সন্ত্রাস, রক্ত, মুম্বই!
দু’দশকে এই নিয়ে তেরো বার।
যাবতীয় ‘পরিচিত’ দৃশ্যের ভিড়েও কিন্তু এ বারটা আলাদা হয়ে রইল সাহায্যের নতুন ভাষায়। যে ভাষার জন্ম দিল মুম্বইয়ের সাধারণ নাগরিকরাই। বিভিন্ন ‘সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট’-এর ‘পেজ’-এ।
বিস্ফোরণের পর নিরাপত্তার খাতিরে বন্ধ করে দেওয়া হয় মোবাইল যোগাযোগ। আতঙ্ক আর উদ্বেগে কয়েক মুহূর্তের জন্য যেন থমকে গিয়েছিল মুম্বই। কিন্তু অল্প কিছু ক্ষণের মধ্যেই ত্রাতার ভূমিকায় টুইটার এবং ফেসবুক।
মুহূর্তের মধ্যেই টুইটারে তৈরি হয়ে গেল তিনটি ‘লিঙ্ক’। ‘হিয়ারটুহেল্প’, ‘নিডহেল্প’, ‘মুম্বাইব্লাস্ট’। তাতে একটা মাত্র ক্লিক করলে আক্ষরিক অর্থেই খুলে যাচ্ছে ‘সাহায্যের ঝাঁপি’। নিজের ফোন নম্বর দিয়ে সত্যার্থ নামে এক যুবকের টুইট, “খাবার, সাহায্য, আশ্রয়। যা দরকার নিঃসঙ্কোচে বল। আমরা তোমাদের পাশে আছি।” শচীন মলহোত্র নামে এক জন খুলে দিয়েছেন নিজের বাড়ির দরজাও, “যদি ট্যাক্সি না পেয়ে মাঝপথে আটকে পড় তা হলে চেম্বুরে আমার বাড়িতে থেকে যেতে পার।” সঙ্গে বাড়ির ঠিকানা এবং ফোন নম্বর। |
সাধারণ ভাবে, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলিতে মোবাইল নম্বর দেওয়াটা নিরাপদ মনে করেন না অনেকেই। কিন্তু শহরের এই চরম বিপদের দিনে সে সব ভুলে গিয়ে সহনাগরিকদের সাহায্য করাই ছিল এই ‘টুইটারিয়ান’দের এক মাত্র উদ্দেশ্য। অনুষা নামে এক কিশোরী আবার এক ধাপ এগিয়ে টুইট করেছে নিজের রক্তের গ্রুপও, “আমি বি-পজিটিভ। প্রয়োজন পড়লে ফোন করো এই নম্বরে...।”
আরও আছে। ৬টা ৪৫-এ প্রথম বিস্ফোরণ হওয়ার মাত্র সওয়া দু’ঘণ্টার মধ্যেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে একটি ‘স্প্রেডশিট’ মুম্বইয়ের কোন অংশে কে কী ভাবে সাহায্য করতে পারেন তার তালিকা! আশ্রয় হোক বা বিরল গ্রুপের রক্ত হাজির সমস্ত। আরও দু’ঘণ্টা বাদে দেখা গেল তালিকায় ‘সাহায্যকারী’র সংখ্যা প্রায় দু’শো ছাড়িয়েছে! এবং কালকের দিনের জন্য সকলের পাশে দাঁড়ানোটাই ছিল এঁদের এক মাত্র উদ্দেশ্য। সে জন্যই যত বার সরকারের সমালোচনা করে কোনও টুইট ভেসে উঠেছে, অপর প্রান্ত থেকে জুটেছে পাল্টা ভর্ৎসনা, “আজকের দিনটা অন্তত এ সব বিশ্লেষণ থাক। এগুলো করার জন্য আরও অনেক সময় পাওয়া যাবে।”
কোনও সংগঠন ছিল না। ছিল না কোনও পথপ্রদর্শকও। তবু ঘটে গেল একটা ‘নিঃশব্দ কর্মযজ্ঞ’। স্রেফ আঙুলের জোরে! আতঙ্কিত, উদ্বিগ্ন মুখগুলো ভরসা পেল, পাশেই আছে সারা শহর। যে ভরসা নিয়েই দ্বিতীয় বিস্ফোরণের কেন্দ্র অপেরা হাউস থেকে টুইট করেছিল মধ্যবয়সী অঞ্জা কোভাকস, “অন্ধেরির দিকে যাচ্ছো এমন কেউ আমাকে অপেরা হাউস থেকে উদ্ধার করতে পার?”
বিস্ফোরণের শহরে এ ভাবেই সারা সন্ধ্যা ভরসা জোগাল ‘সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট’। |