ফোরণে ডোমজুড়ের দফরপুর গ্রামের ধনঞ্জয় অধিকারী এবং মাকালতলার বাবুরাম দাস জখম হন। তাঁদের বম্বে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল-দাসপুরের কয়েক হাজার যুবকও মুম্বইয়ে সোনার কাজে যুক্ত। জাভেরি বাজারেই থাকেন অনেকে। তাতেই উদ্বেগ বেড়েছে। সাগরপুরের সুভাষ সামন্তের উদ্বেগে অবশ্য দাঁড়ি পড়েছে। বুধবার গভীর রাতে নাত-জামাইয়ের খোঁজ পেয়েছেন তিনি। সুভাষবাবু বলেন, “আমার নাত-জামাই নিরঞ্জন ঘাঁটা দাদারে থাকেন। বিস্ফোরণের খবর শুনেই মোবাইলে ফোন করি। যোগাযোগ করতে পারিনি। শেষে রাত আড়াইটে নাগাদ নিরঞ্জন নিজেই ফোন করে জানায় সে ভাল আছে।”


(তথ্য সহায়তা: অভিজিৎ চক্রবর্তী ও আনন্দ মণ্ডল)
Previous Story Desh Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.